আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সু চির বক্তব্যের নিন্দা বিশ্বনেতাদের

গত মঙ্গলবার সকালে জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি, তার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতার অনেকেই। সু চির ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বনেতাদের প্রত্যাশা ছিল, ভয়াবহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি আশাব্যঞ্জক কিছু বলবেন। কিন্তু তা না করে তিনি কৌশলে দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বরতাকেই সমর্থন করেছেন। এমনকি সমালোকদের ‘কেয়ার করি না’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সু চির এ ভাষণে হতাশ করা বক্তব্যের সমালোচনা করেন অনেকেই। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রেক্স টিলারসন ফোন করে সু চিকে বলেন, ‘যাচাইয়ের পর শরণার্থীরা ফিরতে সক্ষম হবে-এমন বক্তব্যকে তিনি (টিলারসন) স্বাগত জানান। তবে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সহিংসতার খবরে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বাধা আছে তা অপসারণের আহ্বান জানান।’ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে এ তথ্য জানানো হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘সেনা অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে। সেই সঙ্গে জাতিগোষ্ঠী নিশ্চিহ্নকরণ বন্ধে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। সহিংসতা বন্ধ এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছানো নিশ্চিতকরণে ইতোমধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিয়ো গুতেরেস রোহিঙ্গাদের করুণ অবস্থা উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চলমান সংকটে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তা না হলে মিয়ানমারে যা ঘটছে তাতে মানবিক বিপর্যয়ের আরেকটি কালো অধ্যায় রচিত হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

এদিকে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মিয়ানমার সফরের যে আহ্বান সু চি জানিয়েছেন তাকে ‘এক ধাপ অগ্রগতি’ হিসেবে দেখছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) এক মুখপাত্র। কারণ এর আগে ঘটনাস্থলে কূটনীতিকদের যেতে দেয়নি মিয়ানমার। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, চলমান সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির অংশ হিসেবে তিনি দেশটির সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া বন্ধের ঘোষণা দেন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সু চির বক্তব্য কিঞ্চিৎ সত্যের সঙ্গে মিথ্যার মিশ্রণ ছাড়া কিছুই নয় এবং তার বক্তব্যে ভিকটিমদেরই দোষী করা হয়েছে। তা ছাড়া সেনাবাহিনীর সহিংসতাকে তিনি এমনভাবে এড়িয়ে গেছেন যা ‘বালুর মধ্যে মাথা গোঁজানো’র মতো। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। গোমেজ বলেন, ‘অং সান সু চি তার বক্তব্যের মাধ্যমে আবার দেখিয়েছেন, তিনি ও তার সরকার রাখাইন রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতির বিষয়ে বালুতে তাদের মাথা গুঁজে রেখেছেন।’

জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফের কর্মকর্তা পল অ্যাডওয়ার্ডস মিজ সু চির বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমাদের কেউই আসলে জানি না রাখাইনে কী ঘটছে। কারণ আমরা সেখানে যেতে পারছি না।’ জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে আসলেই কী ঘটছে, সেটা তাদের কর্মকর্তারা ‘নিজের চোখে’ দেখতে চান।

অন্যদিকে, রাখাইন রাজ্য সরকারের সেক্রেটারি তিন মং সোয়ে মিজ সু চির ভাষণকে অত্যন্ত ‘স্বচ্ছ’ উল্লেখ করে এর প্রশংসা করেছেন। তবে রাখাইনে মুসলমান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি যেসব অঙ্গীকার করেছেন সে ব্যাপারে তিনি খুব একটা আশাবাদী নন। তবে চীন ও রাশিয়ার কূটনীতিকরা অং সান সু চির ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছেন। মিয়ানমারে চীনা রাষ্ট্রদূত হং লিয়াং বলেছেন, ‘চীনের অবস্থান খুব পরিষ্কার। রাখাইনে শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে আমরা তাকে সমর্থন করছি।’ মিয়ানমারে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই এ লিস্তোপাদভ বলেছেন, ‘রাখাইনে জাতিগত নিধন অভিযান, গণহত্যা-এসবের নিন্দা জানানোর মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।

সু চির ভাষণ মিথ্যাচারে ভরা : রোহিঙ্গা নেতা

রাখাইন সংকট নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি প্রকৃত সত্য লুকিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন বলে দাবি করেছেন রোহিঙ্গাদের নেতা, ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিলের (ইআরসি) প্রতিষ্ঠাতা ইব্রাহিম মোহাম্মদ। তিনি বলেছেন, রাখাইনে সেনাবাহিনী যে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে, তা আড়াল করার প্রয়াস চালিয়েছেন সু চি, দিয়েছেন নানা ‘মিথ্যা তথ্য’। রোহিঙ্গাদের পক্ষে ইউরোপে জনমত গঠনে সক্রিয় ইআরসির নেতা ইব্রাহিম মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা যা ধারণা করেছিলাম, তাই ঘটেছে। প্রথমেই তিনি ছায়া দিয়েছেন সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীকে, যারা গণহত্যা ঘটাচ্ছে। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকার কোনো নিন্দা জানাননি; উপরন্তু দায়ী করেছেন রোহিঙ্গাদের।’ তিনি বলেন, ‘সু চি তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বিসর্জন দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধান আসলে করবেন না।”

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist