ঐক্যের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বের প্রতাপাদিত্যরা যখন ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ তত্ত্বের ওপর দিয়ে হাঁটার কথা ভাবছেন, মানবতাকে পায়ে দলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, পরোক্ষে এবং প্রত্যক্ষে গণহত্যার ঝান্ডা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার পক্ষে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানালেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্কট মোকাবিলায় ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মুসলিম বিশ্বের মানুষগুলোকে কেন উদ্বাস্তু হয়ে দেশে দেশে ঘুরতে হবে তার কারণ অনুসন্ধান এবং সমাধান খুঁজে বের করার জন্য মুসলিম বিশ্বের নেতাদের আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের চাবিকাঠি চার প্রভাবশালী দেশের হাতে। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই এই সংকটের সমাধান অনেকটা নির্ভর করছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই চার দেশ হলো- চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। বাস্তবতা এমন যে, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশও যদি রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং বিপরীতে থাকে শক্তিশালী এই চারটি দেশ; তাহলেও সংকটের সমাধান মিলবে না। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোসহ তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, সংকট নিরসন করতে হলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে পরাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনসহ প্রতিবেশী ভারতকে। বিশ্লেষকদের মাঝে কেউ কেউ আবার মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারতকে পক্ষে টানতে না পারলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে।
সংকট ঘনীভূত হবে নয়, ইতোমধ্যে যে পরিমাণ ঘনীভূত হয়েছে তাতে বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত, জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিকসহ নানা বিষয়ে গভীর সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। স্বার্থই যখন সব সম্পর্কের মূল উৎস, তখন অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থেই মিয়ানমার সরকারের স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দেবে এবং দিচ্ছে চার পরাশক্তি। ভোগবাদী পৃথিবীতে এটাই নিয়ম। এখানে মানবতাবাদের কোনো স্থান নেই। তবুও বলতে হয়, যত কঠিনই হোক, বাংলাদেশকেই এ সংকটের মোকাবিলা করতে হবে এবং বাংলাদেশ তা করছে। আর এই মোকাবিলার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যে আহ্বান মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি ইতিবাচক আহ্বান হিসেবে ইতিহাসে বিবেচিত হবে বলেই আমরা মনে করি। কেননা, আজকের এই ছোট্ট আহ্বান ভবিষ্যতের মুসলিম বিশ্বকে যেকোনো বড় ঐক্যে পৌঁছে দিতে পারে। এছাড়া মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের যে মহিমা আমরা এতদিন জেনে এসেছি অ্যাসিড টেস্টের মধ্য দিয়ে তার একটা পরীক্ষাও হয়ে যাবে এবং একই সঙ্গে এটাও প্রমাণিত হবে যে, মুসলিম হিসেবে আমরা কতটা ইমানদার!
"