নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ মার্চ, ২০২০

রাজধানীতে চাকা ঘুরছে না, জীবন অচল

ঢাকা হয়ে উঠেছে এক অচেনা শহর। যেখানে থমকে গেছে জীবন। থেমে গেছে কোলাহল। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে থাকার যুদ্ধে হারিয়ে গেছে রাজধানীর চিরচেনা পরিবেশ। সরেজমিন দেখা যায়, বদলে যাওয়া ঢাকার ভিন্নমাত্রিক দৃশ্যপট।

গাইবান্ধার সাঘাটার বাসিন্দা মান্নান শেখ ঢাকায় রিকশা চালান। মা-বাবা, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার। রাজধানী সুপারমার্কেট থেকে মান্নানের রিকশায় চেপে মতিঝিল শাপলা চত্বরের দিকে যেতে যেতে কথা হলো তার সঙ্গে। মান্নান জানালেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে বাড়ি চলে যেতে চেয়েছিলেন। গাড়ি ভাড়া ছিল না বলে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন। গুলিস্তানে ফুটপাত থেকে কেনা ৪০ টাকার মাস্ক পরে রিকশার প্যাডেল চেপে ঘুরছেন ফাঁকা শহরের সব অলিগলি। কোনো বাধা নেই। যাত্রী যেখানে যেতে চাচ্ছেন, সেখানেই ছুটছেন তিনি। যানজটের ধকল নেই বলেই এমন ফুরফুরে তিনি। মান্নানের মতে, সড়কে মানুষ খুবই কম। রিকশার সংখ্যাও কমে গেছে অনেক। সেজন্য আয় ভালো হচ্ছে। জমার টাকা এবং দিনের খরচ বাদে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকার মতো পকেটে থাকার আশা তার। তিনি বলেন, গরিব মানুষ, বউ-বাচ্চার একমাত্র সহায়। আমার কিছু হলে ওদের দেখার কেউ নেই। এ জন্য খুব সাবধানে রিকশা চালাই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সংলগ্ন সড়কে সারিবদ্ধ কয়েকটি রিকশা। আশপাশে যাত্রীর আনাগোনা খুবই কম। গেন্ডারিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা দাবি করা সাহাবউদ্দীন তাচ্ছিল্যে উড়িয়ে দিলেন ভাইরাস প্রসঙ্গ। বলেন, ‘এসব ভাইরাস-টাইরাস আমগো অইবো না। বড়লোকের জন্য সব ভাইরাস। আমরা এর মধ্যেই বাঁইচা থাকি।’

একটু দূরেই পঞ্চাশোর্ধ্ব আবদুস সালাম। মুখে গামছা পেঁচিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায়। আলাপের শুরুতেই বলেন, ‘বাবারে, আমার কেউ নাই। বাঁচলেও আছি, মরলেও আছি। এই রিকশা টেনেই জীবন পার করা লাগবে। শহরে মানুষ নাই। তাই আগের মতো আয়ও নাই।’ সালামের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায়। গ্রামে বন্ধকী কৃষিজমি ছিল। ফলন ভালো হয় না। তাই প্রায় আট বছর আগে ঢাকায় আসেন। স্ত্রী আর তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে নিয়ে তার জীবন। সংসারের ব্যয় মেটাতে এই বয়সেও ঝুঁকি নিয়ে রিকশা চালান। করোনা পরিস্থিতিতে মাস্কের দাম বেড়ে যাওয়ায় গামছা দিয়েই কাজ সারেন তিনি।

ব্যতিক্রমী ভাবনা প্রকাশ করলেন আরেক রিকশাচালক মকবুল হোসেন। তিনি মাস্ক পড়েছেন। করোনা থেকে বাঁচতে সবসময় সতর্ক থাকেন জানিয়ে বলেন, ‘শুনেছি এই ভাইরাস খুব দ্রুত একজন থেকে আরেকজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য মাস্ক পরা না থাকলে ওই যাত্রীকে আমার রিকশায় তুলি না।’ তিনি বলেন, যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরে রাস্তায় মানুষ বের হচ্ছেন না। অনেকে বিশেষ প্রয়োজনে বের হচ্ছেন। তাদের একমাত্র উপায় রিকশা। রিকশার সংখ্যাও কমে যাওয়ায় আয় মোটামুটি ভালোই হচ্ছে।

নরসিংদীর রায়পুরা থেকে ঢাকায় রিকশা চালাতে আসা যুবক ইউনুস আলীর সঙ্গে আলাপ হয় ফকিরাপুল মোড়ে। বিয়ে করেছেন বছর তিনেক হলো। দেড় বছরের একটি মেয়ে আছে তার। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাত্রী কম জানিয়ে ইউনুস বলেন, ‘গাড়ি না থাকায় যানজটের ভয় নেই। তাই যে কোনো জায়গায় ভাড়া নিয়ে চলে যাচ্ছি। সকাল থেকে যাত্রী খুবই কম। তবে আয় একেবারে মন্দ না।’

যাত্রাবাড়ীর মুরগিপট্টির একটি গ্যারেজের মালিক সোবহান মিয়া ফোনে বলেন, ১আমার ৮৪টি রিকশা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮টি রিকশা এ মুহূর্তে চলাচল করছে। বাকিগুলো গ্যারেজে অলস পড়ে আছে। বেশিরভাগ রিকশাচালক করোনার আতঙ্কে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close