আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৯ মে, ২০১৮

যৌন হয়রানি

নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাবে পুলিশ

ভারতের কলকাতা শহরে যেসব নারী গণপরিবহনে যাতায়াত করেন, তাদের কাছে যৌন হেনস্তা প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। শুধু যে ভিড়েঠাসা গণপরিবহনে এটা হয়, তা নয়। ট্যাক্সি বা অ্যাপ-ক্যাব থেকে শুরু করে অটোরিকশায়ও নারীদের যৌন হেনস্তার ঘটনা সামনে আসছে নিয়মিত।

আগে নারীরা চুপচাপ মেনে নিলেও আজকাল বাড়ছে প্রতিবাদ। এখন কলকাতার পুলিশ বলছে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করবেন একজন নারী, সেই পাঠ দেবেন তারা।

বাসে-ট্রামে বা ট্রেনে কোনো না কোনোভাবে যৌন হেনস্তার শিকার হননি, এমন নারী অন্য অনেক শহরের মতো কলকাতাতেও খুঁজে পাওয়া কঠিন। কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত গণপরিবহন তিন চাকার অটোরিকশাতেও নারী যাত্রীরা মাঝে মাঝেই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। তাদের হেনস্তা যেমন হতে হয় সহযাত্রী পুরুষদের দ্বারা, তেমনি চালকদের বিরুদ্ধেও নারী যাত্রীদের যৌন হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। কয়েক দিন আগে এক সহযাত্রীর দ্বারা অটোরিকশায় হেনস্তার শিকার হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী স্নেহা নন্দী। বান্ধবীর সঙ্গে ডিনার সেরে বাড়ি ফেরার সময়ে যখন যাদবপুর থানার ঠিক সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, এক ব্যক্তি তাদের সিগারেট খাওয়া নিয়ে কটাক্ষের মধ্যে দিয়ে হেনস্তার শুরু। পরে সেই হেনস্তাকারী জোর করে উঠে পরেছিলেন একই অটোরিকশায়।

সেদিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে মিস নন্দী বিবিসিকে বলেন, ‘ওই লোকটিকে কয়েকবার বারণ করেছিলাম অসভ্যতা করতে। সে শোনেনি। উল্টো আমরা যে অটোতে উঠলাম, একরকম জোর করেই সে-ও উঠে পড়ল। খুব খারাপভাবে গায়ে হাত দিচ্ছিল। একটা সময়ে চালক তাকে সামনে নিজের পাশে নিয়ে যান। সেখান থেকেও সে সমানে কটু কথা বলে চলছিল।’

কলকাতা শহরে সম্প্রতি এরকম কয়েকটি যৌন হয়রানির ঘটনার পর এ নিয়ে নারীরা সরব হয়েছেন।

‘যখন সে বলে যে, আমাদের মতো বেশ্যা মেয়েদের সঙ্গে নাকি এরকম ব্যবহারই করা উচিত, তখন আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। পুলিশের একটা জিপ দেখে আমরা চেঁচামেচি করি। তখন অটোচালক ওই লোকটিকে নামিয়ে দেয়। আমরাও নামি’, বলেন তিনি।

তিনি জানান, রাতের বেলায় দুটি মেয়েকে রাস্তায় চেঁচামেচি করতে দেখেও প্রথমে কেউ এগিয়ে আসেনি। এমনকি পুলিশও নয়। অনেকক্ষণ পরে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায় থানায়।

দিন কয়েক আগেই চলন্ত বাসে প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন করার ঘটনা মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করে এক ছাত্রী। সেই ভিডিও দেখে এক মধ্য বয়সী ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। গত রোববার দক্ষিণ কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গড়িয়াহাট থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে অটোয় উঠে তিন সহযাত্রীর দ্বারা শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে এক নারীকে।

এক পর্যায়ে তিনি চলন্ত অটো থেকে লাফ দিয়ে নেমে তারপরে থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন। এখনো সেই অটোটিকে চিহ্নিত করা যায়নি, ধরা যায়নি হেনস্তাকারীদেরও। ওই অঞ্চলের অটোরিকশাগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় যে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত শ্রমিক ইউনিয়ন দ্বারা, তার সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ বলছিলেন, ‘যৌন হেনস্তা তো কেউই মেনে নেবেন না, আমরাও খুব কড়া এ ব্যাপারে। তবে এটাও ঘটনা যে, এই কলকাতা শহরেই নারীরা কিন্তু সামনের সিটে চালকের পাশে বসেই যাতায়াত করেন। ট্যাক্সিতে কিন্তু সেটা কখনো করতে দেখবেন না। তারা নিরাপদ মনে করেন বলেই তো চালকের পাশে বসেন। ঠিকই মাঝে মাঝে অভিযোগ ওঠে। সেগুলো বিক্ষিপ্ত ঘটনা। কার মনে যে কী আছে, সেটা তো আগে থেকে জানা যায় না। তবে অভিযোগ পেলেই আমরা শাস্তি দিই চালকদের।’ এবার আর পুলিশ বা অটো ইউনিয়নের শাস্তি দেওয়ার ওপরে যাতে নির্ভর না করতে হয়, ঘটনাস্থলে নিজেরাই যাতে আত্মরক্ষা করতে পারেন নারীরা, সেটাই শেখানো হবে শনিবার থেকে।

যৌন হেনস্তার হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ আজকাল অনেক স্কুল-কলেজেই দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশের এ ধরনের প্রচেষ্টা কতটা সুফল দেবে? নারী আন্দোলনের নেত্রী শ্বাশতী ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘কলকাতা পুলিশের এই উদ্যোগকে নিশ্চয়ই স্বাগত জানাব। তবে একইসঙ্গে এটাও বলব যে, নারীরা সেটা বাস্তবে কতটা ব্যবহার করতে পারবে, সেই মানসিক জোরটাও তৈরি করা দরকার। হেনস্তা তো তাদেরই করা হয়, যে নারী আত্মরক্ষা করতে পারবে না বলে হামলাকারী মনে করে! নারীরাও যদি এবার পাল্টা আঘাত করতে পারে, তাহলে হয়তো হেনস্তার ঘটনা কমবে।’ ‘পুলিশের আরো একটা বিষয়ের ওপরে নজর দেওয়া দরকার, যৌন হয়রানি বা হেনস্তার ঘটনা নিয়ে থানায় গেলে সেগুলো যেন গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়’, বলেন তিনি।

তবে নিজেই যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ছাত্রী স্নেহা নন্দী বলছিলেন, আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর আগে প্রয়োজন লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার জন্য সচেতনতা তৈরি করা। সেটা যেমন প্রয়োজন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, তেমনই প্রয়োজন পুলিশের মধ্যেও, বলেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist