লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

  ০৬ মে, ২০২৪

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে গণহত্যা দিবস পালন

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হলো শহীদ ‘শহীদ সাগর গণহত্যা দিবস’। ১৯৭১ সালের ৫ মে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে পাক হানারদের ব্রাশ ফায়ারে ৪২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহীদ হন। গতকাল রবিবার শহীদদের স্মৃতির স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় গণহত্যা দিবসটি পালন করা হয়।

গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে শহীদ সাগরের কাছে অবস্থিত শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। পরে আলোচনা সভা শেষে শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত হয়। এ সময় বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ খবির উদ্দিন মোল্যা, তৎকালীন প্রশাসক শহীদ লেফটেন্যান্ট আনোয়ারুল আজিমের ছেলে ডা. আনোয়ারুল ইকবাল মিতু, গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রোকসানা মোর্ত্তজা লিলি, মিলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ার, তৎকালীন মিলের সুপারিনটেডেন্ট শহীদ গুলজার হোসেন তালুকদারের ছেলে শাহীন আল হাসান, মিলের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন পিন্টু প্রমুখ। এ ছাড়া শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সুধীজনরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে এপ্রিলের শেষের দিকে পাক হানাদার বাহিনী পাবনার নগরবাড়ী দিয়ে উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করে। এদের একটি ছোট গ্রুপ ঈশ্বরদী থেকে বনপাড়া হয়ে রাজশাহীর দিকে যাত্রা শুরু করলে হানাদারদের প্রতিরোধে স্থানীয় মুক্তিপাগল জনতা ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকে। তারা ওই সুগার মিলের কর্তৃপক্ষের পরামর্শ ও সহযোগিতায় চিনি পরিবহনের দুটি রেলওয়াগন দিয়ে লেভেলক্রসিংয়ে বেরিকেট দেয়। বাধা পেয়ে হানাদাররা সেখানে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু করে। এর জবাবে মিলের সিকিউরিটির জন্য থাকা অস্ত্র ও মিলের ওয়ার্কশপে নির্মিত দেশীয় ধারাল অস্ত্র দিয়ে স্থানীয়রা প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। জনতার রুদ্ররূপ দেখে হানাদাররা ভয় পেয়ে যায়। রেলগেটের দক্ষিণ দিকের সুবিধাজনক স্থান থেকে স্থানীয়রা ইট-পাথর, বল্লম ও বাশের ফলা ছুড়তে থাকে। টিকতে না পেরে সাদা পোশাকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে চেষ্টা করে। বিভিন্ন আখের খেত থেকে জীবিত অবস্থায় কয়েকজন হানাদার সদস্যকে ধরে আনা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন মেজর রাজা আসলাম খান ও সুবেদার গুলবাহার। মুক্তিকামী জনতা তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে হানাদাররা ফের চলে আসে লালপুরে। তারা গাড়ি বাইরে রেখে মিলে প্রবেশ করেই মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একত্রিত করে। মিলের ভেতরে গোপাল সাগর নামের একটি পুকুরের পাড়ে তাদের ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close