নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ আগস্ট, ২০১৭

মশা মারতে এক মেয়রের গাপ্পি মাছ

ড্রেনে টিকে থাকা নিয়ে সন্দেহ

মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মাছটি নালায় ছাড়লে মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে রাজধানীর ড্রেন ও নালাগুলোর বর্তমান পানি এই মাছের বেঁচে থাকা ও প্রজননের জন্য কতটুকু উপযুক্ত সে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদেশের ড্রেনের যে পরিবেশ, সেখানে গাপ্পি মাছ টিকে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ ড্রেনের পানির যে অবস্থা, তাতে এ ধরনের মাছের টিকে থাকা কঠিন।

কিসের ভিত্তিতে এমন মাছ আনা হলো- জানতে চাইলে ডিএসসিসির কীটতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমের কমিটিতে থাকা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক দেবাশীষ সরকারকে ফোন দিলে তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং বিষয়টি মৎস্য বিভাগের বলে জানান। তবে ওই কমিটিতে সে বিভাগের কাউকে রাখা হয়নি। সিটি করপোরেশন কীটতত্ত্ববিদরা এই সম্পর্কে না জানা থাকায় অনেকটা অন্ধকারে থেকে মাছটি ড্রেনে ছাড়ছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ও মৎস্য বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান জানান, গাপ্পি মূলত জলাশয়ের উপরের স্তরেই ঘোরাফেরা করে। এরা ২০ ডিগ্রি থেকে ২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি পছন্দ করে। আর মশা পানিতে ডিম পাড়ে, জন্মেও পানিতে। কয়েক ধরনের মাছ আছে, যেগুলো পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। তার মধ্যে গাপ্পি মাছ অন্যতম। এই মাছটি ড্রেনে ছাড়লে মশার বংশবৃদ্ধি রোধ সম্ভব।

তবে ড্রেনে গাপ্পি মাছ টিকে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে ড্রেনে পানির যে অবস্থা, সে পরিবেশের সঙ্গে গাপ্পি মাছটি খাপ খাওয়াবে কি না সন্দেহ রয়েছে। কারণ ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা এমনভাবে ফেলা হয়, কয়েকদিন পর পানি পচে দুর্গন্ধ বের হয়। এতে পানিতে অক্সিজেন থাকে না। সেখানে কোনো প্রাণীই বাঁচতে পারবে না।’

এদিকে, গতকাল সোমবার রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের সামনের ছোট্ট জলাশয়ে গাপ্পি মাছের পোনা ছাড়েন মেয়র সাঈদ খোকন। এর আগে তিনি ‘চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য দেন। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আলী নকী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কে মউদুদ ইলাহী, একাডেমিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গুলশান আরা প্রমুখ।

জানা গেছে, গাপ্পি মাছ মানুষ অ্যাকুরিয়ামে পালে। তবে এটি যে মশা নিধনে কার্যকর হতে পারে, সেটি প্রমাণ হয়েছে ভারতে, জানান মেয়র। এ কারণে তারাও এই মাছ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া ডিএসসিসি প্রজননস্থলে ওষুধ ছিটিয়ে মশক নিধনের চেষ্টা করছে। এরসঙ্গে গাপ্পি মাছ একটি কার্যকর অস্ত্র হবে বলেই আশা করছে নগর কর্তৃপক্ষ।

মেয়রের হিসাবে ঢাকা দক্ষিণের ৪৫০ কিলোমিটার ড্রেনে গাপ্পি মাছের ১৫ লাখ পোনা লাগবে। তিনি বলেন, ‘স্বল্পতম সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সব ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছাড়া হবে। মশাকে প্রাকৃতিক উপায়ে ধ্বংসের জন্য যা করণীয় আমরা তাই করব।’

মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গেছে, গাপ্পি মাছ অনেকটা ছোট আকৃতির। কম অক্সিজেন যুক্ত ও অপেক্ষাকৃত দূষিত জলেও ওই মাছ বেঁচে থাকতে পারে। সাধারণভাবে ওই মাছের গড় আয়ু ৩-৪ বছর। প্রতি ঘণ্টায় একটি মাছ ২০০ মশার লার্ভা খেয়ে ফেলতে পারে। মৎস্য দফতরের কয়েকজন কর্মী জানান, প্লাস্টিকের ড্রামে বিশেষ পদ্ধতিতে গাপ্পি মাছ চাষ করা যেতে পারে। আর্থিক খরচও বেশি নয়।

পোয়েসিলা রেটিকুলাটা প্রজাতির এই রঙিন মাছ অ্যাকুরিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবেই পরিচিত। সব ধরনের আবহাওয়ায় এই মাছ দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। তবে গাপ্পি অতি দ্রুত বংশ বিস্তার করে বলে উন্মুক্ত জলাশয়ে এ মাছের ছড়িয়ে পড়া ক্ষতির কারণ হতে পারে। গাপ্পি মূলত ভেনেজুয়েলা, ব্রাজিলের মাছ। এরা নানা জাত ও বিচিত্র রঙের হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist