বিশেষ প্রতিনিধি

  ১০ মার্চ, ২০১৮

সবকিছুই বাঙালির নিয়ন্ত্রণে

পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ঘরে ঘরে উড়ছে স্বাধীন বাংলার পতাকা। সুউচ্চ ভবন ছাপিয়ে কালো পতাকা উড়ছে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, থানা ও উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও। কালো পতাকা উড়িয়ে রাস্তায় চলছে সরকারি-বেসরকারি যানবাহন, পুলিশ বাহিনীর গাড়ি। সামরিক জান্তার কোনো নির্দেশই মানছে না বাঙালি। অবজ্ঞা করছে জারি করা কালাকানুন। একমাত্র সেনা ছাউনি ছাড়া সবকিছুই বাঙালির নিয়ন্ত্রণে, চলছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাসভবন পরিণত হয়েছে স্বাধীনতাকামী বাঙালির বিকল্প রাষ্ট্রপ্রধানের দফতরে।

আজ ১০ মার্চ। যথারীতি বন্ধ থাকে অফিস-আদালত ও কল-কারখানা। খোলা থাকে বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও ব্যবসাকেন্দ্র। আজো কাজে যোগ দিলেন না সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কর্মচারীরা। নারায়ণগঞ্জের কারাগার ভেঙে পালিয়ে যান ৪০ কয়েদি। এ সময় কারারক্ষী ও কয়েদিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে আহত হন ২৭ জন। রাজশাহী শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি করা রাত্রীকালীন কারফিউ তুলে নেয় সামরিক জান্তা।

সকালে ধানম-ির বাসভবনে একদল বিদেশি সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, সাত কোটি বাঙালির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির ব্যাপারে আর কোনো আপস নয়। পরে এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকার বিদেশি বিশেষজ্ঞদের বিতাড়নের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘বাংলা জাতীয় লীগ’ কার্যকরী কমিটির সভা থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি স্বাধীন বাংলার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মী সভা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলে। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী। বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহসভাপতি আসম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন। পরে ছাত্রলীগ ডাকসু নেতাদের স্বাক্ষরিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক বিবৃতিতে বাঙালি সেনা, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পাকিস্তান সরকারকে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানানো হয়। বিকেলে ওয়ালীপন্থি ন্যাপ শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিতে ঢাকা নিউমার্কেট এলাকায় এক পথসভা করে। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। লেখক-শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে লেখক শিল্পীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন ঢাকা শহরে। ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শেষে মিছিল বের করে। সিভিল সার্ভিসের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা এক সভায় মিলিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেন।

অন্যদিকে, নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালি ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করেন ও নিরস্ত্র বাঙালি নিধন বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে স্মারকলিপি দেন মহাসচিব উ থান্টের কাছে।

ইংরেজি দৈনিক ‘দি পিপলস’ পত্রিকায় ভুট্টোর কার্যকলাপের সমালোচনা করে শিগগিরই পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রতিনিধিদের কাছে শাসনভার বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

গণ-ঐক্যের নেতা এয়ার মার্শাল আসগর খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা শেষে করাচি ফিরে যান। করাচিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ন্যাপপ্রধান ওয়ালী খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার জন্য ১৩ মার্চ ঢাকায় আসার কথা জানান।

করাচিতে ওয়ালী ন্যাপের পশ্চিম পাকিস্তান শাখার মহাসচিব মীর গাউস বখস বেজেঞ্জো এক বিবৃতিতে বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাবের সঙ্গে সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ, বেলুচিস্তান ও পাঞ্জাবের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষারও প্রতিফলন ঘটেছে।

লাহোরের সাবেক পিডিএম প্রধান নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর দেওয়া পূর্বশর্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

লাহোর কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা এক বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উচিত ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় বসা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist