reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সরকারি উদ্যোগেই স্কুলে শহীদ মিনার গড়তে হবে

বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, জাতির স্বকীয়তা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সব সময় আলোকবর্তিকার মতো মূর্ত হয়ে ওঠে ভাষা আন্দোলন। এখনো জাতির যেকোনো ক্রান্তিকালে ভাষা আন্দোলন আমাদের প্রেরণা হয়ে দেখা দেয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। ভাষা আন্দোলন তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের আন্দোলন, যার মধ্য দিয়ে এসেছে মায়ের ভাষার স্বীকৃতি। এসেছে বাঙালির চির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ফেব্রুয়ারি তাই অঙ্গীকারের মাস, প্রত্যয়বদ্ধ হওয়ার মাস। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সমাজে, রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শপথ নেওয়ার মাস- ফেব্রুয়ারি। তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই দীপ্তবান হবে মহান একুশের চেতনা, আর সমৃদ্ধ হবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। তাই তরুণ প্রজন্মকে সেই ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। ফলে ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা, জানতে পারছে না ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস। দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। অনেক স্কুলে কলাগাছ, বাঁশ, কাঠ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার গড়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তারা। মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই নির্দেশনা দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরও (মাউশি)। এর পরও শহীদ মিনার নেই দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে। দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকা দুঃখজনক। ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস অবশ্যই শিক্ষার্থীদের জানা উচিত।

ফেব্রুয়ারি এলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। তবে দেশে মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ঠিক কতটিতে শহীদ মিনার আছে, এর সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় না। গত বছর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২২ হাজার ৬২৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। আর বাকি ৪২ হাজার ৯৪৩ বিদ্যালয়ে নেই। অর্থাৎ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই ভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহীদ মিনার। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যশোরের শার্শা উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২৫। এর মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ২৪টি বিদ্যালয়ে। ফলে উপজেলার চার-পঞ্চমাংশ বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বা অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। দেশের একটি উপজেলার ১২৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০১টিতেই নেই শহীদ মিনার, তাহলে অন্য জেলা বা উপজেলার কী অবস্থা সেটা সহজেই অনুমেয়। ভাষা আন্দোলনের সাত দশক পেরিয়েও আমাদের এটি দেখতে হচ্ছে! এই অবস্থা চলতে থাকলে তরুণ প্রজন্ম ভাষা আন্দোলনের চেতনাই বা ধারণ করবে কীভাবে? তারা তো ঠিকভাবে জানতে বা বুঝতেই পারছে না ভাষা আন্দোলনের বিষয়টি।

প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা জরুরি। কিন্তু সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় তা হচ্ছে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে চলে। এ কারণে শহীদ মিনার নির্মাণের দায় একেবারেই সরকারের। আমরা মনে করি, সরকারি উদ্যোগেই শহীদ মিনার হওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা নেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close