সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ০১ জুন, ২০১৯

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

মেঘনা-গোমতীর দুই পাড়ে যানজটের ভোগান্তি কমেছে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতি নদীর ওপর নির্মিত চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু দুটি খুলে দেওয়ায় নদীর দুই পাড়ে নেই যাত্রী ভোগান্তি, কমে গেছে যানজট। সেতু দুটি চালু হওয়ায় ভোগান্তি যেমন কমেছে চালকদের তেমনি স্বস্তিতে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারছেন এ সড়কে চলাচলরত যাত্রীরা। সেতু দুটি উদ্বোধনের আগ পর্র্যন্ত পুরোনো মেঘনা-গোমতী সেতুতে যানবাহনগুলো চলাচল করতো এক লেন করে মাত্র দুই লেনে। পুরোনো সেতু দুটি বেশি উঁচু ও এক লেন করে হওয়ার কারণে যানবাহনগুলো ধীরগতিতে সেতুতে উঠতো বলে প্রায় সময়ই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশেষ করে সেতু দুটির উভয় প্রান্তে লেগে থাকতো চরম ভোগান্তির যানজট। নির্ধারিত সময়ের আগেই সেতু দুটি চালু করায় যানজটের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেয়েছে এই সড়কে চলাচলরত যাত্রীরা। ঈদের আগেই দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু খুলে দেওয়ার কারণে ভোগান্তির অবসান হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চালক ও যাত্রীরা।

দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু দুটি চালুর দিন থেকেই যানজটে আটকে থাকা শত শত যানবাহনের দীর্ঘ সারি আর দেখা যাচ্ছে না। মাত্র কয়েকদিন আগেও যেখানে যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে চালকসহ যাত্রীদেরকে। আর এই যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশসহ স্থানীয়দের পড়তে হতো বিরম্বনায়। গতকাল শুক্রবার দীর্ঘসময় মহাসড়কের মেঘনা সেতু এলাকায় অবস্থান করেও দেখা যায়নি যানজটের কোনো চিত্র। বাধাহীনভাবে চলছে যানবাহনগুলো। হাইওয়ে পুলিশের গাড়ি শুধু টহল দিতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে কাভার্ডভ্যান চালক তরিকুল ইসলাম, বাসচালক শহর আলী, ট্রাকচালক জবেদ আলীসহ দূরপাল্লার অনেক চালক সেতু খুলে দেওয়ায় বর্তমান সরকারের প্রশংসাসহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কুমিল্লাগামী যাত্রী মনোয়ারা বেগম, রিনা বেগম, আবদুল করিম, সমর আলীসহ অনেক যাত্রী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে উৎফুল্য মনে বলেন, যানজেেটর কারণে প্রায় মাসখানেক আগেও ঢাকা থেকে মেঘনা আসতে সময় লাগতো প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা এবং দাউদকান্দি হয়ে কুমিল্লায় যেতে লাগতো আমাদের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। আর এখন সেতু দুটি চালু হওয়ায় যানজট না থাকায় সেখানে মাত্র তিন ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি।

মেঘনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক শওকত আহমেদ মজুমদার জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুতে নিত্য যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো যানবাহন চালক ও যাত্রীদের। যানজট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে সেতু দুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৩০ মিটার। ১১টি পিলার ও দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জয়েন্টের ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পুরোনো মেঘনা সেতু মেরামতের জন্য ব্যয় হবে আরো ৪০০ কোটি টাকা। মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সেতুর ঢাকা প্রান্তে প্রায় এক কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম প্রান্তে এক কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং পশ্চিম পাশে সেতুর নিচ দিয়ে ৫০৭ মিটার দৈর্ঘ্য সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ এবং পুরোনো তিনটি সেতুর পুনর্বাসনসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাত মাস আগেই নতুন তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে এ-ই প্রথম কোনো বড় প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের আগে সম্পন্ন হয়েছে এবং ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য ও বর্তমান সরকারের জন্য একটি মাইফলক ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, এটি সম্ভব হয়েছে মূলত দুটি কারণে এর মধ্যে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিং এবং জাপানের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও তাদের কর্মদক্ষতা।

মেঘনা-গোমতী সেতুর মেট্রিয়াল অ্যান্ড কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম জানান, জাপানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সেতু নির্মাণ করা হয়। যে কারণে নতুন এবং পুরোনো দুটি সেতুই ১০০ বছরের বেশি স্থায়িত্ব পাবে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আলী রেজা জানান, মেঘনা সেতুর যানজটের কারণে চালক ও যাত্রীদের যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল তেমনি ভোগান্তি বেশি পোহাতে হয়েছে হাইওয়ে পুলিশকে। দিন-রাত, খাওয়া দাওয়ার কোনো সময় নেই মহাসড়ক জটমুক্ত রাখতে অনেক পেরেশান হতে হয়েছে। তবে গত ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী সেতু দুটি উদ্বোধন করার পর থেকে কাঁচপুর থেকে মেঘনা পর্যন্ত যানজট কি জিনিস তা আজ পর্যন্ত দেখিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close