হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

  ২২ এপ্রিল, ২০১৮

হালদার দুই পারে রেণু ফোটানোর মহোৎসব

গত বৃহস্পতিবার মাঝরাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহের পর গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে রেণু ফোটানোর মহোৎসব। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এই হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিমের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এতে আহরণকারীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা গেছে। এজন্য সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হ্যাচারির অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন তারা। নদীতে মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমে সরকারি হ্যাচারিগুলো সংস্কার করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু যথাসময়ে সেগুলো সংস্কার করা হয়নি বলে মদুনাঘাট, শাহ্ মাদারী ও মাছুয়াঘোনা হ্যাচারিতে ডিম থেকে রেণু ফোটানো লোকেরা গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, যথাসময়ে সরকারি হ্যাচারিগুলো সংস্কার করা হলে এই ক্ষতি হতো না।

গত বৃহস্পতিবার রাতে জোয়ারের সময় নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। রাত ২টা থেকে পরদিন শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত মা মাছের ডিম ছাড়া অব্যাহত থাকে। এ সময় ডিম আহরণকারীরা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। এমনকি শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডিম আহরণ অব্যাহত থাকে। এবার সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ বেশি হওয়ায় সংগ্রহকারীদের মুখে ছিল হাসি।

আহৃত ডিম থেকে রেণু ফোটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আহরণকারীরা। গতকাল শনিবার দেখা গেছে, হালদা নদীর হাটহাজারী অংশে স্থাপিত মদুনাঘাট হ্যাচারি, শাহ্ মাদারী হ্যাচারি ও মাছুয়াঘোনা হ্যাচারিতে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রশিক্ষিত ডিম আহরণকারীদের মধ্যে আইডিএফ কর্তৃক মাটির কুয়ায় হ্যাচিং পদ্ধতির আধুনিকায়ন প্রযুক্তির মাধ্যমে রেণু ফোটানোর কাজ চলছে। তা ছাড়া নদীর দুই পারে স্থাপিত সনাতনী পদ্ধতির ২০০টি মাটির কুয়ায় রেণু ফোটানোর কাজ করছে ডিম আহরণকারীরা। এবার পরিবেশ অনুকূল থাকায় মা মাছ নদীতে সর্বাধিক ডিম ছেড়েছে। গত কয়েক বছর থেকে এ বছর বেশি হারে ডিম পাওয়ায় ডিম আহরণকারীরাও মহাখুশি। অধিক ডিম পাওয়ার কারণে মাটির কুয়ায় হ্যাচিং পদ্ধতির আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াও সনাতনী পদ্ধতির কুয়াতে ডিম থেকে রেণু ফোটাতে হচ্ছে। ডিম আহরণকারীরা কয়েক বছর যাবৎ আশানুরূপ ডিম না পাওয়ায় এবার এত বেশি পরিমাণ ডিম পাওয়ার কথা চিন্তা করেনি। তাই তাদের প্রস্তুতিও ছিল অন্যান্য বারের মতো। বেশি পরিমাণ ডিম পাওয়ায় স্বল্প পরিসরে সরকারি হ্যাচারি ও হ্যাচিং পদ্ধতির আধুনিক প্রযুক্তির কুয়াতে রেণু ফোটাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাত-দিন খেটে চলেছেন তারা। এবার পরিবেশ মোটামুটি শীতল থাকায় রেণু উৎপাদনের পরিবেশ ভালো বলে অনেকেই জানিয়েছেন। ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) কর্মকর্তারা ডিম থেকে রেণু ফোটানোর বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়ার মৌসুমে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হ্যাচারিগুলো সংস্কার করা জরুরি। হ্যাচারিগুলো তদারকির জন্য একটি কমিটি রয়েছে। তা ছাড়া সরকারিভাবে একজন হ্যাচারি সহকারীও রয়েছেন। তাদের তদারকির অভাব ছিল বলে অভিযোগ করেন মঞ্জুরুল কিবরিয়া। তিনি আরো বলেন, হ্যাচারি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার কথা ওই কমিটির। সেটা অবহিত করার পরও যদি তারা হ্যাচারি সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে এটা হবে দুঃখজনক। মদুনাঘাট হ্যাচারির একজন আহরণকারীর ডিম নষ্ট হয়ে যাওয়াকে শুধু তার ব্যক্তিগত ক্ষতি বলে মানতে চাইছেন না তিনি। তিনি বলেন, এটা দেশের ক্ষতি।

ছবির ক্যাপশন : হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু ফোটাতে মাটির কুয়ায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ডিম আহরণকারীরা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist