নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ মার্চ, ২০২৪

সোমালিয়ায় জাহাজ জিম্মির ৯ দিন

মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ দস্যুদের

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং ২৩ নাবিককে জিম্মি করে রাখা সোমালি জলদস্যুরা প্রথমবারের মতো মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ৯ দিনের মাথায় জলদস্যুরা গতকাল বুধবার ‘তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে’ জাহাজের মূল মালিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল মিজানুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুরা প্রথমবারের মতো তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে। তবে তারা কোনো মুক্তিপণ চায়নি। এখন মূলত যোগাযোগ স্থাপন হলো। পরবর্তী আলোচনায় মুক্তিপণের বিষয়টি হয়ত আসবে।

এই কয়েক দিনে এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের সঙ্গেই কেবল যোগাযোগ হচ্ছিল বলে মালিকপক্ষ জানাচ্ছিল। জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় একটা অনিশ্চিয়তাও ভর করছিল। এরই মধ্যে জাহাজটি নিয়ে কয়েকবার অবস্থান পাল্টেছে জলদস্যুরা।

এদিকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটি এবং জিম্মি নাবিকদের জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করতে সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে পান্টল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশের বরাতে রয়টার্সে খবর এসেছে।

সোমালিয়ার একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডে রয়েছে অনেক জলদস্যু দলের ঘাঁটি। ওই এলাকার পুলিশ বাহিনী বলেছে, এমভি আবদুল্লাহকে দখল করে থাকা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের একটি পরিকল্পনা তারা জানতে পেরেছে। সে কারণে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং অভিযানে অংশ নিতেও প্রস্তুত রয়েছে।

পান্টল্যান্ডের নৌপরিবহনমন্ত্রী আহমেদ ইয়াসিন সালাহ বিবিসি সোমালিয়াকে বলেছেন, এমভি রুয়েনের মতো আবদুল্লাহকেও জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত করতে অভিযানের পরিকল্পনা চলছে। পান্টল্যান্ডের উপকূলকে জাহাজ দখল করে দস্যুবৃত্তির কাজে ব্যবহারের সুযোগ আমরা দিতে পারি না। আমাদের বন্ধুদের আমরা বলেছি, জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধির কোনো ধরনের সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, যোগাযোগ শুরু হওয়ায় এখন জলদস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করতে পারে। দর-কষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছালে জাহাজসহ নাবিকদের মুক্তি মিলতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, যোগাযোগ শুরুর দিকটি ইতিবাচক। মালিকপক্ষ ও বিমাকারী প্রতিষ্ঠান জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমঝোতায় পৌঁছাবে বলে তিনি আশা করছেন।

১২ মার্চ সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে জলদস্যুরা। তিন দিনের মাথায় নাবিকসহ জিম্মি জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দফা স্থান পরিবর্তন করে জাহাজটি গত শুক্রবার সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূলের কাছে নোঙর করে রাখে জলদস্যুরা।

প্রায় ১৩ বছর আগে একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মণি ছিনতাই করেছিল দস্যুরা। সেবার জলদস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা করে জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে ১০০ দিন লেগেছিল।

এবার অবশ্য এত দিন সময় নাও লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আগেরবার বাংলাদেশের কোনো জাহাজ প্রথম ছিনতাই হয়েছিল। ফলে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ, দর-কষাকষির মতো বিষয়গুলো মালিকপক্ষসহ সবার জন্য নতুন ছিল। এতে সময় লেগেছিল অনেক। তবে এবার আগের অভিজ্ঞতা পুঁজি করে জাহাজ ছিনতাই হওয়ার পর মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে কাজ প্রায় গুছিয়ে নিয়ে আসে মালিকপক্ষ।

এদিকে, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেছেন, ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুদের কবলেপড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং ওই জাহাজে থাকা এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের উদ্ধার বিষয়ে ইতিবাচনক আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই নাবিক-ক্রুদের উদ্ধারের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা তাদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তারা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরীর মতে, এখন জাহাজ পুরোপুরি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। এমন অবস্থায় অভিযান পরিচালনা করলে দস্যুরা ছেড়ে কথা বলবে না। তারাও আক্রমণ করবে। এমনকি নাবিকদের মেরে ফেলতে পারে তারা। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন বুঝিয়ে দিচ্ছে দস্যুরা নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে জাহাজটিকে নিতে এতবার অবস্থান বদলেছে। ফলে এমন অবস্থায় হুট করেই অভিযান পরিচালনা করা ঠিক হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close