হাসান ইমন

  ২৪ জুলাই, ২০১৯

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেই

রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলছে। প্রায় গত দুই দিনে অর্থাৎ ৪৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে ৮১০ জন রোগী। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৮ জন। এবার ডেঙ্গুর ধরন ভিন্ন হওয়ায় বাড়ছে প্রাণহানির আশঙ্কা। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক সক্ষমতা কম থাকায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। হাসপাতালে রোগীদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ রোগী তারা। তবে ভয় না পেয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ইস্কাটনে অবস্থিত ৫০০ শয্যার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬০টিতে ভর্তি আছেন ডেঙ্গু রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এখানে কোনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়নি। গত ১ মে হাসপাতালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। গত ৭ জুলাই পর্যন্ত মোট ২২২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮৫টিতে। গত ১৬ দিনে হাসপাতালে ৩৬৩ রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ৬০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। ওই ৬০ জনসহ বর্তমানে ১৬০ ডেঙ্গু রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এছাড়া গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে সোমবার থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে ৬৬ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে নতুন রোগী ১৬। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডে গত সোমবার সকাল ১০টা থেকে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। সেই হিসাবে প্রতি ১৪ মিনিটে ভর্তি হচ্ছেন একজন রোগী। এছাড়া আগের দিন রোববার নতুন ভর্তি ছিল ৮৯ জন। গতকাল সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৪৯ জন।

সরকারি হিসাব মতে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৫৮৬ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৬ জন। এছাড়া চলতি মাসের মাত্র ২২ দিনেই এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮৪০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।

তবে খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারাই বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদফতরে নেই। সরকারি হিসাবে শুধু হাসপাতালে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছেন তাদের হিসাব রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত ৪৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৮১০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৮ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

এদিকে শিশুদের জ্বর হলেই ডেঙ্গু আতঙ্কে হাসপাতালমুখী হচ্ছেন অভিভাবকরা। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গুতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশই শিশু। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বর্তমানে ৯১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে শিশু ২১ জন, যাদের বয়স আর ৩ থেকে ১০ বছর। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘণ্টা অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোস্তফা কামাল রউফ। তিনি আরো বলেন, শিশুসহ যেকোনো বয়সের রোগীর জন্য এ সময়টাতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এবার বেশিরভাগ রোগীই টাইপ থ্রি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, এই ডেঙ্গুর জটিলতা ও উপসর্গ একটু ভিন্ন রকমের। তাই রোগী ও স্বজনদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে বলছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের ১১টি ইউনিট মিলিয়ে ৩৪৯ জন রোগী ভর্তি আছেন। ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত মোট ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৯৬৫ জন। এদের মধ্যে ৬১৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ৩ জন।

ঢামেক পরিচালক বলেন, হাসপাতালের প্রতিটি ভর্তির দিনেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন ডেঙ্গু নিয়ে মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। জ্বর হলে কেউ আর অবহেলা না করে পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন। তবে ভয় না পেয়ে আরো বেশি সচেতন হন।

শিশুদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে ঢামেক শিশু বিভাগের (বহির্বিভাগ) আবাসিক চিকিৎসক ডা. রাজেশ মজুমদার বলেন, আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে তিন থেকে আট বছর বয়সির সংখ্যাই বেশি। শিশুদের ডেঙ্গু যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না যায় তাহলে এ জ্বরের কারণে শরীরে পানি কমে যেতে পারে। কিডনিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয় তারা। ফলে তাদের বাঁচানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close