শাহজাহান সাজু

  ২০ আগস্ট, ২০১৯

অর্থ পাচারকারীদের শক্ত হাতে দমনের নির্দেশ

ব্যাংকের টাকা বিদেশে পাচারকারীদের শক্ত হাতে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একইসঙ্গে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা, ব্যাংকে ‘সেবা কেন্দ্র’ স্থাপন এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাস করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরেই লোকসান দিয়ে আসছে। এর অন্যতম কারণ দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ও ঋণ জালিয়াতিও এই অবস্থার জন্য দায়ী। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কিছু অসৎ ব্যাংকারদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা জালিয়াত চক্রই ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছে। ব্যাংকগুলোয় বিদ্যমান অনিয়ম ও দুর্নীতি দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে ব্যাংকগুলোতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, দেশ থেকে অর্থ পাচার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অর্থ পাচার বৃদ্ধির একটি লক্ষণ হলো দেশে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করলেও ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বেড়ে যাওয়া। পাচারের ছিদ্রগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া গেলে রোধ হতে পারে অর্থ পাচার। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে তৎপর হওয়া এবং নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা ব্যাংকিং খাতে জাল-জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দেওয়ার কথাও বলছেন তারা। জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে যেসব অর্থ বেরিয়ে গেছে, সেসব ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া, ঋণের সুদহার কমাতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা এবং এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, দেশ থেকে কী পরিমাণ টাকা পাচার হয়, সেই হিসাব সরকারিভাবে না মিললেও যুক্তরাষ্ট্রের জিএফআইয়ের প্রতিবেদন বলছে, এর পরিমাণ বছরে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা। দেশ থেকে এই টাকা চলে যাচ্ছে চার প্রক্রিয়ায়। এগুলো হচ্ছে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং, হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা। এর মধ্যে টাকা পাচারের সবচেয়ে সহজ নিরাপদ ও বড় মাধ্যম হচ্ছে ওভার ইনভয়েসিং।

জিএফআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে চার প্রক্রিয়ায় ৫৯০ কোটি ডলার (দেশীয় মুদ্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির মতে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা দেশের চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close