reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হোক

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেসামাল সাধারণ মানুষ। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি নানা উদ্যোগের পরও তার সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। গত রবিবার সচিবালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ৪টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে বিশ্ববাজারে দাম বেশি এমন পণ্যের শুল্ক কমানোর সুপারিশ, ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় ডলার সহায়তা, অবৈধ মজুদদারি কঠোরভাবে দমন এবং ডলার সংকট হলে বিকল্প মুদ্রায় পণ্য আমদানি। সভায় বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতির সঙ্গে চাহিদা বিশ্লেষণ করে ঘাটতি চিহ্নিত করা এবং রমজানের আগে ঘাটতি মেটাতে পণ্য আমদানি সহজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বলা সংগত, এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে চলছে টালমাটাল পরিস্থিতি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্ব অর্থনীতির এমন পরিস্থিতির শিকার। এ অবস্থায় গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশে যে হারে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, তা পৃথিবীর আর কোথাও বাড়েনি। ফলে বৈশ্বিক সংকটের চেয়েও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার অভাবকেই তারা বেশি দুষছেন। এ অবস্থায় সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকারের জন্য দ্রব্যমূল্য; বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের দাম জনসাধারণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসাকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলছেন তারা। অতিসম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কৃত্রিমভাবে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, তাহলে এই কৃত্রিম সংকটের সিন্ডিকেট কেন ভাঙা যাচ্ছে না? নতুন করে দেখা যাচ্ছে, রমজানকে সামনে রেখে অতি মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। চলমান পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থা। আয়ের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের পেছনে। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে, সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো রমজানের আগে দৃশ্যত কিছু বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে। তবে আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, এসব ব্যবস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক তেমন প্রভাব পড়ে না। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ডলার সংকট কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের জোরালো ভূমিকার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনাই সবচেয়ে বড় কারণ। মাঝে মাঝে পেঁয়াজ, তেলের মতো কিছু কিছু পণ্যের দাম হঠাৎ উঠে যায়। এটাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সে সময় প্রয়োজন হয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে পণ্য আমদানির। কিন্তু ডলার সংকটে আমাদের আমদানি বন্ধ থাকায় তখন আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।

পাশাপাশি পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর রাখার কথা বলছেন তারা। এর বাইরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কীভাবে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যায়, সেদিকে সরকারের অবশ্যই নজর রাখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close