কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ২৬ জুলাই, ২০১৭

কক্সবাজারে কাটা পাহাড়ধসে দুই শিশুসহ নিহত ৪

চারদিনের টানা বৃষ্টিপাতে কক্সবাজারে আবারো দুটি পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো চারজন। সোমবার রাত ১২টা থেকে দেড়টার মধ্যে কক্সবাজারের লাইট হাউস এলাকা ও রামু উপজেলার চেইন্দা এলাকায় পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে। এর কয়েকটি আগে কক্সবাজারের হিমছড়িতে ঝরণা দেখতে গিয়ে পাহাড়ধসে মারা গেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র রিদুয়ানুল আলম সাব্বির।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি রণজিত কুমার বড়–য়া জানান, সোমবার গভীর রাতে কক্সবাজার পৌরসভার লাইট হাউস এলাকায় পাহাড়ধসে এক তলা একটি ভবনের দেয়াল পড়ে দুই তরুণ মারা যান। তারা হলেনÑ কক্সাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ধামনখালী গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২৪) ও চৌফলদ-ী ইউনিয়নের মামুনপাড়ার মো. শাহেদ (১৬)। এ সময় আহত হয়েছে নিহত সাদ্দামের ছোট ভাই আরাফাত উদ্দিন (১৬) ও রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের গোয়ালিয়াপালং গ্রামের দেলোয়ার হোসেন (১৭)। ওই চারজন ১০০ ফুট উঁচু লাইট হাউস পাহাড়ের খাদে তৈরি একতলা ভবনের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন। চারজনই কক্সবাজার সৈকতের হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের কর্মচারী।

পাকা বাড়িটির মালিক পিএমখালী এলাকার জনৈক অ্যাডভোকেট মহি উদ্দিন বলে জানা গেছে। ওই একতলা ভবনের চারটি কক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষে মা ও বোনকে নিয়ে ভাড়া থাকেন বাবুল তাহের। তিনি বলেন, পাহাড়ধসে পড়ার সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি করে স্থানীয় লোকজন জড়ো করে তাদেরকে উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় যুবক নাফিস ইকবাল বলেন, রাত সোয়া ১২টার দিকে পাহাড়ের একাংশ ধসে ওই পাকা ভবনের এক পাশে পড়ে। এ সময় চার হোটেল কর্মচারী মাটিচাপা পড়েন। তিনিসহ স্থানীয় ১২ থেকে ১৩ জন যুবক গিয়ে মাটি সরিয়ে তাদের উদ্ধার করেন এবং দ্রুত কক্সাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় চিকিৎসক সাদ্দাম ও মো. শাহেদকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরো বলেন, মাটিচাপা পড়া থেকে উদ্ধার করতে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগে। কিন্তু দমকল বাহিনীকে একাধিকবার জানালেও তারা উদ্ধারে আসেনি।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই শাহেদের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে আসার ১০ মিনিট পর মারা গেছেন সাদ্দাম হোসেন। আহত দেলোয়ার হোসেন ও আরাফাত উদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, উঁচু লাইট হাউস পাহাড় কেটে একতলা পাকা ভবনটি তৈরি হয়েছিল। এই ভবনে চারটি কক্ষে মাসিক তিন হাজার টাকা ভাড়ায় থাকত চারটি পরিবার। এরমধ্যে পাহাড়ের পাশের কক্ষটিতে থাকত হতাহত হওয়া চার হোটেল কর্মচারী। ওই বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া পাহাড়ের নিচে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এক ডজনেরও বেশি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। ফের পাহাড়ধস হলে সেখানে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই।

লাইট হাউস এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, একই সময়ে মমতাজ উদ্দিনের বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া পশ্চিম পাশের গিয়াস উদ্দিন ও শাহনেওয়াজের বাড়িতেও পাহাড়ধসে পড়েছে। সেখানে বাড়িঘরের ক্ষতি হলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পঙ্কজ বড়–য়া বলেন, গত এক সপ্তাহে তিনবার গিয়ে লাইট হাউস পাহাড়সহ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে দেড় হাজার লোককে সরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু তারা আবার পাহাড়ে বসতি শুরু করেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি ভারী হলেই লোকজনকে সরিয়ে আনা হয়। কিন্তু কেউ সহজে আসতে চায় না। এখন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী লোকজনকে জোর করে সরিয়ে আনা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের লাইট হাউস পাড়া, বাহারছড়ার কবরস্থানপাড়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে পাঁচ শতাধিক লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করতে দেওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের চেইন্দা এলাকার (রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন) কাইম্যারঘোনা পাহাড়ধসে এক পরিবারের দুই শিশু মারা গেছে। তারা হলোÑ মো. রায়হান (৫) ও সায়মা আকতার (৩)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহত শিশুদের বাবা জিয়াউর রহমান (৩৮) ও মা আনারকলী (৩০)।

স্থানীয় দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভুট্টু বলেন, রাত দেড়টার দিকে বিকট শব্দে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে সৌদি প্রবাসী জিয়াউর রহমানের টিনশেড বাড়িতে। এ সময় জিয়াউর রহমানের পরিবার ঘুমিয়ে ছিল। পরে দমকল বাহিনী ও স্থানীয় লোকজন মাটি সরিয়ে দুই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে। তাদের মা-বাবাকে কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, ৪Ñ৫ বছর আগে পাহাড় কেটে জিয়াউর রহমানের বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। ওই বাড়ির পেছনের পাহাড়ের উচ্চতা ৩৫ ফুটের মতো। পাহাড়টি বাড়ির পেছনে অবস্থিত। কক্সবাজার দমকল বাহিনীর সহকারী উপপরিচালক আবদুল মালেক বলেন, পাহাড় ধসের খবর পেয়ে তারা গভীর রাতে চেইন্দা এলাকায় পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালান। এ সময় মাটি সরিয়ে দুই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম মজুমদার বলেন, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে শহরের বিভিন্ন পাহাড়ে ধসের ঘটনা ঘটছে। এসব পাহাড় থেকে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist