অধ্যক্ষ ইয়াছিন মজুমদার

  ১৬ এপ্রিল, ২০১৮

নিবন্ধ

মেরাজ : জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎস

রাসুল (সা.)-এর মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দেস গমন, সেখান থেকে মহাশূন্য পাড়ি দিয়ে একে একে আকাশসমূহ পরিভ্রমণ, সিদরাতুল মুনতাহা গমন, জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শনসহ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিদর্শনগুলো দর্শন করে ফের মক্কায় ফেরত আসাকে মেরাজ বলা হয়। আল্লাহপাক বলেন, মহামান্বিত (প্রভু) যিনি তার (এক) বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে গেলেন, যার পারিপার্শ্বিকতাকে আমি বরকতপূর্ণ করে রেখেছিলাম। আমি যেন তাকে আমার নিদর্শনগুলো দেখাতে পারি। অবশ্যই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত-১)। মেরাজের ঘটনা মোটামুটি মুসলমানরা কমবেশি অবগত আছে। তাই মেরাজের মূল ঘটনা বিস্তারিত আলোচনা না করে মেরাজের ঘটনা শল্যচিকিৎসা, মহাকাশ গবেষণাসহ জ্ঞানবিজ্ঞানের গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করার উৎস। মেরাজকে গবেষণা করেই আজকের জ্ঞানবিজ্ঞান উন্নতির স্তরে এসে পৌঁছায়।

রাসুল (সা.) বলেন, আমি কাবার হাতিমে শায়িত ছিলাম। আমার নিকট (ফিরিস্তা) আগমন করল। অতঃপর আমার বক্ষ থেকে পেটের নিচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করল, জমজম পানি দিয়ে ধৌত করা হলো এবং স্বর্ণের পাত্রে ইমান ও হেকমত আনা হলো তা আমাতে স্থাপন করা হলো (মুসলিম)। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপারেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, মেরাজের ঘটনার আগে অপারেশন বিষয়ে মানবজাতি ছিল অজ্ঞ, নবী (সা.)-এর বক্ষ বিদীর্ণ করা, অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসার গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। স্বর্ণের পাত্র ব্যবহারের হেকমত হলো অপারেশনের যন্ত্রপাতি ও পাত্র হতে হয় জীবাণুমুক্ত। অন্যান্য পাত্র থেকে স্বর্ণের পাত্র জীবাণুমুক্ত করা সহজ। মূল্যবান স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার সম্ভব না হলেও জীবাণুমুক্ত পাত্র হিসেবে স্টেনলেস স্টিলের পাত্র অপারেশনের সময় ব্যবহৃত হচ্ছে। জমজমের পানি মোটামুটি জীবাণুমুক্ত, তা ব্যবহৃত হয়েছে অপারেশনের পর নবী (সা.)-এর বক্ষ দেশে বা দেহে কোনো চিহ্ন বিদ্যমান ছিল না। এ গবেষণার ফলে বর্তমানে কসমেটিক সার্জারির উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। যাতে অপারেশনের পর কোনোপ্রকার চিহ্ন দেখা যায় না। আরবের লোকের বাহন ছিল উট, ঘোড়া, গাধা ইত্যাদি। বোরাক নামক কোনো বাহনের কথা তাদের ছিল সম্পূর্ণ অজানা। তৎসময়ে যে সাহিত্যচর্চা হতো, সাহিত্যে বোরাকের কোথাও উল্লেখ ছিল না। তৎসময়ে তাদের অভিধানে বোরাক নামক কোনো বাহনের অস্তিত্ব ছিল না। বোরাক শব্দের শাব্দিক অর্থ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎচালিত বা বিদ্যুৎগতির বাহনের মাধ্যমে তিনি বায়তুল্লাহ থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। এ বাহন ও ভ্রমণ মানবসভ্যতায় বিদ্যুৎ আবিষ্কার, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও দ্রুতগতির যানবাহন আবিষ্কারের গবেষণার পথ উন্মুক্ত করে দেয়। ফলে বিদ্যুৎ আবিষ্কার ও আজকের পরিবহন সেবায় দ্রুত গতির যানবাহন আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে।

বায়তুল মোকাদ্দেস থেকে আকাশে আরোহণের জন্য চলন্ত সিঁড়ির ব্যবহার, সেখান থেকে আরো ঊর্ধ্বে আরোহণের জন্য ক্যাপসুল লিফট (রফরফ) ব্যবহারের উল্লেখ করা হয়েছে। এ কথা সর্বজনবিদিত যে চলন্ত সিঁড়ি বা লিফট ব্যবহার দূরে থাক জাহেলি আরবে এগুলো মানুষের কল্পনাশক্তির মধ্যে ও ছিল না। এ যন্ত্রগুলোর ব্যবহারের উল্লেখ লিফট আবিষ্কার, বহুতল ভবন নির্মাণ ও তাতে আরোহণের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ আবিষ্কারের পথকে উন্মুক্ত করেছে। জাহেলি আরবের লোক মহাশূন্যের দিকে যাওয়ার কল্পনাও করেনি কিন্তু মেরাজের ঘটনা মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশে অভিযান ও আবিষ্কারের পথকে উন্মুক্ত করেছে। বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের সূত্রানুসারে মধ্যাকর্ষণ শক্তি ডিঙ্গানো সম্ভব নয়। বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা অনেকটা এ ধারণা পোষণ করত। তাহলে নবী (সা.)-এর মেরাজ গমন কেমন করে সম্ভব হলো? সত্তরের দশকে বিজ্ঞানীরা চাঁদে পৌঁছানোর মাধ্যমে প্রমাণ করে মধ্যাকর্ষণ শক্তি ডিঙ্গানো সম্ভব। গতি বিজ্ঞানীরা বলে, ঘণ্টায় ২৫ হাজার মাইল বেগে ঊর্ধ্বাকাশে ছুটলে পৃথিবীর আকর্ষণ ভেদ করে ওঠা সম্ভব। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি অব টাইম তথাসময়ের আপেক্ষিকতার বিষয়টি মেরাজের ঘটনা বুঝতে সহায়ক। দ্রুত গতির রকেট আরোহীর সময় জ্ঞান আর একজন স্থিতিশীল পৃথিবীবাসীর সময় জ্ঞান এক নয়। রকেট আরোহীর দুই বছর পৃথিবীর ২০০ বছরের সমান হতে পারে। অন্যদিকে ওপরের দিকে উঠতে থাকলে বস্তুর ওজন ও কমে যেতে থাকে। বারো হাজার মাইল ঊর্ধ্বে বস্তুর ওজন এক পাউন্ডের স্থলে এক আউন্স হয়ে যায়। ইচ্ছে করলে মহান রাব্বুল আলামিন কোনো বাহন ছাড়া নবী (সা.)-এর দেহ মোবারককে শূন্যে উঠিয়ে দ্রুত স্থানান্তরের মাধ্যমে মেরাজ সংগঠন করতে পারতেন কিন্তু তা না করে যন্ত্র বা বাহনের মাধ্যমে করিয় যেন এ কথা বুঝিয়ে দিলেন হে আমার বান্দারা তোমরা গবেষণা করো, গবেষণা করে এমন যন্ত্র আবিষ্কার কর, যা দিয়ে মহাশূন্যে ভ্রমণ করে গ্রহ, নক্ষত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে আমার অসংখ্য কুদরত অবলোকন করতে পার।

বহু বছর আগের ইন্তেকাল হয়ে যাওয়া নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, জান্নাত জাহান্নামের চিত্র দেখানো পূর্ববর্তী বিষয় নিয়ে গবেষণা, রেকর্ড যন্ত্র, ভিডিও যন্ত্রের আবিষ্কারের পথকে উন্মুক্ত করেছে। মেরাজ থেকে যখন ফিরে এলেন, এ ধরনের ঘটনা মক্কার কাফিররা বিশ্বাস করল না, তারা নবী (সা.)-কে মিথ্যাবাদী মনে করল। নবী (সা.) তাদের এ অলৌকিক ঘটনা কীভাবে বিশ্বাস করাবেন চিন্তিত হলেন, নবী (সা.) বলেন, আমাকে কুরাইশরা মিথ্যাবাদী মনে করল, আমাকে পরীক্ষা করার জন্য তারা একত্র হলে আমি কাবার হিজর নামক অংশে দাঁড়ালাম। আল্লাহপাক আমার সামনে সম্পূর্ণ বায়তুল মোকাদ্দাসের চিত্র তুলে ধরলেন। তারা বায়তুল মোকাদ্দাসের বিভিন্ন বিষয় (দরজার সংখ্যা, জানালার সংখ্যা, রং, আশপাশের জিনিস, নির্মাণশৈলী) নিয়ে প্রশ্ন করল আর আমি দেখে দেখে তা বলে দিলাম (বোখারি)। দূরের জিনিস হুবহু চোখের সামনে দেখা থেকেই আজকের টেলিভিশন, ইম্যু, ই-মেইল, ইন্টারনেট, টেলিস্কোপ, মোবাইল ইত্যাদি আবিষ্কারের পথকে উন্মুক্ত করেছে। জাহেলি যুগের মানুষের যেখানে অক্ষরজ্ঞান ছিল সীমিত। জ্ঞানবিজ্ঞান বলতে কিছুই ছিল না, মহাকাশ সম্পর্কে তারা ছিল সম্পূর্ণ অজ্ঞ। রাসুল (সা.) কখনো বায়তুল মোকাদ্দাছ গমন করেন নি। সে ক্ষেত্রে উল্লিখিত ঘটনাগুলোর বিষয়ে লেখার কলেবর বৃদ্ধি না করে সংক্ষেপে এতটুকু বলাই যথেষ্ট, মেরাজ জ্ঞানবিজ্ঞান গবেষণার পথিকৃত।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist