বদরুল আলম মজুমদার

  ১৬ মার্চ, ২০২৪

চড়া দামে ঘায়েল স্বল্প আয়ের মানুষ

পবিত্র রমজান মাস ঘিরে বিশ্বের অন্য মুসলিম দেশগুলোয় জিনিসপত্রের দাম কম রাখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ চিত্র পুরোটাই উল্টো। দুই বছর থেকে নিত্যপণ্যের দাম চড়া; সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এ অবস্থার মধ্যেই রোজার শুরুতে বাজারেই আরেক দফা বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। ফলে বাজারে গিয়ে ঘাম ঝরছে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের। এখন আবার চালের দাম বাড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মগবাজার, দয়াগঞ্জ, গোপীবাগ, মিরপুর ও উত্তরার বাজার ঘুরে বাজারে ঘুরে চালের দাম বৃদ্ধির তথ্য জানা গেছে। যদিও বাজারে আমন ধানের চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, তারপরও বিআর-২৮, পাইজাম, গুটি ও মিনিকেট চালের দাম গত তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২ টাকা করে বেড়েছে। অন্যদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে জিনিস মিলছে না বাজারে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এর আগে ভোটের পরপর চালের দাম কেজিতে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এরপর কিছুটা কমে মাস দেড়েক স্থিতিশীল ছিল। এখন আবার মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।

পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, তাদের কেনা দাম বেশি। অন্যদিকে মিলারদের দাবি, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ধানের দাম বেড়েছে। গুটি স্বর্ণা ২৩৫০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকা হয়েছে প্রতি বস্তা। এ চাল আগে খুচরা ৫০ টাকায় বিক্রি করা যেত, এখন ৫১-৫২ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। বস্তা নিলে ৫১ টাকায় দেওয়া যায়, খুচরায় ৫২ টাকার নিচে হয় না।

হাজীপাড়া এলাকায় কুমিল্লা রাইস এজেন্সির কর্ণধার মহসীন জানান, হঠাৎ করে কেন চালের দাম বেড়ে গেল তার কোনো উত্তর দিতে পারছেন না মিল মালিকরা। আমরা ভেবেছিলাম রোজার আগে সরকার চাল আমদানি শুল্ক কমিয়েছে, দাম নিম্নমুখী থাকবে। কিন্তু দাম বেড়ে যাবে সেটা ভাবিনি।

দয়াগঞ্জ বাজারে খালিদ হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, কদিন আগেই টিভিতে বাণিজ্যমন্ত্রীর মুখে শুনলাম, চালের দাম কম আছে। এখন সেটাও বেড়ে গেল। আমার মনে হয়, রোজায় চালের চাহিদা কম থাকে। যে কারণে দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এটি বাজারের একটি চিরাচরিত প্রবণতা হয়ে গেছে। সবকিছুর দাম বাড়ছে, চালের ব্যবসায়ীরা আবার পিছিয়ে থাকবেন কেন?

বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী হামিদুর রহমান দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা কত দিন এভাবে চলব জানি না। দিন দিন আমাদের খাবারের খরচ বেড়েই চলছে। বেতন পাই কত টাকা আর খরচ করি কত। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে তো আর বেতন বাড়ে না। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। হামিদুর রহমানের এরকম আরো মানুষের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

রাজধানীর উত্তরা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ আহমদ বলেন, জীবন কীভাবে চলবে জানি না। প্রায় দুই বছর থেকে টানাটানি করে চলছি। ব্যবসার পুঁজি নেই। ছেলেমেয়েদের লেখা পড়ার বাইরে তাদের মুখে দুই বেলা ভালো খাবার তুলে দেওয়াই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোটখাটো সঞ্চয় সব শেষ। এখন গ্রামে জমি বিক্রি করে ঢাকায় আনতে হবে।

রাজধানীর মিরপুর-১-এর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানের আগে গত সপ্তাহে সবজিসহ মুদি দোকানের পণ্য যে দামে বিক্রি হচ্ছিল, তা অপরিবর্তিত। এসবের মধ্যে অল্প কিছু পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে, আবার কিছু পণ্যের বেড়েছে। রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা সরকার বললেও বাজারে এর প্রতিফলন সামান্যই। রোজা শুরুর আগের বাড়তি দাম আরো বাড়তির দিকেই যাচ্ছে।

বাজারে শিম ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, টক টমেটো ৮০ টাকা, সাদা মুলা ৫০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা, ক্ষীরাই ৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করল্লা ১৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০-৯০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুরলতি ১০০-১২০ টাকা, সজনে ২০০ টাকা, কচুরমুখী ১২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০-১০০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় করল্লা, পটল, ঢ্যাঁড়শ, কাঁচামরিচের দাম কমেছে। আর গাজর, টমেটো, ক্ষীরাই, ফুলকপির দাম বেড়েছে। অন্য জিনিসের দাম অপরিবর্তিত।

এ ছাড়া মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯০-১১০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৩৫-৪০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৫০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০-২০ টাকা এবং আলুর দাম বেড়েছে আরো ৫ টাকা।

আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা হানিফ বলেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে, তবে আলুর দাম বেড়েছে। আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে আলুর দাম বাড়তে পারে। আলু কিনতে এসে সারওয়ার হোসেন বলেন, আলুর দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। ৩০ টাকার আলু ৪০ টাকায় কিনেছি।

মুদি দোকানের পণ্যের দামও রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে এক লাফে ৪৫ টাকা বেড়ে গেছে খেসারির ডালের দাম। আজকে ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১৬০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে খেসারির ডাল ছিল ১১৫ টাকা কেজি, তা হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৮০০- ২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০-৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১৩০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, বেলে মাছ ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০-৮০০ টাকা, কাজলী ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১৫ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির লাল ডিম ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১২৫ টাকা প্রতি ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close