শিলমুন নাহার মুন

  ১৯ মে, ২০২২

পরিবেশবন্ধু ডেব্রিস লোডার

আধুনিক সভ্যতা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে প্রকৃতির অবদান। প্রকৃতি দুহাত ভরে মানুষকে দান করেছে তার অমূল্য সম্পদ। প্রকৃতির সেই দান ব্যবহার করে মানুষ গড়েছে তার নিজের পরিবেশ। গড়ে তুলেছে নিজের আরামণ্ডআয়েশের উপায়। আর এভাবে শুধু নিজের কথা ভাবতে গিয়ে মানুষ প্রকৃতিকে করে ফেলেছে অসহায়, পরিবেশকে করে ফেলেছে দূষিত। মানুষের অবহেলা আর অসচেতনতার কাছে প্রকৃতির অসহায়ত্ব বেড়েছে। বর্তমান সময়ে বাইরে বের হলেই দেখা যায় যেখানে-সেখানে পড়ে আছে পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল, কাচের বোতল, কাগজের ঠোঙ্গা ইত্যাদি। যে যার মতো করে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে দেয়। বাতাসে উড়ে এসব ময়লা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। আর এভাবেই দূষিত হয় পরিবেশ। এতে বেড়ে গেছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধছে মানুষ ও প্রাণির শরীরে। শুধু মানুষ অথবা প্রাণীই নয়, পরিবেশের ভারসাম্যের ওপরও পরিবেশ দূষণের প্রভাব ভয়াবহ।

চারদিকে সবাই যখন পরিবেশ দূষিত করায় ব্যস্ত ঠিক তখনি পরিবেশের কথা ভেবেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবুল বাশার রাজ। পরিবেশ সচেতন এই তরুণ আবিষ্কার করেছেন ময়লা আহরণকারী যন্ত্র। তার উদ্ভাবিত এই যন্ত্রের নামণ্ড ‘ডেব্রিস লোডার’ বা ‘ধ্বংসাবশেষ/ময়লা আহরণকারী।’

আবুল বাশার রাজ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি গ্যাসলাইন রোড, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তার পিতা মোহাম্মদ আলী একজন ব্যবসায়ী এবং মাতা কানিজ কুমকুম একজন গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মধ্যে রাজ মেজো। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে তিনি ২০২০-২১ সেশনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন।

চারপাশের পরিবেশ দূষণ এবং এই দূষণজনিত কারণে অনেক ধরনের রোগব্যাধির ফলে মানুষের ভোগান্তি যা রাজের মনকে নাড়া দেয়। তাই পরিবেশ দূষণ থেকে দেশকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে এমন কিছু করার কথা ভাবতে থাকেন তিনি। অবশেষে দীর্ঘ চিন্তাভাবনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ‘ডেব্রিস লোডার বা ময়লা আহরণকারী’ যন্ত্র বানাতে সক্ষম হন।

ডেব্রিস লোডার যন্ত্র দিয়ে রাস্তা, বাগান, খেলার মাঠ, অফিস প্রাঙ্গণ, বড় বড় কলকারখানার কঠিন রাসায়নিক বর্জ্য, প্লাস্টিকের বর্জ্য পদার্থ, হাসপাতালের সংক্রামক বর্জ্য, পলিথিন ইত্যাদি খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। এছাড়াও রাস্তার লেন ডিভাইডারের পাশে জমে থাকা ধুলাবালি, কাগজ, পার্কে পড়ে থাকা বাদামের খোসা, চানাচুরের কাগজ সবকিছুই টেনে নিতে পারে এই যন্ত্র। এই যন্ত্রের আবর্জনা টেনে নেওয়ার প্রবণতার কারণে ময়লা পরিষ্কারের সময় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের হাত, পা অথবা শরীরের যেকোনো অংশকেই ময়লার সংস্পর্শে আসা থেকে রক্ষা করবে। অপরদিকে ধুলাবালির ছড়ানো রোগব্যাধি থেকে পরিত্রাণের জন্য এই যন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে। ব্যাটারিচালিত এই যন্ত্রের চার্জনির্ভর করবে কতটুকু জায়গা পরিষ্কার করা হবে তার ওপর এবং এটি রিচার্জেবল।

এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল বাশার রাজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ইচ্ছা জাগে দেশের জন্য কিছু করার। আমাদের আশপাশে পরিবেশ দূষণ এবং এই দূষণজনিত কারণে অনেক ধরনের রোগব্যাধি ছড়ায়। তাই ভাবলাম কীভাবে পরিবেশবান্ধব একটা যন্ত্র বানানো যায়, যা দিয়ে খুব সহজেই পরিবেশের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পেলে এই যন্ত্রকে আরো উন্নত এবং সব জায়গায় ব্যবহার উপযোগী করা যাবে।’

তার এই প্রজেক্ট এর ব্যাপারে পরিবারের সহযোগিতার বিষয়ে রাজ বলেন, ‘প্রথমে বাসা থেকে সহযোগিতা করতে চায়নি। অনেক কষ্টে বাবাকে রাজি করিয়েছি। অবশেষে সফলভাবে এই যন্ত্র বানাতে পেরেছি।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যাচেলর অব টেকনোলজি (বি. টেক) শেষ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে গ্র্যাজুয়েশন করতে চাই। সবচেয়ে বড় ইচ্ছা নাসায় কাজ করার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close