টেস্টে উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আজ শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ ম্যাচ টেস্ট সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ম্যাচটি শুরু হবে সকাল ১০টায়। টেস্ট শুরুর আগে এরই মধ্যে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি জিতলেও একই ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেন স্বাগতিক টাইগাররা। ২০২২ সালে ভারতের কাছে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর ২০২৩ সালে কোনো টেস্ট সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে নিজেদের প্রথম টেস্ট সিরিজে অপরাজিত থাকার রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখতে চাইবেন টাইগাররা। গত বছর ঘরের মাঠে খেলা তিন সিরিজের মধ্যে দুটিতে জয় পায় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ টেস্ট সিরিজে জয় পেলেও শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করেন টাইগাররা। সর্বশেষ সিরিজগুলোর ফল বিশ্লেষণে স্পষ্টতই টেস্টে বাংলাদেশের উন্নতির চিত্র ফুটে উঠেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজটিই হবে নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তর প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট।

গত বছর ঘরের মাঠে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শান্তর অধীনে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে তিন ফরম্যাটে দায়িত্ব নেওয়ার পর টেস্ট ফরম্যাটে দেশের বাইরে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমানতালে লড়াই করা এবং ঘরের মাঠে যতটা সম্ভব ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য স্থির করেন শান্ত। ঘরের মাঠে লঙ্কানদের বিপক্ষে কখনো টেস্ট জিততে পারেননি টাইগাররা। তাই স্বাভাবিকভাবেই এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের জন্য নিজেদের সেরাটা উজার করে দেবে বাংলাদেশ।

এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৪টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছেন টাইগাররা। ২০১৭ সালে কলম্বোয় নিজেদের শততম টেস্টে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ও শেষ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবিস্মরণীয় ওই টেস্ট জয়ের দুই নায়ক সাকিব এবং তামিম ইকবালকে আজকের ম্যাচে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। চোখের সমস্যার কারণে আগেই সিরিজ থেকে সরে গেছেন সাকিব। আর তামিমের আন্তর্জাতিক ভবিষ্যৎ প্রায় শেষের দিকে। একমাত্র জয়ের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮টিতে হার এবং ৫টি টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে লঙ্কানদের বিপক্ষে ১০ বার মুখোমুখি হয়েছেন টাইগাররা। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার জয় ৭টিতে এবং বাকি ৩ ম্যাচ ড্র হয়।

এজন্য ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়খরা ঘোচানোর পালা বাংলাদেশের। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের তারুণ্যনির্ভর দলটির জন্য কাজটি বেশ কঠিনই হবে। বুড়া আঙুলের ইনজুরিতে সিনিয়র খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিমকে শেষ মুহূর্তে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব-তামিমের অনুপস্থিতি এবং টেস্ট থেকে আগেই অবসর নেওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ না থাকায় বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে প্রধান বড় ভরসা ছিলেন মুশফিক। ওয়ানডেতে বিপর্যয়ের মুখ থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে বড় অবদান রাখেন মুশফিক। তার অভিজ্ঞতা টেস্ট সিরিজেও বড় ভূমিকা রাখতে পারত।

মুশফিকের জায়গায় টেস্ট দলে নেওয়া হয়েছে সাদা বলের ক্রিকেটে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া তাওহীদ হৃদয়কে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তরুণদের চেয়ে অভিজ্ঞতা অনেক বেশি প্রয়োজন। মুশফিকুরের শূন্যস্থান হৃদয় কীভাবে পূরণ করতে পারেন, সেটিই দেখার বিষয়। বাংলাদেশ টেস্ট দলে নতুন মুখ হিসেবে আছেন এ মুহূর্তে দেশের দ্রুততম পেসার হিসেবে পরিচিত পাওয়া নাহিদ রানা। তিনি বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারের গতির বোলিং করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চার পেসার নিয়ে বাংলাদেশ দল সাজানোয় ধারণা করা হচ্ছে। সিলেটের উইকেট পেস সহায়ক হবে। অন্যদিকে দলে সেরামানের স্পিনারদেরই রেখেছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সফরকারীদের শক্তির জায়গাকে কাজে লাগাতে দেবে না বাংলাদেশ। গত দুই সফরে বাংলাদেশকে বেকাদায় ফেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা।

বাংলাদেশ দল : নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, লিটন দাস, মুমিনুল হক, তাওহীদ হৃদয়, শাহাদাত হোসেন দিপু, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, মুশফিক হাসান ও নাহিদ রানা।

শ্রীলঙ্কা দল : ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (অধিনায়ক), কুশল মেন্ডিস, দিমুথ করুনারত্নে, নিশান মাদুশকা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ, দীনেশ চান্দিমাল, সাদিরা সামারাবিক্রমা, কামিন্দু মেন্ডিস, লাহিরু উদারা, প্রবাথ জয়সুরিয়া, রমেশ মেন্ডিস, নিশান পেইরিস, কাসুন রাজিথা, বিশ্ব ফার্নান্দো, লাহিরু কুমারা ও চামিকা গুনাসেকারা।

"