আবদুল্লাহ আল মামুন, মাদারীপুর

  ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

আ.লীগে একাধিক হেভিওয়েট বিএনপির ৪ প্রার্থী

প্রায় তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১৭ জন। এর বিপরীতে বিএনপির মনোনয়নপত্র নিয়েছেন চারজন। এ ছাড়া অন্যান্য দলের আর কোনো প্রার্থী নেই বললেই চলে। জেলার কালকিনি, ডাসার ও সদর উপজেলার একাংশের ২০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার ২ লাখ ৮৩ হাজার ২২৩ জন।

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নযুদ্ধ চলছে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এমপি ও শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে। এ আসনে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবাহান গোলাপের জন্মস্থান। তিনিও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী মরহুম আ. লতিফ উকিলের ছেলে জেলার যুগ্ম সম্পাদক ও মাদারীপুর জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট এমরান লতিফ নৌকার মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তবে কোনো কারণে দলীয় মনোনয়ন না পেলে অ্যাডভোকেট এমরান লতিফ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না।

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আনোয়ার হোসেন, শাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদার, মীর গোলাম ফারুক, আবুল কালাম আজাদ, মশিউর রহমান সবুজ, এস এম হানিফ সরদার, ফজলুল হক বেপারি, অ্যাডভোকেট, এমরান লতিফ, খন্দকার খায়রুল হাসান নিটুল, আসাদুজ্জামান জামাল মোল্লা, মনিরুজ্জামান হাওলাদার, ফাহিমা আক্তার, সরদার আবদুল হান্নান, মীর নাসিরউদ্দিনসহ ১৭ জন।

এদিকে বিএনপির মধ্যে রয়েছে আনিসুল হক খোকন তালুকদার, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, মাহামুদ সরদার, পলাশ হাওলাদারসহ চারজন।

আওয়ামী লীগ সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন আওয়ামী লীগের টিকিটে চারবার এমপি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে একবার প্রতিমন্ত্রী ও দুবার মন্ত্রীও হন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কিন্তু পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তিনি মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারান। যদিও আন্তর্জাতিক আদালতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। এরপর থেকে এলাকায় নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। স্থানীয় তার নির্মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা তার অবস্থানকে পোক্ত করে রেখেছে।

এদিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে সৈয়দ আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। নাছিম এমপি হওয়ার পর থেকে তার সংসদীয় এলাকায় বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়নে বেশ নজর দেন। দল গোছানোর কাজে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি ঢেলে সাজান। তবে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সম্পাদক মীর গোলাম ফারুককে বাদ দিয়ে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌফিকুজ্জামান শাহীনকে দলের সম্পাদক করায় পদবঞ্চিতরা একট্টা হয়ে বাহাউদ্দিন নাছিমের বিপক্ষে চলে যান। কিন্তু রাজনৈতিক সমীকরণে কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ও আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে এগিয়ে রাখছেন সবাই।

কালিকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত মাদারীপুরের কালকিনির জনপদে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে হাজারো নেতা। সব নেতাই যার যার অবস্থান থেকে কালকিনির মাটি ও মানুষের উন্নয়ন ও উপকার করতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাছিমকে নিয়ে কালকিনির মানুষ একটু বেশিই ভাবছেন। তিনি শেখ হাসিনার একজন পরীক্ষিত কর্মী। তবে সৈয়দ আবুল হোসেন বরাবরই ভোটের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগের এ আসনটি যাতে হাতছাড়া না হয়, সেদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিন্তা করে দলীয় হাইকমান্ড অপ্রতিহত প্রার্থী দেবেন বলে এমনটাই আশা করছে কালকিনিবাসী।

বিএনপি

জেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান, অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মুরাদ। এ কোন্দলের প্রভাব পড়েছে মাদারীপুর-৩ আসনে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় বিএনপির দুই নেতা সহ-সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুকের বাড়ি কালকিনিতে হওয়ায় কোন্দল আরো জোরালো হচ্ছে। কোন্দলে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে লেজে গোবরে অবস্থা।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আসাদুজ্জামান পলাশ। এখানে যে যার মতো করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিএনপির ভোটের পালে নতুন হাওয়ার সঞ্চার দেখছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

কালকিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান হওলাদার বলেন, সাংগঠনিকভাবে বিএনপি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে অনেকটা শক্তিশালী এ আসনটি। মূলত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের একক প্রচেষ্টায় বিএনপি বর্তমানে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। উপজেলা বিএনপি ও সব সহযোগী সংগঠনের নেতারাও ইতোমধ্যে তার সঙ্গে সভা-সমাবেশ করছেন।

দলটির নেতাকর্মীরা জানান, সংসদীয় আসনের প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পাদক থাকা অবস্থায়েই এসব এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন খোকন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই প্রতি মাসেই সংসদীয় আসনের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত পথসভা ও সমাবেশ করেন তিনি। বিএনপি ঘোষিত বিভিন্ন দিবস, রাষ্ট্রীয় দিবস ও নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

সিডিখান ইউনিয়নের বিএনপি নেতা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্বাচন ছাড়া অন্য সময় বিএনপির প্রার্থীকে কখনোই দেখতাম না। কিন্তু আনিসুর রহমান খোকন প্রায় প্রতি মাসেই আমাদের খোঁজখবর নেন। এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। আশা করি বিএনপির হাইকমান্ড কোনো নিষ্ক্রিয়, আঁতাতকারী নেতাকে মনোনয়ন দেবে না। একই কথা বললেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সুরেষ ম-ল।

উপজেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, অতীতে প্রার্থীরা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যেতেন। ধর্ণাঢ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিএনপির প্রার্থীকে কিনে নিতেন। ফলে দিন দিন এ অঞ্চলে দুর্বল হয়েছে বিএনপি। সাংগঠনকিভাবে ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু সাংগঠনকিভাবে বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী। ফলে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের অবস্থান অনেক দৃঢ়।

এদিকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে হাবিবুর রহমান আজাদ নির্বাচন করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন না বলে জানা গেছে। আর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক এলাকার প্রবীণদের মধ্যে জনপ্রিয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আসাদুজ্জামান পলাশ চার থেকে পাঁচটি ইউনিয়নে জনপ্রিয় হওয়ায় সমর্থকরা তার জন্য মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

নির্বাচনকে ঘিরে জেলার কেন্দ্রবিন্দু মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় টিকিট কে পাচ্ছেন, তা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close