জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ

  ০৮ এপ্রিল, ২০২৪

কালবৈশাখি কেড়ে নিল তাদের ঈদের আনন্দ

সুনামগঞ্জে লণ্ডভণ্ড ৬ শতাধিক কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি

আর দুদিন পরই ঈদ। সবাই ঈদের প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই অপেক্ষমাণ। সারা দেশের মতো সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ছয় শতাধিক পরিবারেও চলছিল ঈদের প্রস্তুতি। কিন্তু এক কালবৈশাখি ঝড়েই ছিন্নভিন্ন করে দিল সেই আনন্দ আয়োজন। ছয় শতাধিক পরিবারের অন্তত তিন হাজার মানুষ এখন ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছে। আনন্দ তো দূরের কথা, এখন একটু খাবার জোগাড় করাই তাদের জন্য দুঃসহ হয়ে উঠেছে। আর বসতভিটা মেরামত করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় কাটাচ্ছেন তারা। তবে সেনাবহিনী, প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

গত শনিবার রাতে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড়। এ সময় উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের ওপর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ৬ শতাধিক কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার সরদারপুর গ্রামের মো. নাজিম উদ্দিন। পেশায় একজন ক্ষুদ্র দোকানি। ৬ ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করতেন সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কের পাশে শানিগঞ্জ উপজেলার সরদারপুর গ্রামে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে তার একমাত্র বসতঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এখন তিনি খোলা আকাশের নিচেই বসবাস করছেন। সামনে ঈদ। সন্তানদের নিয়ে কী ভাবছেন? এমন প্রশ্নে ডুকরে কেঁদে ওঠেন নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘একমাত্র ঘর আর ছোট্ট দোকানটি ছিল সম্বল। ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এখন বাচ্চাদের মুখে আহার দেওয়াই আমার জন্য দুঃসাধ্য। ঈদের কাপড় দিব কী করে।’

শুধু নাজিম উদ্দিনই না এমন শত শত পরিবার অতি কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঈদের আনন্দ চাপা পড়ে গেছে শান্তিগঞ্জের ১৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের। এখন তাদের একটাই চিন্তা, কীভাবে বসতভিটা মেরামত করবেন? কীভাবে খাবার জোগাড় করবেন? ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন এসব গ্রামের মানুষ।

পাগলা বাজারের পাশের গ্রাম নবীনগর এই গ্রামেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নবীনগর গ্রামের আকলিমা খাতুন বললেন, এই ঈদের আনন্দ আমরার লাগি না। আমরা ওখন একটু ঠাঁই খুঁজতাছি। বাচ্চা-কাচ্চা লইয়া কীভাবে ঘুমাব? প্রশ্ন করেন তিনি।

পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের রায়পুর, কাজিবাড়ী, পুরানবাগি, চন্দ্রপুর, নোয়বাড়ী, কোনাবাড়ী, গ্রামে এখন শুধুই হাহাকার। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। যাদের আশ্রয় নেওয়ার মতো আত্মীয়-স্বজন নেই, তারা কোনোভাবে ভাঙা টিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর করেছেন থাকার জন্য। এসব ঘর ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঠুনকো। সামান্য বাতাসে এটিও পড়ে যাবে।

শান্তিগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ঈদ উপলক্ষে রবিবার সকালে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অফিস প্রাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের উদ্যোগে প্রায় ২০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন সিলেট সেনানিবাসের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফারুক আহমেদ। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের জন্যে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে সুনামগঞ্জে সামাজিক সংগঠনগুলো।

সুনামগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিশ্বজন সংগঠনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধশতাধিক পরিবারের শিশুদের মধ্যে ঈদের নতুন কাপড় বিতরণ করা হয়।

বিশ্বজন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কর্ণ বাবু দাস জানান, বিশ্বজন রক্তদান ও মানবিক কার্যক্রমসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিশুদের মধ্যে নতুন কাপড় উপহার দেওয়া হয়েছে। যাতে সবাই মিলে ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে। আমরা প্রতি বছর ঈদে শহরে নতুন কাপড় দিয়ে থাকি। এবার এসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দেওয়া হয়েছে। আমাদের মানবিক কার্যক্রম চলমান থাকবে। জেলা প্রশাসক মো. রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন দেওয়া হবে। ঈদ উপলক্ষে শুকনো খাবার, জিআর চাল বিতরণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close