reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ জরুরি

বাড়িভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে ভাড়াটিয়াদের আতঙ্কের শেষ নেই। বিশেষ করে নতুন বছর এলেই এ আতঙ্কের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কারণ বাড়িওয়ালারা নানা অজুহাতে ইচ্ছামতো বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে আইনের তোয়াক্কা করেন না তারা। আবার অনেক ভাড়াটিয়া জানেনই না, দেশে এ-সংক্রান্ত আইন রয়েছে, যেটি ১৯৯১ সালের। এই আইনে ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আইন থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। যার খেসারত দিতে হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের মধ্যে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি ভোগাচ্ছে নগরবাসীকে। বছরের প্রথম দিন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বাড়ি বদলের নানা চিত্র। শহরের প্রান্তিক এলাকায় চলে যাচ্ছেন তারা, যেখানে বাড়িভাড়া তুলনামূলক কম।

বলা সংগত, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, রাজধানীর জনসংখ্যার ৭২ থেকে ৭৫ শতাংশ লোক ভাড়া বাসায় থাকেন। অন্য এক জরিপ বলছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অথচ একই সময় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ। এটা সাধারণ মানুষের জন্য অস্বস্তিকর হলেও কেউ এ নিয়ে খুব একটা ভাবেন না। আইনের বিষয়ে অজ্ঞতাই এর প্রধান কারণ। এর ফলে ভাড়া বাসায় থাকতে গিয়ে ভাড়াটিয়াদের পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। বছর না ঘুরতেই বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া, বাড়ির মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী ভাড়াটিয়াকে বিনা নোটিসে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা, ভাড়া নেওয়ার সময় করা চুক্তির শর্ত না মানাসহ আছে নানা অভিযোগ। এ অবস্থায় আইনটির বিষয়ে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বাড়ি ভাড়া-সংক্রান্ত আইন না জানার কারণে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে কিছু বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়। এর একটি হলো ভাড়া পরিশোধ নিয়ে। আমরা সাধারণত সরাসরি বাড়িওয়ালার হাতে ভাড়া দিয়ে দিই। এর বিনিময়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালারা কোনো রসিদ দেয় হয় না। কখনো রসিদ দেওয়া হলেও সেখানে ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখ থাকে না। অথচ আইন অনুযায়ী রসিদ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া বাড়ির মালিক নানা অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধি করেন। কিন্তু আইনে উল্লেখ রয়েছে, বাড়িওয়ালা চাইলেই ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াতে পারেন না। সাধারণত দুবছরের কম সময়ে বাড়িভাড়া বাড়ানো যাবে না। এ সময়ের পর বাড়াতে হলে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে আপসে তা নির্ধারিত হবে। এটি নিয়ন্ত্রকও নির্ধারণ করে দিতে পারেন। কিন্তু এর কোনোটাই মানা হয় না। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অগ্রিম নেওয়া বা জামানত। আইনের ১০ ও ২৩ ধারা মোতাবেক বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই বাড়ির মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের বাড়িভাড়ার অধিক জামানত গ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু দেখা যায়, প্রায়ই দু-তিন মাসের অগ্রিম ভাড়া নেওয়া হয়। আরো একটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে, যা আমরা অনেকেই জানি না। সাধারণত বাড়ি মেরামত করার দায়িত্ব বাড়িওয়ালার ওপরই বর্তায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেরামতের কাজ বাড়িওয়ালা করতে চান না। চাপিয়ে দেন ভাড়াটিয়ার ওপর, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বলা বাহুল্য, কম ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ যখন খাবার ও খাবারবহির্ভূত পণ্যের বাড়তি দামের কারণে সমস্যায় ডুবে আছে, তখন বাড়িভাড়ার বাড়তি টাকা জোগাতে তারা অন্য খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। আয় না বাড়ায় খরচ কমাতে অনেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ধারদেনা করে চলার সুযোগও কমে গেছে। অনেকের কাছেই তাই খরচ কমানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এসব বিষয়ে ভাড়াটিয়া এবং বিশেষ করে বাড়িওয়ালারা সচেতন হবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close