ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ১০ আগস্ট, ২০১৭

বাল্যবিবাহ

উদ্বেগজনক তথ্যে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ৭৩ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় বাল্যবয়সে। আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোরম ইন্টারন্যাশনালের গবেষণা জরিপে এই উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী শিক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখালেও বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে এ দেশের মেয়েদের রক্ষা করা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। নারীর ক্ষমতায়নে অনেক পিছিয়ে থাকলেও এদিক থেকে পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর অবস্থাও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার ৩৮ শতাংশ এবং ছেলেদের ৩.৭ শতাংশ। আর পাকিস্তানে মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার ৩৪.৮ শতাংশ এবং ছেলেদের হার ১৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের এ হারকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করা হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে বাল্যবিবাহ হয় বলে চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া চরম দারিদ্র্য, দুর্বল বিচারব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগ প্রক্রিয়ার অভাবকে বাল্যবিবাহের কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ২ হাজার ৭৪২টি জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশ নেওয়া সবাই ১৮ বছরের নিচের তরুণ-তরুণী। বাল্যবিবাহের মচ্ছব বইলেও বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ এবং এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ের ন্যূনতম বয়স বরের ক্ষেত্রে ২১ এবং কনের ক্ষেত্রে ১৮। এর চেয়ে কম বয়সে বিয়ে হলে সেটি বাল্যবিবাহ বলে বিবেচিত হয় এবং আইনের দৃষ্টিতে অপরাধের শামিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাল্যবিবাহ আইন অনুযায়ী অবৈধ হলেও এই আইনের কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেও বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটছে। বাল্যবিবাহ নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অর্জিত সব সাফল্যকে নিষ্প্রভ করে তুলছে। প্রসূতি স্বাস্থ্যের জন্য এটি বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ফেলছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। এ আপদ বন্ধে জনপ্রতিনিধি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে।

বাল্যবিবাহ। এ দেশে দীর্ঘদিনের এক সামাজিক অভিশাপ। এই বাল্যবিবাহের অভিশাপ একজন নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে দিচ্ছে না। ইউনিসেফের রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার ৪৬ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হচ্ছে, যা বিশ্বে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হার। এ তালিকায় বাংলাদেশের পরেই রয়েছে ভারত, নেপাল ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশের আইনানুযায়ী ২১ বছরের কম বয়সী কোনো পুরুষ কিংবা ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো নারী বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হলে তা বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য। বাংলাদেশে পুরুষের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার ৫ শতাংশে নেমে এলেও নারীর ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার মূল কারণ হলো দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও কুসংস্কার। অজ্ঞতা ও দারিদ্র্যের কারণেও অল্পবয়সে মেয়েকে বিয়ে দেন তাদের পিতামাতা। ভরণপোষণ ও শিক্ষার খরচ এড়াতেই মূলত তারা এ কাজটি করে থাকেন। বাল্যবিবাহের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো যৌতুক। বয়স বেশি হলে যৌতুকের পরিমাণ বেশি লাগে। বাল্যবিবাহ ভন্ডুল করে দেওয়ার অনেক খবর প্রায়ই পত্রপত্রিকায় দেখা যায়। এটি জনসচেতনতার একটি দিক। এই জনসচেতনতা সবার মধ্যে জাগাতে হবে।

সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড গার্লস সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রগতিশীল উদারপন্থী বিশ্বনেতার প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক। বিশেষ করে মেয়েশিশুর অধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করে তাকে এ অভিধা দেন আন্তর্জাতিক সংস্থাটির নির্বাহী প্রধান। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী বাল্যবিবাহ বন্ধে আরো উদ্যোগী হবেন এবং তার হস্তক্ষেপেই বাল্যবিবাহমুক্ত বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ লক্ষ্যে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪’-এর যে খসড়া সরকার তৈরি করেছে, আশা করা যায় তা দ্রুত আইনে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও এনজিওগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাল্যবিবাহ রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করলে এই অভিশাপ থেকে আমরা দ্রুত মুক্ত হতে পারব বলে দেশবাসী মনে করে।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist