মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ২৮ মে, ২০১৮

কক্সবাজারে ইয়াবা ডন শাহজাহান আনসারীর দম্ভোক্তি

আমিই প্রকাশ্যে, সবাই পালিয়েছে

কক্সবাজারের ইয়াবা ডন শাহজাহান আনসারী। এক যুগ আগে তার বাবা নুর মোহাম্মদ আনসারী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঠাঁয় নিয়েছিলেন কক্সবাজার শহরের প্রবেশদ্বার লারপাড়া এলাকায়। পশ্চিম লারপাড়া এলাকায় স্থানীয় লাল মোহাম্মদের বাড়ির পাশে এক ব্যক্তির জমিতে কেয়ারটেকার হিসেবে একটি বাসায় থাকতেন তারা। পরে বাস টার্মিনালের পূর্বপাশে কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় ‘লাল দোকান’ নামের একটি পানের দোকান দেন শাহজাহানের বাবা নুর মোহাম্মদ। ভাই কাশেম ও রশিদের সঙ্গে শাহজাহান তখন টার্মিনালে মাইক্রোবাসের হেলপারের কাজ করতেন। হেলপারের কাজ করতেন তার ছোট ভাই আবু সুফিয়ানও। পরিবহন জগতে হেলপারের কাজের ফাঁকে তারা জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা পরিবহনের কাজে। আর অন্যের ইয়াবা পরিবহন করতে গিয়েই শাহজাহান আনসারী এক দশকের ব্যবধানে

আজ পরিণত হয়েছেন ইয়াবার শীর্ষ ডিলার হিসেবে। এখন সে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। পরিবহন, সিমেন্টের এজেন্ট, টাইলসের দোকান, হোটেল ব্যবসা থেকে শুরু করে জমি, ঢাকা-চট্টগ্রামে ফ্ল্যাট, প্লট, কোটি টাকা দামের বাড়ি, একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হয়েছেন। বিলাসবহুল দামি গাড়িতে করে ঘুরেন। তার স্ত্রীরও রয়েছে দামি গাড়ি। সৌদি আরব এবং দুবাইতে ব্যবসা আছে বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার পর এখন শাহজাহান সমাজে প্রতিষ্ঠা চান। এজন্য ২/৩ বছর আগে টার্গেট করেন ক্রীড়াঙ্গনে স্থান করে নিতে কোটি টাকা ব্যয়ে কয়েকজন ক্রীড়াবিদকে হাত করে খেলাধুলায় স্পন্সর করতে থাকেন। এক পর্যায়ে টাকার জোরে কক্সবাজার সদর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন। এরপর তার চোখ পড়ে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ওপর। কয়েক মাসের মাথায় বনে যান জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতিও। বর্তমানে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে এরই মধ্যে লাখ লাখ টাকায় ৫/৬টি ক্লাব কিনে নিয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে পুরো হোটেল-মোটেল জোনকে ইয়াবার স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজারের শীর্ষ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্থানও করে নিয়েছেন এই শাহজাহান আনসারী। ইয়াবা ব্যবসা করে কাড়ি কাড়ি টাকা যেমন আয় করেছেন ঠিক তেমনি ব্যয়ও করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই নয়, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীকেও টাকার বিনিময়ে কব্জায় রাখেন তিনি। যার কারণে কয়েক দফা আটক হওয়ার পরও কারাগারে যাওয়ার আগেই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। এমনকি দেশব্যাপী এই ধরপাকড়ের মধ্যেও প্রকাশ্যে বীরদর্পে ঘুরছেন এই শীর্ষ ইয়াবা ডন।

এ বিষয়ে শাহজাহান আনসারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সবাই পালিয়ে গেছে। আমি আছি প্রকাশ্যে। আমি নির্দোষ। কোনো তালিকাতেই আমার নাম নেই। কিছু মিডিয়া এসব লিখছে। এছাড়া ফেসবুকেও অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। এসবের কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় যার যেমন ইচ্ছা লিখছে। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত নই।’ তিনি আরো বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনের কিছু প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’ তিনি বলেন, ‘আমি কষ্ট করে বড় হয়েছি। যেসব হোটেল আছে তা আমি ভাড়ায় নিয়ে চালাচ্ছি। আমি এসবের মালিক নই।’

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলা শহরের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হচ্ছেন শাহজাহান আনসারী। তিনি পরিবহন সেক্টরের আড়ালে টেকনাফ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনকে ইয়াবার স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন। বর্তমানে কলাতলিতে কয়েক কোটি টাকা জামানতে তিনটি হোটেল ভাড়া নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন শাহজাহান আনসারী, কাশেম আনসারী ও আবু সুফিয়ান নামের তিন ভাই। তিন ভাই লারপাড়া ও ইসলামাবাদে পৃথকভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন প্রাসাদতুল্য অট্টালিকা। অথচ নিকট অতীতেও তাদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা ছিল না।

সূত্র আরো জানায়, সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের টার্গেট করে ব্যবসা জমিয়ে তুলেছে ইয়াবা কারবারিরা। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের জন্য হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেছে। বিভিন্ন হোটেলে আগত পর্যটকদের কক্ষে ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে তারা। ইয়াবা আসক্ত পর্যটকদের খুঁজে আনার জন্য চারটি মোটরসাইকেলে করে আটজন যুবককে নিয়োগ দিয়েছেন। ওই আট যুবকের নেতৃত্বে রয়েছে ১০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১০টি ব্যাটারিচালিত টমটম ও ১০টি রিকশা। ওই বাহনগুলো বাস থেকে নামা পর্যটকদের টার্গেট করে। পর্যটকদের ফুঁসলিয়ে ইয়াবার অফার দিয়ে তাদের শাহজাহান আনসারীর হোটেলে নিয়ে যায়।

সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, শাহজাহান আনসারীর পরিচালিত কলাতলির লেগুনা বিচ হোটেল হলো ইয়াবার গোডাউন। এই হোটেলে পর্যটকের ছদ্মবেশে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেয়। পরে ওই ব্যবসায়ীরা হোটেল থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানিয়েছেন, শাহজাহান আনসারীসহ কক্সবাজারের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে তারা সবাই গা-ঢাকা দিয়েছে। এবার সরকার মাদককে আর ছাড় দেবে না। মাদক ব্যবসায়ীদের যত শক্তিশালী সিন্ডিকেট হোক তা ভেঙে দেয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist