নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ এপ্রিল, ২০২৪

কর্মক্ষেত্রে বেশি শ্রম দেন বিক্রয়কর্মীরা

দেশের সিংহভাগ শ্রমিক নির্মাণ, গার্মেন্ট, পরিবহন, চাতাল, ওয়েল্ডিং, শিপব্রেকিংসহ অসংগঠিত সেক্টরে কাজ করেন। কঠোর পরিশ্রম করেও মজুরি পান কম। প্রাপ্য মজুরি দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। সারা বছরের হিসাবে কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সময় দিতে হয় বিক্রয়কর্মীদের। সামনে ঈদ। এ সময় সবচেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা দিচ্ছেন এ সেক্টরের বিক্রয়কর্মীরা। তবে সবাই ন্যায্য পারিশ্রমিক পান না। কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সময় দিতে হয় দক্ষ কৃষি, বনায়ন ও মাছচাষিদের।

বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, পেশার দিক থেকে প্রতি সপ্তাহে বিক্রয়কর্মীদের কর্মঘণ্টা সর্বোচ্চ। কর্মক্ষেত্রে এ পেশার কর্মীদের সময় দিতে হয় সপ্তাহে গড়ে ৫৪ ঘণ্টা। বিবিএস বলছে, যেকোনো কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি আগের সপ্তাহের রেফারেন্স পিরিয়ড অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করলে তাকে কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত সময় কাজ হিসেবে ধরা হয়। সে হিসেবে বিক্রয়কর্মীরা শ্রম আইনের চেয়েও বেশি সময় দেন।

কর্মক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন বিক্রয় ও সেবাকর্মী, কারখানা ও মেশিন চালনাকারী ও সংযোজনকারীরা। প্রতি সপ্তাহে এ কর্মীরা গড়ে ৫৪ ঘণ্টা সময় দেন। এক্ষেত্রে পুরুষকর্মীদের গড় সময় দিতে হয় ৫২ ঘণ্টা, নারীকর্মীরা সময় দেন ৪২ ঘণ্টা বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এ তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপের তথ্য বলছে, কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সময় দিতে হয় দক্ষ কৃষি, বনায়ন ও মাছচাষিদের। প্রতি সপ্তাহে এ পেশাদারদের গড়ে সময় দিতে হয় মাত্র ৩৭ ঘণ্টা। এক্ষেত্রে গ্রামের কৃষক ও মাছচাষিদের গড়ে সময় দিতে হয় ৩৮ ঘণ্টা আর শহরে ৪৪ ঘণ্টা।

খাতগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, খাতওয়ারি বিক্রয়কর্মীদের পেছনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে ওষুধ কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানির আয়ের বড় অংশই যায় এ কর্মীদের পেছনে। এছাড়া নিত্যপণ্য সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করে থাকে।

একটি ছোট রেফারেন্স পিরিয়ড, যেমন এক সপ্তাহ, এক মাস, ত্রৈমাসিক, ঋতু বা বছরের দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ সময়কাল। এটি ব্যবহৃত সংক্ষিপ্ত রেফারেন্স পরিমাপ সময়কালকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি কাজের ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে কাজ করা ঘণ্টার সাধারণ মান- এসবকে সাধারণত কর্মঘণ্টা ধরা হয়।

কর্মঘণ্টা সাধারণত সবধরনের কাজের জন্য প্রযোজ্য (এসএনএ উৎপাদন সীমানার মধ্যে এবং তার বাইরে)। সুতরাং, কাজের স্বাভাবিক সময়ের ধারণাটি প্রকৃত কর্মঘণ্টা থেকে আলাদা। এ কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রধান অর্থনৈতিক সেক্টরে এক সপ্তাহে গড়ে কত ঘণ্টা কাজ করে, তা লিঙ্গভেদে এবং অঞ্চলভিত্তিক তথ্য দিয়েছে বিবিএস। ফলাফলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি শিল্প খাতে গড় কর্মঘণ্টা ৫২ ঘণ্টা। কৃষি খাতে এটি ৩৯ ঘণ্টা এবং সেবা খাতে ৫০ ঘণ্টা। কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সপ্তাহে কাজের জাতীয় গড় ৪৭ ঘণ্টা। অঞ্চলভিত্তিক বিভাজনে পাওয়া যায়, পল্লীতে গড় কর্মঘণ্টা ৪৫ ঘণ্টা যা শহরে ৫০ ঘণ্টা। পুরুষদের জাতীয় গড় কর্মঘণ্টা (৫০ ঘণ্টা) নারীদের গড় কর্মঘণ্টা (৩৪ ঘণ্টা) থেকে বেশি।

দেশের সিংহভাগ শ্রমিক নির্মাণ, গার্মেন্ট, পরিবহন, চাতাল, ওয়েল্ডিং, শিপব্রেকিংসহ অসংগঠিত সেক্টরে কাজ করেন। এসব কারখানা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের যে মজুরি দেওয়া হয়, তা দিয়ে কোনোভাবেই পরিবার-পরিজনসহ জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের শ্রমিকদের শ্রম দিতে হয় বেশি। কিন্তু মজুরি পায় কম। বিশেষ করে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা। তাদের আরো বেশি কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। এ খাতের শ্রমিকদের ওভারটাইমসহ দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। যা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশি। অথচ শ্রমিকরা যে হারে শ্রম দেন, সে হারে মজুরি পান না। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। অর্থাৎ দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি কম কিন্তু খাটুনি বেশি।

সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব সেক্টরে মজুরিবৈষম্য বিরাজমান। একই সরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন বা তাদের মজুরি যেভাবে নির্ধারিত হয়, ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারিত হয় অন্যভাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close