ঢাবি প্রতিনিধি

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

গরমে দুর্বিষহ গণরুম

এখন মধ্য বৈশাখ। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। এ বছরের তাপমাত্রা বিগত সময়ের রেকর্ড ভেঙেছে। সারা দেশে কোথাও কোথাও অতি তীব্র, কোথাও কোথাও তীব্র এবং কিছু কিছু জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। বাতাসে গরমের হালকা। গরমে হা-হুতাস করছে মানুষ ও প্রাণিকুল। বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। এ খরতাপের কারণে স্কুল-কলেজ সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেওয়া হচ্ছে অনলাইন ক্লাস। এই গরমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের অবস্থা নাজুক হলেও, সবচেয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমের শিক্ষার্থীরা।

ঢাবির হলগুলোয় আবাসিক সংকট থাকার কারণে সৃষ্টি হয়েছে গণরুম। গণরুমগুলোয় সাধারণত প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী থাকেন। হলের আবাসিক রুমে সাধারণত আট, চার, দুজন করে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

আর গণরুমে থাকেন গাদাগাদি করে। আটজনের জায়গায় থাকছেন ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী। আবার কোনো কোনো হলে সেই সংখ্যা অর্ধশতাধিক ছাড়িয়ে যায়। বিজয় একাত্তর হলের একটি গণরুমেই থাকছে প্রায়ই ২০০ শিক্ষার্থী। এই তীব্র গরমে গণরুমগুলোয় নেই পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা। এভাবেই প্রচণ্ড গরমে গাদাগাদি করে থাকা শিক্ষার্থীরা পার করছেন দুর্বিষহ দিনরাত।

সরেজমিনে হলের গণরুম ঘুরে দেখা যায়, গণরুমগুলোর চারিদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নেই পর্যাপ্ত আলো। বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই। নেই পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা। তার ওপর রয়েছে ছারপোকার উপদ্রব।

বিজয় একাত্তর হলের গণরুমের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তন্ময় জানায়, এ বছর এত গরম পড়বে এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে সব ক্লাস নেবে আগে জানলে ঈদের পর এত তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে আসতাম না। যতদিন গরম থাকত ততদিন বাড়িতে বসেই অনলাইনে ক্লাস করতাম। বাড়িতে থাকলে গণরুমের এই দুর্বিষহ কষ্ট সহ্য করতে হতো না।

কবি জসিম উদ্দিন হলের আরেক শিক্ষার্থী শান্ত আলম বলেন, দিনের বেশির ভাগ সময় গণরুমের বাইরে থাকি। রাতে যেই সময়ই রুমে প্রবেশ করি তখন মনে হয় যেন গরম বাতাস আঁকড়ে ধরছে। প্রতিদিন তিন-চারবার করে গোসল করেও টেকা যাচ্ছে না এই গরমে।

হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলে আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী তৌফিক ইকবাল জানান, রুমের ফ্যানের বাতাস থেকে যেন গরম হাওয়া বের হচ্ছে। রুমের ছাদে পানি ঢেলেও ঠাণ্ডা করা যাচ্ছে না। এত গরমে কোনোভাবে রুমে অবস্থান করা যাচ্ছে না।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের টিনশেডের নিচে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, একে তো এবছর প্রচুর গরম তার ওপর আমরা থাকি টিনশেডের নিচে যার ফলে দিনের বেলায় রুমে থাকা একদম মুশকিল। তাই সারা দিন লাইব্রেরিতে থাকি আর রাতে রুমে গরম সহ্য না করতে পারলে মসজিদে গিয়ে ঘুমাই।

বিজয় একাত্তর হলের আরেক শিক্ষার্থী আকতারুল হামিদ জানান, হলগুলোয় সংকীর্ণ জায়গায় অনেক ছাত্রের বসবাস। ফলে আবাসন সংকটের পাশাপাশি পড়াশোনার পরিবেশ পাওয়া যায় না। হলের রিডিংরুমের সংখ্যাও কম। অনেক সময় সকালে পরীক্ষা থাকলেও অনেকে রিডিংরুমে পড়ার জন্য ন্যূনতম জায়গাও পান না। পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটে। এদিকে হলের গণরুমগুলোয় কাপড়-চোপড়, স্যান্ডেল-জুতাসহ নিজের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের কোনো নিরাপত্তা নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close