ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

  ২০ নভেম্বর, ২০১৮

পিইসি পরীক্ষা

সব বাধা জয় করতে চায় প্রতিবন্ধী শিশু সিয়াম

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পাড়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের অন্য শিক্ষার্থীরা হেঁটে পরীক্ষা কেন্দ্রে এলেও পিইসি পরীক্ষার্থী সিয়ামকে আসতে হচ্ছে মায়ের কোলে চড়ে। কোনো বাধাই আটকাতে পারেনি শারীরিক প্রতিবন্ধী সিয়ামকে। কারণ সে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে চায়, বড় হতে চায়। বড় মানুষ হতে হলে লেখাপড়া করতে হয়Ñএ কথা তার মা বলেছে।

কারখানা শ্রমিক ফারুক আহাম্মেদের একমাত্র ছেলে অদম্য সিয়ামের বয়স ১২ বছর। একটি ভয়ানক রোগে আক্তান্ত হয়ে সে কয়েক বছর ধরে সুস্থ। বিকল পা দুটি সোজা করতে না পারলেও সে প্রতিদিন স্কুলে যায়। সহপাঠীদের আন্তরিকতা দেখে আরো উৎসাহিত বলে সে জানায়। পায়ের মতোই হাতে খুব একটা শক্তি নেই শিশুটির। তবে অন্যদের চেয়ে আধা ঘণ্টা সময় বেশি পাওয়ায় তার পরীক্ষায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কেবল ডান হাতে যে শক্তি আছে আর

মনোবল দিয়ে নিজ হাতে লেখে এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে। হাঁটতে না পারায় প্রতিদিন পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয় তার মায়ের কোলে চড়ে ভ্যান ও রিকশায় করে।

ঘটনাটি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও এলাকার। উপজেলার বড়চালা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার সিয়াম পিইসি (প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা) দিচ্ছে। গরিব ঘরে জন্ম নেওয়া ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার না মেনে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে মরিয়া খুদে এই শিক্ষার্থী সিয়াম।

গতকাল দ্বিতীয় দিনের বাংলা পরীক্ষার দিন সকালে মায়ের কোলে করে পাড়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসতে দেখা যায় সিয়ামকে। সিয়াম তার ক্লাসের মেধাবী ছাত্র। শেরপুর ঝিনাইগাতী উপজেলায় তার বাড়ি থাকলেও পেশাগত কারণে তার বাবা বাড়ি ছেড়ে এসে বসত গড়েন উপজেলার পাড়াগাঁও বড়চালা গ্রামে।

খুদে এই শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পড়াশোনা করে ডাক্তার হবে। আর এই স্বপ্নপূরণ করতে শত বাধা পেরিয়ে হলেও সে পড়া লেখা করবে। গতকাল পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পাড়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি কক্ষে বন্ধু আর সহপাঠীদের সঙ্গেই সে পরীক্ষা দিচ্ছে, যদিও একটু পরপর তাকে ওয়াশরুমে যেতে হচ্ছে মায়ের কোলে করে। বিছানা পেতে একাকী পরীক্ষা দিতে তার ভালো লাগবে না, তাই কষ্ট করে সবার সঙ্গেই পরীক্ষা দিতে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে বলেও জানায়।

সিয়ামের মা আসমা পারভীন বলেন, তার ছেলে ছোটবেলায় হাঁটাহাঁটি ও দৌড়াদৌড়ি করতে পারলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলাচলে অচল ও অসুস্থ হতে থাকে। তাকে স্থানীয় ও ঢাকার বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। চিকিৎসক বলেছেন হয়তো ছেলেটি সুস্থ হতেও পারে, নাও হতে পারে। কারণ তার বাবা-মায়ের রক্তের একই গ্রুপ থাকায় তার এই সমস্যা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পাবে। কেন্দ্রসচিব নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর এই কেন্দ্রে একমাত্র সিয়ামই স্পেশাল চাইল্ড হিসেবে পরীক্ষা দিচ্ছে।

হল সুপার আলেয়া আক্তার বলেন, অসুস্থ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণে যাতে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে তার পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার জুয়েল আশরাফ জানান, এই শিক্ষার্থী সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে শারীরিক সমস্যা থাকায় নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টার পর সে আধা ঘণ্টা পাবে। কারণ সে শারীরিক প্রতিবন্ধী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close