সীমান্ত প্রধান

  ২৯ মার্চ, ২০১৭

গণতন্ত্র

নির্বাচন হোক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি সেভাবে প্রস্তুতি না নিলেও ভেতরে ভেতরে তারাও যে নির্বাচনমুখী হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে-এমন প্রশ্ন যখন উঠছে, তখন আওয়ামী লীগ সাফ জবাব দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। তবে বিএনপিও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলছে, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দুই দল ও দলের বাইরে তাদের সমর্থকরাও তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের অধীনেই যদি আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সে ক্ষেত্রে বিএনপি কী নির্বাচনে আসবে নাকি বর্জন করবে-এমন প্রশ্ন এখন সব থেকে বেশি উচ্চারিত। একাদশ নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনে বিএনপির আসা না আসাটা এখন সব থেকে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অতীত এবং বর্তমান মিলিয়ে আওয়ামী লীগের মনোভাব বলছে, বিএনপি নির্বাচনে আসুক আর না আসুক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। কেননা, আওয়ামী লীগ শুরু থেকে নির্বাচন প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়ে আসছে তারা এখনো সেখানেই অটল আছে। সুতরাং এটুকু অনুমান করা যাচ্ছে, সামনে তাদের মত পাল্টাবে না। যদি তাই হয়, তবে কী আবারও ৫ জানুয়ারির মতো আরো একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে? রাজনৈতিক সংঘাত সংঘর্ষ কি ফের অনিবার্য? এমন আশঙ্কা কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে।

এদিকে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির মাধ্যমে খুঁজে বের করা হয়েছিল ২০জন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে। তাদের মধ্য থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে বর্তমানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে বিএনপির দেওয়া নামের তালিকা থেকেও একজন রয়েছে। তারপরও এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে। যদিও নির্বাচন কমিশন বরাবরই দাবি করছে, তারা নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশেনর জন্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ‘অ্যাসিড টেস্ট’। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই বোঝা যাবে নির্বাচন কমিশন কতটা নিরপেক্ষ। আমরাও প্রত্যাশা করি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সর্বক্ষেত্রে

তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। বাংলাদেশের নির্বাচন প্রেক্ষাপটে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন

করবে। অবশ্য বর্তমান নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই বলে আসছে, তারা সব দলের অংশগ্রহণে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায়। এবং তা হবে নিরপেক্ষ সার্বজনীন।

সে যাই হোক, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হচ্ছে না তা অনেকটাই স্পষ্ট। শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমনটা এখন অনেকটাই প্রতীয়মান। তবে মূল কথা হচ্ছে, নির্বাচন যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন তা অবশ্যই সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এখানে কেউ যেন কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে। কোনো অভিযোগ যেন কোনোভাবেই উত্থাপন করতে না পারে। সে ধারা কতটা বজায় থাকবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ বরাবরই সংশয়ে। কেননা, বর্তমানে আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দলেরই প্রধানতম লক্ষ্য নির্বাচনে জয়লাভ করা, সেটা যেভাবেই হোক বা যে কোনো মূল্যে হোক। সে হিসেবে সংঘাত-সংঘর্ষ আর আস্থাহীনতার জায়গাটা প্রকট হয়ে ওঠে। যা কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমরা দেখে আসছি। এই ধারার পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। তা না হলে গণতন্ত্র চর্চা ব্যাহতই হবে। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে হলে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদলগুলো দ্বারা প্রবর্তিত বিধি-ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে, তাহলে বিএনপি কতটা লাভবান হবে? এতে করে কি আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি হবে? দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কি খুব বেশি ক্ষতি হবে? আর যদি ক্ষতি হয়, তাতে এই ক্ষতির কথা কি আওয়ামী লীগ স্বীকার করবে? তবে যে প্রশ্নটি সব থেকে বেশি উত্থাপিত হচ্ছে, তা হলো-কোনো রকম ছাড় না দিয়ে আওয়ামী লীগ যদি বিএনপিকে বাদ দিয়ে আবারও ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করেই ফেলে, তাহলে কি আওয়ামী লীগ খুব বেশি লাভবান হবে? কিংবা লাভ-ক্ষতি যাহোক, এতে করে কি গণতন্ত্রের রক্ষা হবে? তাই আমরা চাই, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।

লেখক : কবি ও সাংবাদিক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist