নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪

সারা দেশে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা

১৩ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ

পৌষের বিদায়বেলায় রাভভর বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা। দিনেও কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল সড়ক ও মাঠ-ঘাট। সেইসঙ্গে বয়ে গেছে হিমেল হাওয়া। ফলে সারা দেশে অনুভূত হচ্ছে তীব্র ঠাণ্ডা। গতকাল শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৮.৮ সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে ১৩ জেলায় পারদের সংখ্যা এক অঙ্কের ঘরে নেমে যাওয়ায় প্রবাহিত হচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। রাজধানীতেও বেড়েছে শীতের প্রকোপ। শীত থেকে রক্ষায় গরম কাপড়ের দোকানগুলোয় বাড়ছে মানুষের ভিড়।

অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদের দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে সারা দেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টা অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বজলুর রশিদ আরো জানান, ‘সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠাণ্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। আগামী ৫ দিনে দেশে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানায় সংস্থাটি।’ সিরাজগঞ্জে প্রকৃতির এ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে শরীরে একাধিক পুরোনো গরম কাপড় জড়িয়ে জীবিকার সন্ধানে নেমেছেন কর্মজীবী মানুষ। প্রচণ্ড শীতে নির্মাণ শ্রমিক, মাটিকাটা শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালকসহ নিম্নআয়ের মানুষের কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে পড়েছে। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের কৃষক রতন মিয়া বলেন, ‘শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারনে ধানের চারা মরে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি সবজি মাঠের ফসল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। পোকার উপদ্রব বেড়ে যাচ্ছে।’

দিনাজপুরের বিরামপুরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মেলেনি। দিনের বেলায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে গেখা গেছে দরিদ্র মানুষদের। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া মধ্যরাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ন্যায় শিশিরকণা গড়িয়ে পড়ায় দিনে হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। এছাড়া তীব্র ঠাণ্ডায় নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ বেড়েছে। ঘন কুয়াশা কেটে যাওয়ায় ৬ ঘণ্টা পর শনিবার বেলা সাড়ে ৩টায় স্বাভাবিক হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের চলাচল। সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন করতে পারেনি।

গরম কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে : শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গরম কাপড়ের দোকান ও ফুটপাতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে বেচাকেনাও। বিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি বিক্রেতারা। শনিবার ঢাকাসহ জেলা-উপজেলায় খবর নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, মিরপুর রোডের গোল্ডেন গেট শপিং সেন্টার, খান প্লাজা, কাদের অর্কেড, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, বায়তুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, নেহার ভবন, নূরজাহান সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূর ম্যানশন সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেটসহ সব মার্কেটেই শীতের কাপড়ের ব্যাপক সমাহার। ব্যবসায়ী ও দোকানিরা ক্রেতাদের চাহিদা আর রুচির কথা মাথায় রেখে পসরা সাজান এসব পোশাকের। এর মধ্যে জ্যাকেট, সোয়েটার, হুডি, ফুল স্লিভ টি-শার্ট, ব্লেজার, স্লিভলেস কোট, কটি, জিন্সের মোটা শার্ট-জ্যাকেট, ডেনিম শার্ট, উইন্টার কোট, উলের তৈরি শাল, খাদির শাল, মাফলার, কানটুপি, হাত-পায়ের মোজা অন্যতম।

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী বাপ্পি হাওলাদার বলেন, নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাই মৌসুমভিত্তিক কাপড়ের ব্যবসা করেন। সে অনুযায়ী এখন অধিকাংশ দোকানেই শীতের পোশাক। তবে এক্ষেত্রে আমরা তরুণ-তরুণীদের পছন্দকে প্রাধান্য দেই। কারণ বয়স্ক মানুষজন একটি শীতের কাপড়ের একাধিক বছর চালালেও তরুণ-তরুণীদের প্রতি বছর নতুন কাপড় কেনার প্রবণতা বেশি। তাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখেই শীতের পোশাক সংগ্রহ করে থাকি। এ বছর বিক্রি খুবই ভালো হচ্ছে। সম্প্রতি শীত বাড়ার কারণে দোকানে ক্রেতার পরিমাণও বেড়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক বছরের তুলনায় এবার শীতের পোশাকের বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টির কথাও জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close