নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৮

না.গঞ্জে চার যুবকের লাশ উদ্ধার ঘটনায় মামলা

তিনজনকে ‘ডিবি পরিচয়ে’ তুলে নেওয়া হয়েছিল

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মহাসড়কের পাশে যে চারজনের লাশ পাওয়া গেছে, তাদের তিনজনকে এক সপ্তাহ আগে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ভুলতা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। লাশ উদ্ধারের পর নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘ডাকাত বা সন্ত্রাসীদের কোন্দলে’ ওই চারজন নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন।’ এদিকে গুলি করে চারজনকে হত্যার ঘটনায় আড়াইহাজার থানায় দ-বিধি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করেছে পুলিশ। গত রোববার গভীর রাতে আড়াইহাজার থানার এসআই রফিকউল্লাহর দায়ের করা এসব মামলায় ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। পুলিশের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, রোববার ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচরুখী ফকির বাড়ির সামনে দুই দল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গোলাগুলি করছে। এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চার ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন।

অপরদিকে ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘চারজনকেই পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনজনের মাথায় শটগানের গুলি পাওয়া গেছে। প্রত্যেকের মাথায় পাওয়া গুলির ধরণ একই রকম।’ এর আগে গতকাল সোমবার সকালে স্বজনরা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তিনজনের লাশ শনাক্ত করেন। এরা হলেন- পাবনা জেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের ধর্মগ্রাম এলাকার খায়রুল সরদারের ছেলে সবুজ সরদার (১৭), জামাল উদ্দিনের ছেলে ফারুক হোসেন (৪০) এবং লোকমান শেখের ছেলে জহিরুল ইসলাম (১৯)। এর আগে রোববার বিকেলে লুৎফর রহমান মোল্লা (৩৭) নামে এক গাড়িচালকের লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী।

গত রোববার ভোরে আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুইপাশে দুটি করে মোট চারটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় এক রাউন্ড গুলিসহ দুটি পিস্তল এবং একটি মাইক্রোবাস পাওয়ার কথা জানায়। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘চারজনকেই পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনজনের মাথায় শটগানের গুলি পাওয়া গেছে। প্রত্যেকের মাথায় পাওয়া গুলির ধরণ একই রকম।’

নিহত বাবা জামাল উদ্দিন হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তার ছেলে ফারুক ভুলতা-গাউছিয়ায় বাস চালাতেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও ছিল না। ভুলতা গাউছিয়া থেকে গত সোমবার ফারুকসহ চারজনকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে খবর পান জামাল উদ্দিন। এরপর থেকে ছেলের আর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না তিনি। গণমাধ্যমে খবর আর ছবি দেখে হাসপাতালে গিয়ে তিনি ছেলের শনাক্ত করেন।

খায়রুল সরদার সাংবাদিকদের বলেন, তার ছেলে সবুজ ভুলতায় একটি বেকারিতে কাজ করত। তকেও ‘ডিবি পরিচয়ে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা গরিব মানুষ। কোনো রাজনীতি করি না।লিটন নামে আরেকটা ছেলেরে সেদিন নিয়া গেছে। তার খোঁজ এখনও পাওয়া যায় নাই।

জহিরুলের লাশ শনাক্ত করে তার শ্বশুর নজরুল ইসলাম হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, পাবনা থেকে এসে ভুলতায় সবুজদের সঙ্গে একই বেকারিতে কাজ নিয়েছিলেন তার জামাই। কীভাবে কী ঘটল তার কিছুই তারা বুঝতে পারছেন না। এর আগে গত রোববার বিকেলে লুৎফর রহমান মোল্লার লাশ শনাক্ত করে তার স্ত্রী রেশমা বেগম জানিয়েছিলেন, তাদের বাসা ঢাকার রামপুরা ওয়াপদা রোডে। তার স্বামী মাইক্রোবাস চালাতেন। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে ‘ট্রিপ নিয়ে’ বাসা থেকে বের হন। তারপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এ বিষয়ে তিনি থানায় জিডিও করেছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close