প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৬ মার্চ, ২০২৪

এমভি আবদুল্লাহকে নজরে রাখছে ভারতের যুদ্ধজাহাজ

জিম্মি জাহাজটি ফের সরিয়েছে দস্যুরা, নিয়ন্ত্রণে ১২ দস্যু, ক্রুরা অক্ষত

সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তা করতে কাছাকাছি এলাকায় একটি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ ও একটি দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল উড়োজাহাজ অবস্থান করছে। ভারতের নৌবাহিনী গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ক্রুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ কাছাকাছি এলাকায় উপস্থিত আছে। গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জাহাজের ২৩ ক্রুদের জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। গত বৃহস্পতিবার জাহাজটিকে সোমালিয়ার গারাকাদ বন্দর থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করা হয়।

ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, খবর পেয়ে গত মঙ্গলবারই নৌবাহিনী দূরপাল্লার মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্র্যাফ্ট এলআরএমপি পি-৮১ মোতায়েন করে। ‘এয়ারক্র্যাফ্টটি জাহাজের ক্রুদের অবস্থা জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করে। তবে জাহাজ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি,’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, ‘পরে ভারতীয় নৌবাহিনী একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে। সেটি ওই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তায় কাজ করছে। যুদ্ধজাহাজটি বৃহস্পতিবার জিম্মি জাহাজটিকে নজরদারি করতে জাহাজটিকে নজরদারি করতে শুরু করে।’

নৌবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাণিজ্যিক জাহাজের ক্রুদের (বাংলাদেশি নাগরিক) নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং জাহাজটি সোমালিয়ার জলসীমায় পৌঁছানো পর্যন্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের কাছাকাছি অবস্থানেই ছিল। পশ্চিম ভারত মহাসাগরে বেশ কিছু বাণিজ্য জাহাজের ওপর হামলার পর ভারতীয় নৌবাহিনী গত কয়েক সপ্তাহে ওই অঞ্চলে নজরদারি বাড়িয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে সোমালিয়ার পূর্ব উপকূলে ইরানি পতাকাবাহী মাছ ধরার জাহাজে জলদস্যুর আক্রমণ ব্যর্থ করে দেয় ভারতীয় নৌবাহিনী। ওই জাহাজে ১১ ইরানি ও ৮ পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন বলে জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে জাহাজটির মালিকপক্ষ জানায়, সোমালিয়ার উপকূলে নেওয়ার এক দিনের মাথায় ২৩ নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজটিকে কাছাকাছি আরেক এলাকায় সরিয়ে নিয়েছে দস্যুরা।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১টার দিকে প্রথমে সোমালিয়ার গ্যারাকাদ উপকূল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে জিম্মি জাহাজটি নোঙর করেছিল দস্যুরা। এরপর সন্ধ্যার দিকে উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রাখে। গতকাল জাহাজটি আবারও নোঙর তুলে কাছাকাছি আরেক এলাকায় নিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, দস্যুরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি, জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। তবে নাবিকরা সুস্থ আছেন।’

এদিকে, বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ১২ জলদস্যুর নিয়ন্ত্র¿ণে রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স। সাগরের এই অঞ্চলে অপারেশন আটলান্টা নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স।

এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জিম্মি জাহাজের ওপর অপারেশন আটালান্টা নজর রাখছে। জাহাজটির অবস্থান সোমালিয়ার মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে।

এতে আরো বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষণে জাহাজটিতে ১২ জন দস্যুর উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও আক্রমণের সময় দলটিতে ২০ জন ছিলেন। সম্ভবত এই দস্যুদলের সদস্যরাই এ অঞ্চলে কয়েক দিন আগে এমভি রুয়েন নামের আরেক জাহাজ ছিনতাই করেছিল। ছিনতাই করা একটি জাহাজ ব্যবহার করেই বাংলাদেশি জাহাজটিতে হামলা চালিয়েছে জলদস্যুরা।

