তাসনিম পারভীন

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মুক্তমত

জেগে উঠছে ৫০ হাজার বছর আগের জম্বি ভাইরাস

করোনা মহামারির রেশ পৃথিবীবাসী মাত্র কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এই মহামারির কারণে যে ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন পৃথিবীবাসীকে হতে হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে এমনটাই প্রত্যাশা সবার। কিন্তু এমন প্রত্যাশায় জল ঢেলে আবারও পৃথিবীবাসী সম্মুখীন হতে যাচ্ছে করোনা মহামারির চেয়েও কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী এক ভাইরাসের। বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন ‘জম্বি ভাইরাস’। শিগগিরই জেগে উঠতে পারে এ ভাইরাস।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করা হয়েছে। ভাইরাসটি প্রায় ৪৮ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো। ২০২২ সালে সাইবেরিয়ার বরফ গলে যাওয়ায় কয়েক ধরনের জম্বি ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু ফের আলোচনায় এসেছে এই ভাইরাস। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাজার বছরের পুরোনো বরফের স্তর গলে যাওয়া মানুষের জন্য নতুন আশঙ্কার সৃষ্টি করতে পারে, এমনটি-ই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

তারা জানিয়েছেন দুই ডজনেরও বেশি এমন ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। আর এই তালিকায় রয়েছে কয়েকটি ভাইরাস, যার নাম দেওয়া হয়েছে জম্বি ভাইরাস। বিভিন্ন জায়গায় বরফের নিচে চাপা পড়েছিল এই মৃত্যুদূত। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, সুমেরুর হিমবাহ যত দ্রুত গলবে, তত তাড়াতাড়ি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এটি। এ ভাইরাস খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেই পৃথিবীবাসী আবারও একটি ভয়ংকর মহামারির সম্মুখীন হতে পারে।

ফ্রান্সের এইক্স-মার্শেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জিন-মাইকেল ক্লাভেরি জানিয়েছেন, ‘এ মুহূর্তে অতিমারীর আশঙ্কা খতিয়ে দেখে জানা যাচ্ছে, এমন বিপদ লুকিয়ে থাকতে পারে মেরু প্রদেশের বরফের তলায়। আমাদের ধারণা, এমন ভাইরাস সেখানে থাকতে পারে, যা মানুষকে দ্রুত সংক্রমিত করতে পারে এবং এর ফলে নতুন কোনো অসুখের জন্ম হবে।’

জানা গেছে, কয়েক হাজার বছরের পুরোনো পার্মাফ্রস্ট গলে যাচ্ছে। পার্মাফ্রস্ট হচ্ছে মেরু ও তৎসংলগ্ন এলাকায় মাটির নিচের বরফের স্তর। রাশিয়ার সাইবেরিয়ার এবং আর্কটিক এলাকার পার্মাফ্রস্টের নিচে লুকিয়ে আছে বহু পুরোনো ইতিহাস। পার্মাফ্রস্টকে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন প্যান্ডোরার বাক্স। তারা বলেছেন, এই বাক্সে ঘাতক জীবাণু বহু সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে, যার উদাহরণ হচ্ছে এই জম্বি ভাইরাস। এ রকম একটি উদাহরণ হলো ২০০৭ সালে রাশিয়ার আর্কটিক এলাকার ইয়ামাল পেনিনসুলায় ‘লায়ুবা’ নামের এক বাচ্চা ম্যামথের মমির দেখা পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা কার্বন ডেটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই মমির যাবতীয় তথ্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হয়েছেন। জানা যায়, প্রায় ৪১,৮০০ বছর আগে মারা যায় ৩০-৩৫ দিন বয়স্ক এই বাচ্চা ম্যামথটি। এভাবেই পার্মাফ্রস্টের নিচে লুকিয়ে আছে প্রাণঘাতী ভাইরাসেরা।

আবহাওয়াবিদদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে গড় হারের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে আর্কটিক অঞ্চল। বিজ্ঞানীরা আরো বলেন, আর্কটিক সমুদ্রের বরফ অদৃশ্য হয়ে গেলেই এটি সাইবেরিয়ার শিপিং, ট্রাফিক এবং শিল্প উন্নয়ন বৃদ্ধির জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত অঞ্চল হিসেবে গণ্য হবে। যার ফলে সে অঞ্চলগুলোতে লোকবল পাঠানো হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ঠিক তখন থেকেই বিপর্যয় ধেয়ে আসতে পারে। কেননা তেল, মাটি, নুড়িসহ নানা খনিজের খোঁজে পার্মাফ্রস্টে বড় আকারের খনন হবে, যা থেকে খনিজ আহরণকারী শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই জম্বি ভাইরাস কীভাবে মানুষের শরীরে প্রভাব বিস্তার করবে তা নিয়ে এখনো পরিষ্কার কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি বিজ্ঞানীরা। তবে তারা বারবার বলছেন, করোনার থেকেও কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী হবে এই জম্বি ভাইরাস। তবে কী আবারও করোনা মহামারির চেয়ে ও ভীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হবে বিশ্ববাসী? হয়তো সময়ের সঙ্গেই মিলবে এই উত্তর।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close