দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ২২ জুলাই, ২০১৯

বন্যা

দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান

দেশের ২০টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হওয়ায় রাজধানীর সবজি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। কাঁচামরিচের দাম এক লাফে উঠেছে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি। বন্যা আরো থাবা বিস্তার করতে পারেÑ এমন আশঙ্কাই জোরদার হয়ে উঠেছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা নেই বললেই চলে। ফলে বন্যাদুর্গত এলাকায় লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ ত্রাণের জন্য অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছে। উজান থেকে আসা ঢল দেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী।

ভারত, চীন, নেপালÑ তিন প্রতিবেশী দেশেই আঘাত হেনেছে বন্যার ছোবল। ভাটির দেশ বাংলাদেশে আসছে সে পানির ছোবল। বন্যার ফলে উপদ্রুত অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। রাজপথ ও রেলপথে বন্যার থাবা যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সড়কপথে যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রেলপথেও বেড়েছে ঝুঁকি। বন্যা বাংলাদেশের জন্য একটি সাংবার্ষিক সমস্যা। এ বছর দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অন্য বছরের চেয়ে কম হলেও উজানে ব্যাপক বৃষ্টিপাত বাংলাদেশের মানুষের জন্য দুর্ভোগ নিশ্চিত করেছে। ভূপৃষ্ঠের তাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আবহাওয়ায় যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তার প্রভাবে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছোবল বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে উপকূলভাগের দেশগুলো। দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম মহানগরে জোয়ারের পানি আগ্রাসন চালাচ্ছে প্রায় নিয়মিত। উপকূলভাগেও বিরাজ করছে অস্বস্তিকর অবস্থা। বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকারের নানা উদ্যোগ থাকলেও একে শুধু প্রশাসনের দায় ভাবলে ভুল করা হবে। বন্যাদুর্গতদের পাশে সব সামাজিক সংগঠন ও সম্পন্ন মানুষদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। মানুষ মানুষের জন্যÑ এ চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

বন্যা আমাদের দেশে নতুন নয়। বিশেষজ্ঞের মতে, আঞ্চলিক ও স্থানীয় অতিবৃষ্টি এবং ভৌত অনেক কারণ বাংলাদেশে বন্যা হওয়ার জন্য দায়ী। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বন উজাড়করণ এই প্রক্রিয়ায় বেশখানিকটা প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে বলে গবেষকরা প্রায় নিশ্চিতভাবে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। ভৌত কারণগুলোর মধ্যে সম্প্রতি হিমালয়ে অস্বাভাবিকভাবে বরফের আস্তরণ (গ্লেসিয়ার) গলে যাওয়া, নদী, উপনদী ও খালগুলোর পানি নির্গমন ক্ষমতা বিভিন্ন কারণে হ্রাস পাওয়া, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ এবং নির্বিচার বন উজাড় হওয়া অন্যতম।

এ ছাড়া গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার একটি বৃহত্তম ব-দ্বীপ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান। এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশকে বছরের পর বছর বন্যায় আক্রান্ত হতে হচ্ছে। কখনো কখনো এই বন্যা সহনশীল মাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকছে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা ভয়াল আকার ধারণ করছে। প্রায় ২৩০টি নদী একটি জটিল জালের মতো বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে, যার মধ্যে ৫৭টি নদী আন্তঃদেশীয়, যেগুলো চীন, ভুটান, নেপাল ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। নদীগুলোর প্রবাহের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি উল্লিখিত উজানের দেশগুলোতেই রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ এই নদীগুলোর পানি-বহির্গমন পথের শেষ প্রান্তে অবস্থিত হয়ে নদী-বাস্তুসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এর ফলে নদী, উপনদী, খাল ও অন্য চ্যানেলগুলোর নাব্য হ্রাস পাচ্ছে। ফলে অতিবৃষ্টিতে সহজেই পানি উপচিয়ে বন্যার আকার ধারণ করছে। নির্বিচার বন ধ্বংস হওয়ার ফলে বনভূমি থেকে প্রচুর মাটিক্ষয় হয়ে বৃষ্টির ঢলের সঙ্গে তা প্রবাহিত হয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশের নদীগুলোর নাব্য ইতোমধ্যেই কমিয়ে দিয়েছে অনেকখানি।

এ অবস্থা উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ যেমন নিতে হবে; তেমনি বন্যার তাৎক্ষণিক আঘাত থেকে বাঁচার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। দুর্গত মানুষ-পশুপাখি যেন আশ্রয় পায়; সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে, তা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের জোর দৃষ্টি প্রয়োজন।

লেখক : সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close