মোনোয়ার হোসেন

  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাঘ দিল ডিমে তা

এক জঙ্গলে বাস করত এক বাঘ। পাশে ছিল নদী। নদীতে বাস করত এক কুমির। বাঘ আর কুমিরের ছিল গলায় গলায় ভাব। একজন আরেকজনকে বন্ধু বলে ডাকত। কুমির নদীতে বড় কোনো প্রাণী শিকার করলে বাঘকে দাওয়াত করত। ডাঙায় বসে দুই বন্ধু গল্প করতে করতে কুড়মুড় করে শিকারের হাঁড় চিবাত। বাঘও কম যেত না। কোনো প্রাণী শিকার করলে কুমিরকে দাওয়াত দিত। বাঘের জন্মদিন। কুমির ভাবল, বন্ধুর জন্মদিনে ভালো একটা উপহার দিতে হবে। কিন্তু কী উপহার দেবে সে? হঠাৎ মনে পড়ল হরিণের কথা। বন্ধুর তো হরিণের মাংস খুব প্রিয়। ঠিক করল, জন্মদিনে বন্ধুকে একটা হরিণ উপহার দেবে সে। নদীতে বুক সমান পানি।

নদীর ওপারে মাঠ। মাঠে সুন্দর সুন্দর কচি ঘাস। হরিণ প্রতিদিন দল বেঁধে সাঁতার কেটে নদীর ওপারে যায়। মাঠের কচি ঘাস খায়। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসে। কুমির ভাবল, এটাই সুযোগ! হরিণ সাঁতার কেটে নদী পার হওয়ার সময় একটা হৃষ্টপুষ্ট হরিণের পা টেনে ধরল সে। হৃষ্টপুষ্ট হরিণ দেখে বাঘ তো মহাখুশি! রান খেতে খেতে বলল, বন্ধু, আমার একটা বড় ইচ্ছে আছে। কুমির বলল, কী ইচ্ছে? তোমার পিঠে বসে ঘুরে ঘুরে নদী দেখব।

কুমির হেসে বলল, এ আর এমন কী ইচ্ছে! তুমি আমার পিঠে বস, আমি এক্ষণি তোমাকে নদী দেখাচ্ছি। বাঘ কুমিরের পিঠে বসল। কুমির ঘুরে ঘুরে বাঘকে নদী দেখাল। বাঘ পুলকিত। মহাখুশি। এলো কার্তিক মাস। কুমির নদীর তীরে এসে ডাঙায় মাটি খুড়ে অনেকগুলো ডিম পাড়ল। তারপর সেগুলো মাটি দিয়ে ঢেকে দিল। একটা ডিম মাটিতে ঢাকা পড়ল না। মাটির ওপর পড়ে রইল। বাঘ বন্ধুর জন্য একটা বুনোষাঁড় শিকার করে এসে দেখল, বন্ধু কুমির মাটিতে নিথর পড়ে আছে। নড়াচড়া করছে না। বাঘের বুকটা ধক করে উঠল। কী হলো বন্ধুর?

কাছে এসে ধাক্কা দিল। কুমির নড়ছে না। মরে গেছে। পাশে একটা ডিম পড়ে আছে। নিশ্চয় এটা বন্ধুর ডিমÑ বাঘ ভাবল। সে থাবা দিয়ে মাটি খুঁড়ে ডিমটা মাটিতে পুতে দিল। তারপর ডিমের ওপর বসে তা দিতে লাগল।

বনের সব পশুপাখিরা অবাক! বাঘ দিনের পর দিন নদীর তীরে ওভাবে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে কেন? সাহস করে প্রথমে এল শেয়াল। বলল, মামা! বাঘ একটা থাবা মুখের কাছে এনে বললÑ চুপ, কথা বল না। শেয়াল অবাক। ফিসফিস করে বলল, কেন মামা? তা দিচ্ছি। তা দিচ্ছো! কী তা দিচ্ছো? ডিম। হো হো করে হেসে উঠল শেয়াল। তুমি আজকাল ডিমও পাড়ছ নাকি মামা!

শেয়ালের উপহাস শুনে বাঘের রাগ ওঠে। রাগে শরীর কাঁপে। অন্যসময় হলে ঘাড় ধরে মটকে দিত শেয়ালের। কিন্তু এখন সে ডিমে তা দিচ্ছে বলে দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে রাগটা দমাল। শেয়াল বনে গিয়ে সবাইকে বলল বাঘের কা-। বলল, বাঘ মামা ওখানে বসে ডিমে তা দিচ্ছেন। সবাই অবাক! বলো কী! হুম। কীসের ডিম? কিসের তা? বাঘ মামা আজকাল ডিম পাড়ে কিনা! বলে হাসতে হাসতে চলে গেল শেয়াল। শেয়ালের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারল না কেউ।

সবাই বলল, চলো তো আমরা গিয়ে দেখি। চলো চলো। সবাই এলো নদীর তীরে। হাতি বলল, বাঘ ভাই! বাঘ আগের মতো থাবা মুখের কাছে এনে বলল, চুপ, চুপ। ডিমে তা দিচ্ছি। কথা বললে ডিম ঘুলঘুলি হয়ে যাবে। সব পশুরা অবাক! মুখ হা করে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। এগারো সপ্তাহ পর বাঘ শুনলো মাটির নিচে কি যেন কিচ কিচ শব্দ করছে। নিশ্চয় কুমিরছানা। তাড়াতাড়ি ডিমের ওপরের মাটি সরিয়ে ফেলল সে। আর সঙ্গে সঙ্গে কিচ কিচ করতে করতে মাটির ভেতর থেকে এলো একে একে ত্রিশটা কুমিরছানা! বাঘের চোখ চড়কগাছ। এত্তগুলো কুমিরছানা! তাড়াতাড়ি মুখে নিয়ে প্রতিটি কুমিরছানাকে নদীর পানিতে ছেড়ে দিল সে। কুমিরছানাদের একটু বুঝতে দিল না তাদের মা নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close