মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৮

মানিকগঞ্জে কলেজছাত্র হত্যা মামলায় ৪ জনের ফাঁসি

মানিকগঞ্জে কলেজছাত্র মনির হোসেন হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসি ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং তিনজনকে বেকসুর খালাশ দিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শহিদুল আলম ঝিনুক এই রায় দেন।

২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন বাদশা মিয়া, লাল মিয়া, আনোয়ার হোসেন ও আজগর চৌধুরী। এদের প্রত্যেক আসামির ২০ হাজার করে অর্থদন্ড ধার্য করা হয়েছে। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি আক্তার হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ের আদেশের সময় দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বাদশা মিয়া ও লাল মিয়া উপস্থিত ছিলেন। বাকি সবাই পলাতক রয়েছে।

সরকারপক্ষের পিপি আবদুস সালাম জানান, মানিকগঞ্জ খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. মনির হোসেনকে ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণ করে। পরের দিন ১১ সেপ্টেম্বর মনির হোসেনের মা মালেকা বেগম বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বাদশা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। আসামি বাদশা মিয়ার স্বীকারোক্তি মতে পুলিশ ১২ সেপ্টেম্বর বংশি নদীর ভাষা শহীদ রফিক সেতুর কাছ থেকে মনিরের লাশ উদ্ধার করে। পরে অপহরণকারীরা মনির হোসেনকে সাভারের নামাবাজার খেয়াঘাটে আসামি লাল মিয়ার ট্রলারে করে রানা প্লাজার ধবংসস্তূপের খন্ড খন্ড সøাপ দিয়ে বংশাই নদীতে হাত, পা, কোমর ও গলা বেঁধে জীবন্ত নদীতে ফেলে হত্যা করে।

এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক নম্বর আসামি বাদশা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করে।

আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ গঠন করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ মামলায় মোট ২৬ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। নিহতের বাবা পরোশ আলী জানান, এ রায়ে আমি খুশি। আজ ছেলের হত্যার প্রকৃত বিচার পেয়েছি। আর যেন বাবা-মায়ের বুক কেউ খালি করতে না পারেন। তাই অতি দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে চাই।

আসামিপক্ষের আইনজীবী শিপ্রা সাহা এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তারা উচ্চ আদালাতে আপিল করবেন। সেখানে ন্যায়বিচার পাবেন।

মামলার বিবরণীতে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের পরোশ আলীর একমাত্র ছেলে মানিকগঞ্জ খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মনির হোসেন একই এলাকার বাদশা মিয়া সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাভার নিয়ে যায়। এরপর বাদশার সঙ্গে সেখানে যোগ হয় মো. আক্তার হোসেন জামাল ওরফে কামাল, মো. আজগর চৌধুরী, মো. শুকুর আলী, মো. লাল মিয়া, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. মাসুদ ও মো. আলম। তাদের সবার উদ্দেশ্য ছিল মনিরকে হত্যা করবে এবং তার পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবিও করবে। সাভারে নিয়েই ওই দিন রাতেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই মিলে মনিরের হাত-পা, চোখ-মুখ ও মাজা দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি নৌকায় ওঠায়। পরে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের পাথর দিয়ে মনিরকে দড়ির সঙ্গে বাঁধা হয়। এরপর মোবাইলে মনিরের মায়ের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে হত্যাকারীরা। এর আগেই মোবাইলে রেকর্ড করা হয় মনিরের কথা ও কান্নার শব্দ। ফোনে মনিরকে নির্যাতনের আওয়াজ শোনার পর মনিরের মা মালেকা বেগম দিশাহারা হয়ে পড়েন। মুক্তিপণের টাকা দিতেও রাজি হন। কিন্তু তার তার আগেই সর্বনাশ হয়ে যায়। ওই দিন রাতের কোনো একসময় নৌকায় করে সাভারের নামাবাজার থেকে হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়কের শহীদ রফিক সেতুর কাছে নিয়ে জীবন্ত অবস্থায় বংশী নদীতে ফেলে মনিরকে হত্যা করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close