টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ২৫ মে, ২০২৪

ডায়াবেটিক ধান চাষে কৃষকরা সফল

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ডায়াবেটিক ধান চাষ করে সফল হয়েছেন সেখানকার কৃষকরা। ডায়াবেটিস রোগীর কথা চিন্তা করে স্বল্প কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন পুষ্টিকর ব্রি ধান-১০৫ ‘ডায়াবেটিক ধান’ উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। নতুন এই ধান চাষ করে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। যার বাজারমূল্য বেশিও পাওয়া যাবে। এই ধান ভবিষ্যতে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে দাবি কৃষি বিজ্ঞানীদের।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রি ধান-১০৫ অন্য জাতের ধান গাছের চেয়ে বৈশিষ্ট্যগতভাবে কিছুটা আলাদা। সবুজ ও খাড়া ডিগ পাতা আর মাঝারি লম্বা ও চিকন ধানের দানা। এটি স্বল্প কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন পুষ্টিকর ধান। ডায়াবেটিক রোগীদের খাবারের জন্য উপযোগী, যা দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এর বীজ কৃষক নিজেরাই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই জাতের ধান প্রথমবারের মতো প্রদর্শনী প্লট হিসেবে চাষ হয়েছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামের মাঠে। দুজন কৃষক এই ধান চাষ করেছেন। ধান কাটা উপলক্ষে সম্প্রতি মুশুদ্দির বটতলা গ্রামের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় মাঠ দিবস। মাঠ দিবসে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ডায়াবেটিক ধান আবাদকারী মুশুদ্দি গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শে ব্রি ধান- ১০৫ প্রদর্শনী প্লট হিসেবে আবাদ করেছি। এই ধানে রোগবালাই নেই বললেই চলে। একই খরচে অন্য জাতের চেয়ে এই ধানের ফলনও বেশি। বিঘাপ্রতি ২৮ মণ (কাঁচা) ফলন পেয়েছি।’

অপর কৃষক গোলাম মোস্তাফা ভুট্টু বলেন, ‘নতুন এই জাতের ধানের ফলন খুবই ভালো। গড়ে বিঘাপ্রতি ২৯ মণ (কাঁচা) পেয়েছি। গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এই ধান আমাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবেন। তারা নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এখন পর্যন্ত এ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি।

কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান বলেন, ধান চাষে এই অঞ্চলটি খুবই উপযোগী। আমরা খেতে গিয়ে নতুন জাতের এই ধান চাষিদের সার্বিক পরামর্শ দিয়েছি। পর্যাপ্ত বীজ পেলে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।

ধান গবেষণার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমেনা খাতুন বলেন, দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ডায়াবেটিস রোগীর কথা চিন্তা করে ব্রি ধান-১০৫ ‘ডায়াবেটিক ধান’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি বোরো মৌসুমের একটি কম জিআই সম্পন্ন, রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ রোধক ধান। গড় ফলন হেক্টরে ৭ দশমিক ৬ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এর জীবনকাল ১৪৮ দিন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর বলেন, দেশে যেন কখনো খাদ্য ঘাটতি দেখা না দেয়, সেজন্য উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনে গবেষণায় জোর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-১০৫ থেকে পাওয়া চালে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম এবং সে কারণেই এটিকে ‘ডায়াবেটিক ধান’ বলা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close