আদালত প্রতিবেদক
হাইকোর্টের প্রশ্ন
হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দেয় কীভাবে?
পুলিশ হেফাজতে থাকা এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা দেওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন রেখে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘১৩ তারিখে যদি একজন মানুষ অ্যারেস্ট হয়ে কাস্টডিতে থাকে; তাহলে তাকে ১৪ তারিখ ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দেয় কীভাবে?’ গতকাল রোববার ফৌজদারি মামলায় ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা’ এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট এই প্রশ্ন রাখেন। বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ প্রশ্ন তোলেন।
এই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি প্রশ্ন রেখে আরো বলেন, ‘১৪ তারিখ যে ম্যাজিস্ট্রেট সাজা দিল সে ব্লাইন্ড ছিল নাকি?’ এ সময় বেঞ্চের অন্য বিচারপতি বলেন, ‘এটা কোন ধরনের খেলা চলছে?’
রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ সময় আদালতকে বলেন, ‘কিছু লোকের এ ধরনের অপকর্মের কারণে মোবাইল কোর্ট পপুলারিটি হারিয়েছে।’
হাইকোর্টের তলবে গতকাল আদালত কক্ষে হাজির হন, লোহাগাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মাহবুব আলম, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান এবং ওই থানার এসআই হেলাল খান ও এএসআই ওয়াসিম মিয়া। এইউএনও এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষের আইনজীবী সম্পূরক আবেদন করার জন্য সময় আবেদন করলে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর এইউএনও এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফারজানা শারমিন। এর আগে ফৌজদারি মামলায় ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা’ ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট।
লোহাগাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মাহবুব আলম, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান ও ওই থানার এসআই হেলাল খান ও এএসআই ওয়াসিম মিয়াকে গতকাল (রোববার) আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ওই ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া সাজা সাজানো বলে কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং যারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। সেইসঙ্গে রিট আবেদনকারীকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর রাত ৯টায় লোহাগাড়ার বেলাল নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন একটি ফৌজদারি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের জব্দ তালিকায় দেখা যায়, ১৩ অক্টোবর রাত ৯টায় বেলালের কাছ থেকে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
কিন্তু ইউএনও পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৪ অক্টোবর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় বেলালকে আট মাসের জেল দেন। এরপর ‘সাজানো’ ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেন মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন।
"