ক্রীড়া প্রতিবেদক, আবুধাবি থেকে

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আফগানদের সামনে দাঁড়াতে পারল না টাইগাররা

কব্জির ইনজুরি নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন তামিম ইকবাল। অতর্কিত চোট শেষ করে দিয়েছে টাইগার ওপেনারের এশিয়া কাপ। চোট শঙ্কার ঝুঁকি এড়াতে মুশফিকুর রহিমকে বিশ্রাম দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশ্রাম দেওয়া হলো মুস্তাফিজুর রহমানকেও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিয়মরক্ষার ম্যাচে অনিয়মিত একাদশ নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ।

পরিণামটা ভালো হয়নি। কাল আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আফগানদের কাছে ১৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে গেছে টাইগার শিবির। এই হারের ধকলটাও কাটিয়ে ওঠার সময় পাচ্ছে না বাংলাদেশ। আজ বিকালেই যে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুপার ফোরের অভিযানে নেমে পড়তে হচ্ছে মাশরাফিদের। প্রতিপক্ষ প্রতিবেশি ভারত। একই সময়ে ফাইনালে ওঠার রাউন্ডে পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে আফগানযোদ্ধারা।

এসিসির পরিবর্তিত সূচি অনুয়ায়ী ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচটা হয়ে পড়েছে অর্থহীন। এমন ম্যাচে মুদ্রা নিক্ষেপের লড়াইয়ে হেরে যায় বাংলাদেশ। বল হাতে কী দুর্দান্ত সূচনাই না করেছিল টাইগাররা। কিন্তু আফগানদের অষ্টম উইকেট জুটিই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। বোলার হিসেবেই বিশ্ব ক্রিকেটে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো রশিদ খান কাল ব্যাট হাতে অগ্নিরূপে হাজির হয়েছিলেন। কাল আবুধাবিতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি।

৩২ বলের ইনিংসে টাইগার বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দিলেন আফগান স্পিনার। অষ্টম উইকেট জুটিতে তার সঙ্গে জ্বলে উঠলেন গুলবাদিন নাইবও। তাতেই দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছে আফগানিস্তান। ১৬০ রানে ৭ উইকেট তুলে নেওয়ার পর রশিদ-নাইবের ৯৫ রানের বিস্ফোরক এই জুটিই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে।

অথচ আফগানিস্তানকে ২০০ রানের মধ্যে অলআউট করার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আফগান লোয়ার অর্ডারের একটা জুটিই পাল্টে দিল হিসাব-নিকাশ। ২০০ রানের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা আফগানরা শেষ অবধি নির্ধারিত ৫০ ওভারের পুরোটাই খেলল। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি ছুড়ে দিয়েছে ২৫৫ রানের চ্যালেঞ্জ। জবাব দিতে নেমে মাশরাফি বাহিনী গুটিয়ে গেছে মাত্র ১১৯ রানে (৪২.১ ওভার)।

আগেই ‘আনুষ্ঠানিক’ ম্যাচের চমকা পেয়ে যাওয়া ম্যাচটা স্বপ্নপূরণ করেছে নাজমুল হাসান শান্ত ও আবু হায়দার রনির। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের জার্সিতে কাল ওয়ানডে অভিষেক হয়ে গেল এ যুগলের। ৩ বছর পর একদিনের ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন হলো মুমিনুল হকেরও। নতুনদের সুযোগের ব্যবস্থা করে মুশফিকুর রহিম ও মুস্তাফিজুর রহমানকে বিশ্রাম দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

অনিয়মিত একাদশ নিয়েও শুরুটা অবশ্য মন্দ হয়নি বাংলাদেশের। ২৮ রানের মধ্যে আফগানদের ২ উইকেট তুলে নিয়েছিল টাইগাররা। শুরুর ধাক্কাটা প্রায় সামলে নিয়েছিল তারা। ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ ও হাসমতউল্লাহ শাহিদির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান। ৩৭ রানে থাকা শাহজাদকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন সাকিব আল হাসান। ৭৯ রানে দলের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেছেন আফগান তারকা। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা শাহজাদকে বোতলবন্দি করার পর ঘূর্ণি বোলিংয়ে আফগানদের নাকাল করে তোলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ধস নামার মিডল অর্ডারে। ৪২ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন সাকিব।

ইনিংসে দলীয় সর্বোচ্চ ৫৮ রান করা হাসমতউল্লাহ শাহিদির ঘাতক রুবেল হোসেন। তার শিকার এই একটিই। তবে আফগানদের ওপর চাপটা অব্যাহত রাখতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। অষ্টম উইকেট জুটিতে টাইগারদের বেধড়ক পেটান নাইব ও রশিদ। ৩২ বলে ৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন রশিদ। ইনিংসে আটটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফগান স্পিনার। নাইব ৩৮ বলে ৪২ রানে অজেয় ছিলেন। পাঁচটি চারে সাজানো ছিল তার ইনিংস।

আফগানদের ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জটা টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। কঠিন লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে টাইগারদের টপ অর্ডার। কোনোভাবেই যেন উইকেটের লাগাম টেনে ধরতে পারছিল না লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এদিন আফগানদের বোলিং তোপে বাংলাদেশের আটজন ব্যাটসম্যান দুই অংকেই যেতে পারেননি। দলীয় সর্বোচ্চ ৩২ রান করে সাজঘরে ফিরে গেছেন সাকিব আল হাসান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ করেছেন ২৭ রান। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত অবশ্য ২৬ রানে অজেয় থেকেই হারের জ্বালা নিয়ে উইকেট ছেড়ে গেছেন।

বাংলাদেশের পতন হওয়া উইকেটের ২টি করে তুলে নিয়েছেন মুজিব উর রহমান, রশিদ খান ও গুলবাদিন নাইব। খালি হাতে ফেরেননি মোহাম্মদ নবি, রহমত শাহ্, আফতাব আজমও।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close