বরগুনা প্রতিনিধি

  ২০ এপ্রিল, ২০১৯

বরগুনার ৮০০ প্রাইমারি স্কুলের ৩৪৮টি ঝুঁকিপূর্ণ

বরগুনার ছয়টি উপজেলায় মোট ৮০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। আর ৩৪টি বিদ্যালয় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ।

বরগুনা জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয় জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৯২১টি, দ্বিতীয় ধাপে ১৭১৯টি বিদ্যালয় এবং তৃতীয় ধাপে ৫৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই সময় বরগুনাতে যে বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করা হয়, সে বিদ্যালয়গুলোর ভবনের অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না। তাই সেই বিদ্যালয়গুলোই এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।’

ভবনগুলো কেন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম কবীর বলেন, ‘বরগুনা জেলা উপকূলবর্তী হওয়ায় লবণাক্ততা ও আবহাওয়ার কারণে ভবনগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। তাছাড়া এ ভবনগুলো নির্মাণের পর শিক্ষা বিভাগ থেকে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য যে অর্থ দেওয়া হয়, তা দিয়ে ঠিকভাবে কাজ করতে না পারার কারণেও দ্রুতই ভবনগুলো নষ্ট হয়ে যায়।’

পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ভবনগুলোর বিষয়ে এলজিইডি কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম কবীর বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা আমাদের কাছে পাঠালে আমরা সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব, এখন কী অবস্থায় আছে। পাঠদানের উপযোগী মনে হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলব। আর ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে।’ ক্রোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ভবনের বাহ্যিক দিক বিবেচনা করে বিদ্যালয়গুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে বরগুনার ছয়টি উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা প্রস্তুত করেছি। তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে কী পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে নাকি বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম কবীর বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঠিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে চিহ্নিত করা হবে। যে বিদ্যালয়গুলো পাঠদানের উপযোগী, সেখানে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে; বাকিগুলোতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘শিশুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। আমরা এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীদের বিকল্প পাঠদানের ব্যবস্থা করার জন্য প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি।’

সম্প্রতি বরগুনার তালতলী উপজেলার পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাদের বিম ধসে এক শিক্ষার্থী নিহত ও পাঁচ শিক্ষার্থী আহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া জগৎচাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বরগুনা সদর উপজেলার পৌর শহরের ১৬ নম্বর মধ্য বরগুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পলেস্তরা খসে পড়ে। তবে এ দুটি বিদ্যালয়ে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বরগুনা সদরের ২৩০টি ভবনের মধ্যে ১০৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ৭টি। আমতলীতে ১৫৩টি ভবনের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৬৮টি। তালতলীতে ৭৯টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৭টি ও পরিত্যক্ত পাঁচটি। পাথরঘাটায় ১৪৯টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৭৪টি ও পরিত্যক্ত ১০টি। বামনা উপজেলায় ৬২টি ভবনের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৯ ও পরিত্যক্ত চার। বেতাগীতে ১২৭টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৬টি ও পরিত্যক্ত আটটি।

সরেজমিনে বরগুনার তালতলী উপজেলার মেনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরগুনা সদর উপজেলার পূর্ব-ঢলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য বরগুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ক্রোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোর পলেস্তরা খসে পড়ছে, ফাটল দেখা দিয়েছে বিভিন্ন বিম ও ছাদে, স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে দেয়ালগুলো, দরজা-জানালা ভাঙা। কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের অবস্থা এতই নাজুক যে ভেঙে পড়ার ভয়ে পাঠদান বন্ধ করে বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

বরগুনা সদর উপজেলার মধ্য বরগুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা নীপা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। সম্প্রতি ভবনটির ছাদের পলেস্তরা খসে পড়েছে। এখন অন্য শ্রেণিগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে আমরা পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি।

আমতলী উপজেলার পূর্বগুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ২০০৭ সালে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর বিদ্যালয় ভবনটিকে কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। কিন্তু, বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় এক রকম বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠ কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

ক্রোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে এক বছর হলো। কিন্তু, এখনো আমরা নতুন ভবন পাইনি। ঝড়ের সময় আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভবনের বাইরে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close