অন্যদিকে, ব্রিটিশ সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান অ্যামব্রে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সন্দেহ করা হচ্ছে- আরো বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার জন্য ছিনতাই করা জাহাজটিকে মাদারশিপ ভেসেল হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। রুয়েন নামের ওই জাহাজটিকে সোমালিয়ার ইয়েল থেকে ১৬০ ন্যটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পূর্বের দিকে যাত্রা করতে দেখা গেছে। এ এলাকায় চলাচলকারী অন্য জাহাজকে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আন্তÍর্জাতিক নৌবাহিনী ২০১৭ সাল থেকে এডেন উপসাগর ও ভারত মহাসাগরে ব্যাপক মহড়া শুরু করে। এরপর থেকে এ পথে সেমালি জলদস্যুদের তৎপরতা অনেকাংশ কমে যায়। এরপর রুয়েন ছিল প্রথম সফল অভিযান।

অ্যামব্রে জানিয়েছে, সেই ঘটনার কয়েক মাস পার হলেও এখনো ক্রুদের মুক্তিপণ পরিশোধ করা হয়নি। সংবাদমাধ্যম বলছে, এ ঘটনায় একজনকে চিকিৎসার জন্য ছেড়ে দিলেও বাকি ১৭ ক্রু এখনো জিম্মি রয়েছেন।

ইউন্যাভফরের পরিকল্পনা ও সমন্বয় কেন্দ্র এবং হর্ন অব আফ্রিকা মেরিটাইম সিকিউরিটি সেন্টারের তথ্যানুসারে, গত নভেম্বর থেকে সোমালি ব্যাসিন ও এডেন উপসাগরে জলদস্যুরা অন্তত ২০টি জাহাজে হামলা চালিয়েছে।

গত ৪ মার্চ বাংলাদেশের এস আর শিপিংয়ের ১৩ মিটার গভীরতার জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে খবর আসে, ভারত মহাসাগরে জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে। ওই দিন বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নিয়ন্ত্রণে নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। সে সময়ে জাহাজটি সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৭০০ মাইল দূরে ছিল। জাহাজে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু বর্তমানে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি।

জাহাজটিতে জিম্মি এক বাংলাদেশি নাবিক জানিয়েছেন, নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ জিম্মিদের উদ্ধার করতে এলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। কারণ তারা তখন আমাদের জিম্মি করে রাখে, মাথায় বড় বড় অস্ত্র তাক করে। দুটি বড় বড় ফ্রিগেট আসছিল। সব ইকুইপমেন্ট নিয়ে। কিন্তু তারা (জলদস্যুরা) এসবে ভয় পায় না। কারণ তারা আমাদের জিম্মি করে রাখে। আমাদের মাথায় গুলি ধরে রাখে। আমাদের তারা রেস্ট্রিকটেড করে রাখে। তবে এখন পর্যন্ত আঘাত করেনি। সবাই একটা রুমে ঘুমাচ্ছি। একটা ওয়াশরুম ব্যবহার করছি।

এদিকে এমভি আবদুল্লাহ অপহরণের আগে জলদস্যুরা কীভাবে জাহাজে উঠেছিল তার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ হোসাইন তারেক নামের একটি আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে। সমুদ্রপথে নিরাপত্তা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘অ্যামব্রে’ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করেছে। খবর স্প্যাশের।

ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে অ্যামব্রে জানায়, সে সময় সাগর ছিল শান্ত। জাহাজ চলছিল। পাশেই একটি ছোট বোট এগোচ্ছিল। সেটি থেকে সশস্ত্র ব্যক্তি বেয়ে জাহাজে ওঠে। জাহাজে তখন কোনো সশস্ত্র প্রহরী দৃশ্যমান ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র পিছু নিয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিবৃতিতে জানায়, ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের উৎপাত এড়াতে এবং প্রতিহত করতে কাজ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অপারেশন আটলান্টা। এর অন্তর্ভুক্ত একটি জাহাজই ‘এমভি আবদুল্লাহকে’ ছায়ার মতো অনুসরণ করছে। জিম্মিরা নিরাপদ আছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close