নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দুই সেতু উদ্বোধন

উন্নয়নের পূর্বশর্ত আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা

প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সেবার মনোভাব, সততা এবং আন্তরিকতা সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে। গতকাল রোববার গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর-গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও কুমিল্লার হোমনার তিতাস নদীর ওপর নির্মিত প্রথম ‘ওয়াই’ আকৃতির ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতু’ উদ্বোধন করে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সেবার মনোভাব, সততা এবং আন্তরিকতা সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে। তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যেখানে আজ বিশ্বজুড়ে জঙ্গিবাদ একটি বড় সমস্যা সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি ঘণবসতিপূর্ণ দেশে আমরা সাফল্য অর্জন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীকে আমি ধন্যবাদ জানাই, তারা সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেই আজকে আমরা এই জঙ্গিবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। কারণ, আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। কোনো একটি ঘটনা ঘটলে দিনরাত যখনই হোক, ফোন করেছি তাদের সাড়া পেয়েছি।

তিনি বিএনপি-জামায়াতের তথাকথিত আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাসের সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার নিন্দা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের ওপর আঘাত এসেছে। অগ্নিসন্ত্রাসে আমাদের ১৭ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অগ্নিসন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পায়নি।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি এটুকুই বলব যে, একটা দেশকে উন্নত করতে হলে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা। সে ক্ষেত্রে আমাদের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসও ফিরে এসেছে। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, এটা আমাদের ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে, আত্মসম্মান এবং মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে, বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবে। তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। দেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। অবশ্যই দেশকে গড়ে তোলার জন্য আমরা সব মানুষের জন্য সেবা নিশ্চিত করতে চাই। আর সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছি। তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।

সরকার প্রধান বলেন, এই যে নতুন মেট্রোপলিটন গঠন করা হলো এতে অনেক পুলিশ সদস্যের পদোন্নতিরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের পদেরও আপগ্রেডেশন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আর্থসামাজিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা বাজেট বৃদ্ধি করেছি, পুলিশের বাজেটও আমরা বাড়িয়ে দিয়েছি। জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো আমরাও করার উদ্যোগ নিচ্ছি।

উত্তরবঙ্গ একসময় অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সেখানে ইপিজেড করেছি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। আর রংপুরকে যেহেতু একটা বিভাগ করেছি সেখানে বিভাগীয় সুযোগ-সুবিধাটাও যেন স্থানীয় জনগণ পায় সেভাবেই আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আজ রংপুর এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের যেহেতু যাত্রা শুরু হচ্ছে কাজেই এই দুই অঞ্চলের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তাটা নিশ্চিত হবে। মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ পাবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নটা আরো ত্বরান্বিত হবে।

প্রসঙ্গত, তিস্তার এক পাশে রংপুর, আরেক পাশে লালমনিরহাট। সে জন্য লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরসহ চারটি উপজেলার লোকজনকে রংপুরসহ সারাদেশে যাতায়াত করতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ঘুরতে হতো। ৮৫০ মিটার দীর্ঘ ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ চালু হওয়ার ফলে একসময়ের ‘মঙ্গাপ্রবণ’ এ এলাকার আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

অন্যদিকে, তিতাসের ওপর ৭৭১ মিটার দীর্ঘ সেতুটি চালু হওয়ায় বাঞ্ছারামপুর, নবীনগর, হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা দারুণভাবে বদলে যাবে বলে আশা স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন এবং পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর এবং রংপুরের স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন। এসময় গণভবন প্রান্ত এবং গাজীপুর ও রংপুরে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার জনগণ এবং স্থানীয় উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close