নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ মার্চ, ২০২৪

গ্যাস সংকট কাটছে না শিগগিরই

গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় আবাসিক থেকে শিল্প সর্বত্র ক্ষোভ বাড়ছে। ইফতারের সময় গ্যাস না থাকায় অনেক এলাকায় চুলা জ্বলছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা। পাশাপাশি দেশীয় গ্যাসের উৎপাদনও কমেছে। ফলে গ্যাসের সংকট চলছে আবাসিক, শিল্প-কারখানা, সার ও বিদ্যুৎ খাতে। এতে অনেকেই তাদের ক্ষোভ ঝাড়ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা সাদেকুন নাহার দিলরুবা বলেন, গ্যাস সংকট জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ খুব কম থাকে। রমজানের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন রাত ১টার পর গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হয়। আবার ভোর ৪টার আগেই কমে যায়। প্রতি মাসে গ্যাসের জন্য ১ হাজার ৮০ টাকা বিল দিচ্ছি, কিন্তু সাহরি ও ইফতার রান্না করতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা থেকে স্থানীয় গ্যাসের ৫০ শতাংশের বেশি উৎপাদন করে শেভরন। গ্যাসক্ষেত্রটির ২৬টি কূপের উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।

ফলে কোনো বিকল্প না পেয়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশন ৬ ঘণ্টা বন্ধকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। প্রথম রোজায় সিএনজি ফিলিং স্টেশন বিকেল ৫ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বন্ধের আদেশ জারি করা হয়। ২৪ ঘণ্টা না গড়াতেই সিদ্ধান্ত বদলে বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধের আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু তাতেও খুব একটা পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে সিএনজি খাতে গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। সেটুকু বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

পেট্রোবাংলার (১৩ থেকে ১৪ মার্চ) দৈনিক গ্যাস সরবরাহ রিপোর্টে বলা হয়, ২৬৮১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর গ্যাস ফিল্ড থেকে ৮১৮ মিলিয়ন ঘনফুট, দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর ফিল্ড থেকে ১ হাজার ২৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করে সরবরাহ করা হয়েছে ৬২৩ মিলিয়ন ঘনফুট। আর চাহিদার নির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান ঘোষণা না করা হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার মিলিয়ন বলে বলা হয়।

গ্যাস সরবরাহ নিয়ে গত ১৩ মার্চ বিদ্যুৎ ভবন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পেট্রোংবাংলা এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, আমরা ২০ শতাংশ গ্যাস আমদানি করতাম। একটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) নিয়মিত সার্ভিসিংয়ে থাকায় গ্যাস সরবরাহ ১০ শতাংশ কমে গেছে। সার্ভিসিংয়ে থাকা এফএসআরইউ ৩০ মার্চের আগে আসবে না। এতে কিছুটা সংকট রয়ে গেছে।

আবাসিকে গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবাসিকে গ্যাস সংকট হলে এলপিজি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। যেহেতু বিকল্প রয়েছে, তাই আবাসিক নিয়ে আপাতত চিন্তা করছি না। আমরা চাচ্ছি বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে। তবে মার্চে বিদ্যুতে কিছুটা বিভ্রাট হতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে ১৩ মার্চ গ্যাস অভাবে ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ ছিল। আরো ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক উৎপাদন করেছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যানুযায়ী, ওই দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে মাত্র ৯০৮.১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চাহিদার অর্ধেকের মতো।

সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার (২৮ ডিসেম্বর ২০২৩) বিপিডিবি দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ন্যূনতম ১৫৪০ মিলিয়ন সরবরাহের কথা জানায়। ওই সভায় বিপিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছর সেচ মৌসুমে এপ্রিল মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। ২০২৪ সালের সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সামগ্রিক চাহিদা ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেচ খাতে মার্চে ১ হাজার ৯৪৯ মেগাওয়াট, এপ্রিল ও মে মাসে ২৫৯০ মেগাওয়াট হতে পারে।

গ্রীষ্ম মৌসুম এখনো সেভাবে তোপ দাগাতে শুরু করেনি। এখনই বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পারছে না। এপ্রিল নাগাদ সেচের চাহিদা আরো ৬০০ মেগাওয়াটের মতো বেড়ে যাবে। একইসঙ্গে ফ্যান ও এসির লোড যুক্ত হবে। একটি সুখবর হচ্ছে সার্ভিসিংয়ে থাকা সামিটের এফএসআরইউ এপ্রিল নাগাদ অপরেশনে চলে আসবে। তখন সরকার চাইলে দৈনিক আরো ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে দিতে পারবে। তবে সেখানে অনেক যদি এবং কিন্তু রয়েছে। একদিকে ডলার সংকট; অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close