মোফাজ্জল হোসেন

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মুক্তমত

বই পড়ার অভ্যাস গড়ুন

ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার আগে সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম ছিল বই। অনেকেরই তখন নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস ছিল। কিন্তু ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে আমরা সামাজিক মাধ্যমে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছি যে, বই পড়ার বিষয়টি খুব কমই স্মরণ করি। অথচ মানুষের শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেমন শরীরের ব্যায়াম প্রয়োজন, তেমনি মস্তিষ্ক সচল ও সুস্থ রাখতে হলে মস্তিষ্কের ব্যায়ামও প্রযোজ্য। আর নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয় এবং ব্রেইন সচল হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের জটিল কোষগুলো উদ্দীপিত হয় ও স্নায়ুগুলো উজ্জীবিত হয় এবং আলঝাইমার ও ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক রোগের প্রক্রিয়া হ্রাস হয়। আমরা কি মানসিক চাপ কমাতে চাই?

নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস মানসিক চাপ কমাতে বেশ কার্যকর। তাই দুশ্চিন্তা, মনের বিষণ্ণœতা দূর করতে নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেমন এ সম্পর্কে বিখ্যাত নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক ডব্লিউ সমারসেট মাঘাম বলেছেন, ‘বই পড়ার অভ্যাস অর্জন করা মানে জীবনের প্রায় সব দুঃখ-কষ্ট থেকে নিজের জন্য একটি আশ্রয় তৈরি করা।’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ-কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।’ যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীদের ওপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন বই পড়েন, তারা মানসিক সমস্যায় কম ভোগেন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বই পড়লে রক্তচাপ কমে, হার্ট ভালো থাকে এবং মানসিক অবসাদ কমে।

এ ছাড়া বই মানুষের এমন এক বন্ধু যে কখনো মানুষকে ধোঁকা দেয় না। কোনো কাজ করতে বাধ্যও করে না। বরং বই মানুষের মনকে উজ্জীবিত করে। বই আলোকিত মানুষ গড়ে তোলে। বই মানুষকে বিনয়ী বানায়। সভ্য জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে হলে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। কেননা যে জাতি যত বেশি বই পড়ে, সে জাতি তত বেশি সভ্য হয়। আমরা যদি উন্নত দেশের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই যে, তারা সঙ্গী হিসেবে সঙ্গে একটা বই রাখে এবং যাতায়াতের পথে, গাড়ির মধ্যে বা একটু ফ্রি সময় পেলেই বইপাঠে মনোযোগ দেয়। সে বিবেচনায় আমাদের দেশের পাঠক কম এবং ফ্রি সময় পেলেই আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডুবে থাকতে দেখা যায়, যা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনে কি ক্ষতি বয়ে আনছে না?

অথচ বই পড়ার অভ্যাস মানুষকে চিন্তাশীল ও সৃজনশীল করে তোলে। জ্ঞানী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতেও বইয়ের ভূমিকা অপরিসীম। ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ৫০০ পৃষ্ঠা বই পড়। জ্ঞান হলো চক্রবৃদ্ধি সুদের মতো, যত পড়বে তত বাড়বে।’ তিনিও পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ১০০০ পৃষ্ঠা বই পড়তেন। এ ছাড়া সাফল্যের চূড়ায় যারাই পৌঁছেছেন, তাদের সবারই বই পড়ার অভ্যাস ছিল। যেমন : মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী বিল গেটস ২০১৫ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে এক সাক্ষাৎকারে বছরে ৫০টি বই পড়ার কথা জানান এবং ইলন মাস্কও রকেট সায়েন্সের বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। তাই আমি মনে করি, চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং জীবনে সাফল্য পেতে হলে বই পড়ার অভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। মার্ক টোয়েন বলেছেন, ‘বই পড়ার অভ্যাস নেই আর পড়তে জানে না, এমন লোকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’ আবার প্রশ্ন হতে পারে, আমরা যদি ভালো লেখক হতে চাই তাহলে কী করতে হবে?

তাহলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বই পড়ার অভ্যাস লেখার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। একজন ভালো পাঠক একজন ভালো লেখক। যে যত বেশি বই পড়বে, সে তত বেশি লেখায় দক্ষতা অর্জন করবে। আর একজন দক্ষ লেখকের লেখনীতে ফুটে উঠবে আরো একটি ভালো বই। জনাথন সুইফট বলেছেন, ‘বই হচ্ছে মস্তিষ্কের সন্তান।’

অতএব আমাদের নিজেদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং অন্যদেরও বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাই বই পড়ার ব্যাপকতা ঘটাতে আমরা উপহার হিসেবে বইয়ের প্রচলন করতে পারি। এই কয়েক দিন আগে মূল্যবোধের ফেরিওয়ালা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা ম্যা’ম তার নিজের লিখিত, ‘সাফল্যের সিঁড়ি-১’ নামক বই উপহার হিসেবে আমাকে দেন এবং আমিও বেশ আগ্রহ নিয়ে বইটি পড়তে শুরু করি। তাই আমি মনে করি, উপহারে বইয়ের প্রচলন অন্যকে বইপাঠে আগ্রহী করে তুলবে। আর এভাবেই বইয়ের পাঠক বইপাঠে অভ্যস্ত হবে এবং আলোকিত মানুষ গড়ে উঠবে। তাই আসুন বই পড়ার অভ্যাস করি, সুস্থ-সুন্দর জীবন গড়ি। ও আরো একটি কথা বিশেষজ্ঞদের মতে, বই মানে কিন্তু কাগজে ছাপা বই-ই পড়তে হবে। মোবাইল বা ট্যাবের আলোকিত পর্দায় বই পড়লে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

লেখক : তরুণ লেখক ও শিক্ষার্থী

ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close