reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সিসার দূষণ নিয়ন্ত্রণে চাই জোরদার উদ্যোগ

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এটি কোনো আপ্তবাক্য নয়। বলা যায় শতভাগ সত্য। অথচ বাবা-মায়ের কোল আলো করে যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, সেই সন্তানকেই কি না নিজের অজান্তে বিষ খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন বাবা-মা। শুধু কি বিষ খাওয়াচ্ছেন? শিশুরা ভয়াবহ দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে বাধ্য হচ্ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে সাড়ে তিন কোটি শিশুর রক্তে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসা আছে বা তারা সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত। আইসিডিডিআরবি ও আইইডিসিআর যৌথভাবে এই ভয়াবহ তথ্য উপস্থাপন করেছে। ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স ইভাল্যুয়েশন (আইএইচএমই) মতে, সিসার কারণে বাংলাদেশে মৃত্যুহার বিশ্বে চতুর্থ।

রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে বুদ্ধিমত্তা কমিয়ে দিচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্করা প্রাণ হারাচ্ছেন হৃদরোগজনিত কারণে। দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, সিসা দূষণের কারণে ক্ষতির পরিমাণ আগে, যা অনুমান করা হয়েছিল বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে দেশে সিসা দূষণের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের বুদ্ধিমত্তার সূচক বা আইকিউ পয়েন্ট প্রায় দুই কোটিরও বেশি কমে গেছে; বাড়ছে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি, গুনতে হচ্ছে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি। কমে যাচ্ছে বার্ষিক জিডিপি। সিসা বিষক্রিয়ার শিকার হলে শিশুদের বুদ্ধি কমে যায়, পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ে, মনোযোগে সমস্যা হয়, আচরণগত সমস্যা যেমন মেজাজ খিটখিটে, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যায়। ২৫ বছর বা তার ঊর্ধ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সিসা দূষণের কারণে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে, যার কারণে বছরে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর শিকার হচ্ছে, যা আগের অনুমানের চেয়ে চার গুণ বেশি। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘ভয়ংকর বার্তা দিচ্ছে সিসা দূষণে’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ২০১৯ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, সিসা দূষণে শূন্য থেকে চার বছর বয়সি বাচ্চারা প্রায় দুই কোটি আইকিউ পয়েন্টস হারাচ্ছে। এতে শিশুদের বুদ্ধির যথাযথ বিকাশ হচ্ছে না। ফলে নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে তাদের যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি আচার-ব্যবহারেও নানা অসংগতি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া খাবারে অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ- এ রকম নানা সমস্যাও তৈরি করছে। প্রকাশিত গবেষণাটির অংশ হিসেবে খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০০টি নমুনা সংগ্রহ করে সিসার উপস্থিতি পরিমাপ করে দেখেছে নিউইয়র্কভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘পিওর আর্থ’। এগুলোর মধ্যে ২৪ শতাংশ নমুনাতেই মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বলাবাহুল্য, মানদ- থাকা সত্ত্বেও, ডেকোরেটিভ এবং শিল্প খাতে ব্যবহৃত রং বা পেইন্টগুলোতে এখনো উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া যায়। বলা হচ্ছে, বেশ কটি জাতীয় এবং বহুজাতিক কোম্পানি এখনো মানদ- অনুসরণ করে না। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য, বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ, শিল্প খাতে ব্যবহৃত রঙের মান উন্নয়ন এবং দূষণকারীদের জরিমানার আওতায় আনতে হবে। ক্রমাগত অ্যাডভোকেসি এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে মাল্টি-সেক্টরাল উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আশা করি, পরিবেশ ও প্রজন্মকে রক্ষায় সশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিসার দূষণ নিয়ন্ত্রণে আরো জোরদার উদ্যোগ নেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close