প্রিন্স রাসেল

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৮

শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচের গ্যালারির অর্ধেকটাই ছিল ফাঁকা। শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে ম্যাচের দখলে থাকা চেয়ারগুলো গোনা যাচ্ছিল অনায়াসেই। কাল তৃতীয় ম্যাচে রীতিমতো পাল্টে গেছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের চেহারা। কিন্তু বদলাল না বাংলাদেশ জাতীয় দলের পারফরম্যান্স। প্রিয় দুর্গে চেনারূপে টাইগাররা। সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দলের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটায় খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাও আভাস দিচ্ছিল বিশেষ কিছু একটার। হলোও তাই। প্রত্যাশিত দ্বিতীয় জয়টা তুলে নিয়েছে মাশরাফির দল। লঙ্কানদের ১৬৩ রানের হিমালয়তুল্য ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

এই মঞ্চেই বহুবার জয়োৎসব করেছে বাংলাদেশ। গ্যালারি তুলেছিল উচ্ছ্বাসের ঢেউ, শুনিয়েছে বাঘের গর্জন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচের আগা-গোড়ায় পরিচিত দৃশ্যগুলোর পুনরাবৃত্তি হলো। কিন্তু কালকের জয়টার মাহাত্ম্য অন্যসব জয়ের চেয়ে আলাদা। কারণটা বলে দিয়েছে ম্যাচের ফল। এদিন নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টা যে তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ! এমন রাজসিক জয়ের পরও মাশরাফিদের উদ্যাপনে থাকল পরিমিতিবোধ। প্রাক্তন কোচ হাথুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনেই হয়তো বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতেননি মাশরাফিরা।

লঙ্কান এই কোচের অধীনেই বিশ্ব দেখেছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে। হাথুরুর সাড়ে তিন বছরের অধ্যায়ে প্রায় সব দলকেই হারিয়েছে টাইগাররা। নিজেদের উঠানে তো যেকোনো দলের আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন মাশরাফি। পঞ্চাশ ওভারের লড়াইয়ের চেনা মঞ্চে বাংলাদেশ কেন পরাশক্তি সেটার আরো একবার বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন মাশরাফি-সাকিব-তামিমরা। শ্রীলঙ্কাকে করালেন ক্রিকেট-পাঠ।

এতদিন সিংহদের বিপক্ষে টাইগারদের সর্বোচ্চ জয়ের ব্যবধান ছিল ৯০ রানের। কাল নিজেদের তো বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছেই, পেছনে ফেলেছে অতীতের সব রেকর্ড জয়কে। লঙ্কানদের লজ্জাজনক হার উপহার দিয়ে ইতিহাসের নতুন দিগন্ত ছুঁয়েছে স্বাগতিক শিবির। ২০১২ সালের বিজয়ের মাসে খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রাপ্ত ১৬০ রানের জয়টাও ছাপিয়ে গেছে কালকের ম্যাচের ফলটা।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফেভারিট দল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে উদ্বোধনী দ্বৈরথে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে নামের সঙ্গে যে তকমাটা জুড়ে দেওয়া হয়েছে সেটার সার্থকতা দেখিয়েছে মাশরাফির দল। কাল অতিথি অন্য দলটাকে দুমড়েমুচড়ে দিয়ে টাইগাররা জানান দিল শিরোপার যোগ্য দাবিদার তারা। কাল ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে আসা সাকিব আল হাসানও সেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন।

‘কোচ রান করেন না। উইকেটও শিকার করেন না।’ সম্প্রতি বলেছিলেন টাইগারদের সহকারী কোচ রিচার্ড হ্যালসল। জিম্বাবুইয়ান বংশো™ভূত ইংলিশ কোচের কথাটা যে একেবারেই অমূলক নয় সেটার দৃষ্টান্ত মিলল আরো একবার। সাকিব-তামিম-মাশরাফি-মুশফিকরা বোঝালেন অভিজ্ঞতার মূল্য। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের চোয়ালবদ্ধ পারফরম্যান্স উপহার দিল ইতিহাস গড়া জয়টি। প্রাক্তন কোচ হাথুরুকে এর চেয়ে দারুণভাবে জবাব দিতে পারত না বাংলাদেশ।

জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়ে গেছেন ব্যাটসম্যানরা। আরেকটু ছোট করে বললে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। এই ত্রয়ীর দুর্দান্ত ব্যাটিং দৃঢ়তার ওপর দাঁড়িয়ে দলীয় সংগ্রহ তিনশ ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে ৩২০ রানের ইনিংসটা লঙ্কানদের বিপক্ষে টাইগারদের সর্বোচ্চ, তবে সব মিলিয়ে যৌথভাবে পঞ্চম ইনিংস মাশরাফিদের। কিন্তু যাদের ব্যাটে প্রত্যাশিত ও পাহাড়সম পুঁজি পেয়েছে তাদের প্রতেকেই আক্ষেপ নিয়ে ছেড়েছেন মিরপুরের বাইশ গজ।

৬৩ বলে ৬৭ রানের রাজসিক ইনিংস খেলে অ্যাশলে গুনারতেœর কট অ্যান্ড বোল্ডের শিকার হয়েছেন সাকিব। ৫২ বলে ৬২ রানের ঝড়ো হাফসেঞ্চুরি করা মুশফিক অক্ষত রাখতে পারেননি নিজের স্ট্যাম্প, উপড়ে ফেলেন থিসারা পেরেরা। তবে সতীর্থ এবং দুই সহযোদ্ধার চেয়ে তামিমের আফসোসটা নিশ্চিতভাবেই বেশি। টানা দুই ম্যাচেই যে ১৬ রানের জন্য ক্যারিয়ারের দশম শতক বঞ্চিত হয়েছেন বাঁ-হাতি ড্যাশিং ওপেনার। ৭টি চার ও ২টি ছক্কার ইনিংসটি তামিম খেলেছেন ১০২ বলে। ধনঞ্জয়ের বলে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ডিকভেলার গ্লাভসবন্দি হন তামিম। তবে সেঞ্চুরি না পেলেও কালকের ৮৪ রানের ইনিংস খেলার পথে দারুণ একটা মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তামিম। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পাড়ি দিয়েছেন এগারো হাজার রানের গন্ডি। ম্যাচটা বিশেষ কিছুর উপলক্ষ হয়ে থাকল সাকিবের জন্যও। এদিন বাংলাদেশের জার্সিতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার রান সংখ্যায় পৌঁছেছেন পাঁচ অংকে। বড়র সঙ্গে ছোট্ট দুটি অর্জনও আছে। শেষ দিকে মাঝারি মানের ঝড়ো ইনিংস খেলা সাব্বির রহমান ১২ বলে ২৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডেতে স্পর্শ করেছেন এক হাজার রানের মাইলফলক। তামিমকে উদ্বোধনী জুটিতে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া এনামুল হক বিজয় ৩৫ রানের কার্যকর ইনিংসেও ছুঁয়েছেন চার অঙ্কের ফিগার। সাব্বিরের সমান রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। টপ অর্ডারের ইনিংসগুলোর সঙ্গে তাদের এই ইনিংসগুলোও দলের বড় সংগ্রহে যথেষ্ট অবদান রেখেছে। টাইগারদের পতন হওয়া ৭ উইকেটের তিনটির মালিক থিসারা পেরেরা। দুটি শিকার নুয়ান প্রদ্বীপের। তবে বল হাতে কাল সবচেয়ে সফল ছিলেন সাকিব। ৮ ওভারে মেডেনসহ ৩ উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কার বড় রান তাড়া করার স্বপ্নটা ধূসর করে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিব ধস নামান লঙ্কানদের লোয়ার অর্ডারে। তবে ম্যাথুসদের টুঁটি চেপে ধরার পথটা দেখিয়ে গেছেন দলপতি মাশরাফি। ৮ ওভারে ত্রিশ রান খরচ করা টাইগার সেনাপতি সাজঘরে পাঠিয়েছেন উইকেটে জমে উঠতে শুরু করা উপুল থারাঙ্গা (২৫) ও জীবন মেন্ডিসকে (১৯)। অধিনায়ককে সঙ্গ দিয়ে উইকেট শিকারের দৃশ্যপটে এলেন মুস্তাফিজুর রহমানও। ডিকভেলাকে (১৬) স্ট্যাম্পড করেন কাটার মাস্টার। দুইবার উদ্যাপনের উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন রুবেল হোসেন।

দলীয় ২ রানে প্রথম ধাক্কা খাওয়া শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে ৪৩ রানে। এরপর থেকেই ধুঁকতে থাকে সফরকারীরা। ভরসা হয়ে ওঠার আগে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে ২৮ রানে ফিরেছেন ডিনেশ চান্দিমাল। সাকিব রান আউট করেন লঙ্কানদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহককে। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার শেষ দিকে দলীয় সর্বোচ্চ ১৪ বলে ২৯ রানের ঝড় তুলে শ্রীলঙ্কার হারের ব্যবধান কমিয়েছেন মাত্র।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist