নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

বিআরটিসি

‘হাজার ভূতের ঘরে’ ওয়ার্কশপ নামেই

পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ওয়ার্কশপগুলো। আধুনিক মেরামত ব্যবস্থা না থাকায় অল্পদিনেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন বাসগুলো। এ অবস্থায় ওয়ার্কশপের আধুনিকায়ন ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির ওপর জোর দিচ্ছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, ওয়ার্কশপগুলোতে নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের চিন্তাভাবনা চলছে।

এ বছর ৬০০ নতুন বাস আমদানি করে বিআরটিসি। ঝকঝকে তকতকে এই বাসগুলো রাজধানীসহ সারা দেশের রাজপথে চলছে অল্পদিন আগে থেকে। সেইসঙ্গে চলছে পুরাতন লক্কড়-ঝক্কড় বাসও। রক্ষণাবেক্ষণ ও যথাযথ মেরামতের অভাবে কিছুদিন চলার পরই নতুন বাসগুলোও যে পাবে এমন চেহারা, তার নজির আছে ভূরিভূরি।

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় বিআরটিসির কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপে গেলে বাসগুলোর বেহালদশার কারণটা অনুধাবন করা যায় সহজেই। ওয়ার্কশপ তো নয়, যেন ভাগাড়। জীর্ণ ভবন, কাঁচা মেঝে আর জংধরা পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে মেরামত কাজ।

বিআরটিসি ডিজিএম আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমাদের যে অবকাঠামো আছে তা থেকে আমরা প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি গাড়ির কাজ করতে পারি। যদি আমরা ইকুইপমেন্ট পাই তাহলে আমরা ৪০ থেকে ৫০টি গাড়ির কাজ করতে পারব।

বিআরটিসি বলছে, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এ ওয়ার্কশপ স্থাপনের পর আর নতুন করে কোনো যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়নি। শুধু কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপ নয়, বিআরটিসির অন্য ওয়ার্কশপগুলোরও বেহালদশা। অভাব রয়েছে দক্ষ জনবলেরও। যথাযথভাবে মেরামত না হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই অকেজো হয়ে যায় গাড়িগুলো। এতে লোকসান গুনতে হয় মোটা অঙ্কের। ওয়ার্কশপগুলোর আধুনিকায়নে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ এস এম সালেহউদ্দিন।

ওয়ার্কশপগুলোর শোচনীয় অবস্থার কথা স্বীকার করে বিআরটিসির অর্থ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন জানালেন, নতুন প্রযুক্তি আনার চিন্তা-ভাবনা চলছে। তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নিয়েছি। এ মুহূর্তে বলতে পারি আমাদের আর্থিক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

খোদ বিআরটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, বাস কেনার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিআরটিসি মিলে যে কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে বাস দেখে এলেও শেষ পর্যন্ত শতভাগ মান নিশ্চিত করা হয় না। মান যাচাই না করেই প্রতিবার বাস আমদানি করা হয়। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে এসব পরিবহন নষ্ট হয়ে যায়। অভিযোগ আছে, ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির উদাসীনতা ও দুর্নীতির কারণেই বিআরটিসি বারবার বাস আমদানিতে ধরা খাচ্ছে। এক পর্যায়ে এসব বাস ডিপোতে ঢুকিয়ে মেরামতের চেষ্টা চলে। মেরামতের নামে যন্ত্রপাতি আরো বিকল ও হারিয়ে যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন পর বেশির ভাগ বাস মেরামতের অযোগ্য ঘোষণা হয়। নিলামে বিক্রি হয় যন্ত্রপাতি। আবার তৎপরতা শুরু হয় নতুন পরিবহন আমদানির।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিসি কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন সংস্থায় হাজারো ভূতে ঘর বেঁধেছে। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ডিপো ও মেরামত কারখানা পর্যন্ত সিন্ডিকেট চক্রের কারণেই মূলত অনেক সময় ভালো বাসও অচল হয়ে যায়। বারবার আক্রান্ত হয় রোগে। কিন্তু রোগ আর সারে না।

নামেই ওয়ার্কশপ : বিআরটিসির নিজস্ব দুটি ওয়ার্কশপ থাকলেও সেখানে বাস মেরামতের তেমন একটা সুযোগ নেই। এর মধ্যে গাজীপুরে লগোপাড়ায় অবস্থিত সমন্বিত কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপটি (মেরামত কারখানা) দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। আর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপটি মূলত সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার হালকা গাড়ি (জিপ, মাইক্রোবাস) এবং অল্পসংখ্যক বাস-ট্রাক মেরামতের কাজ করে থাকে। তবে এ ওয়ার্কশপে বিআরটিসির কোনো বাসের মেরামত হয় না।

জানা গেছে, গাজীপুরের ওয়ার্কশপটি ১৯৮১ সালে ১৪ একর জায়গার ওপর জাপানি কারিগরি ও আর্থিক অনুদানে নির্মিত হয়। এ ওয়ার্কশপে গাড়ি সংযোজন, বডি নির্মাণ ও গাড়ি মেরামত করা হতো। এ ওয়ার্কশপেই ভলভো দ্বিতল বাসের বডি সংযোজন করা হয়েছিল। এছাড়া ২০০৯ সালে সরকারের কাছ থেকে ৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১১১টি একতলা ও দ্বিতল গাড়ির ভারি মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হয় এখানে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে বর্তমানে ওয়ার্কশপের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close