আল মাসুম হোসেন, কুবি

  ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

কুবি ফার্মা ফ্যামিলির সুন্দরবন ভ্রমণ

মায়া জুড়ানো, স্নিগ্ধতার পরশ ছোঁয়ানো ছোট-বড় লালমাটির পাহাড় ও গাছপালার ছায়ায় ঘেরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ক্যাম্পাস। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। দক্ষ ফার্মাসিস্টের চাহিদা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে একযুগ পূর্বে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) বিজ্ঞান অনুষদের সর্বকনিষ্ঠ বিভাগ হিসেবে ২০১৩ সালে ফার্মেসি বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। ফার্মেসি বিভাগে সব সময়ই পাঠদানের পাশাপাশি পাঠ্যক্রমের বহির্ভূত নানা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোর মধ্যে ক্যারিয়ারবিষয়ক সেমিনার, শিক্ষাসফর, ফেস্ট ও ফার্মাসিস্ট ডে পালনসহ ইত্যাদি, তবে এর মধ্যে বার্ষিক শিক্ষাসফর অন্যতম। এসব কার্যক্রম বিভাগের নিজস্ব ক্লাব কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ফার্মেসি সোসাইটি (কাপস) দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। আগের মতো সময় হয়ে যায় আবারও শিক্ষা সফরের, তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষাসফরে কোথায় যাওয়া যায় তা নিয়ে শুরু হয় মতামত সংগ্রহ। ফার্মেসি বিভাগে বর্তমানে অনার্স, মাস্টার্সসহ বিভাগে ছয়টি ব্যাচ সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার মতামত আসছিল যেমন কেউ কক্সবাজার, কেউবা সেন্ট-মার্টিন, সাজেক, রাঙ্গামাটি অথবা সুন্দরবন। আর সেটাই স্বাভাবিক কেননা ব্যক্তিভেদে পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন হয়। কারণ কেউ ভালোবাসে পাহাড়, কেউ সমুদ্র ও কেউবা বনজঙ্গল। সবশেষে কাপস কমিটি সিদ্ধান্তে আসতে না পেরে ভোটের ব্যবস্থা করেন আর একাধিক ভোটের ভিত্তিতে শিক্ষাসফরের স্থান নির্ধারিত হয় সুন্দরবন। তারই নিমিত্তে সফরের তারিখ ঠিক করা, বিভাগের শিক্ষকদের সম্মতি গ্রহণ, চাঁদা নির্ধারণ, ট্যুর এজেন্সি ও গাড়ি ঠিক করাসহ ইত্যাদি সব কাজের মাধ্যমে বিভাগে ছোট-বড় সবার মাঝে ট্যুরের আমেজ সৃষ্টি হয়। হাজার বছর পূর্বে হিমালয়ের মাটি ও খনিজ বাহিত হয়ে সৃষ্ট সুন্দরবন একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়ের নাম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রয়েছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৫৪৬৭ বর্গকিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন। ১৯৯৭ সালে ইউনেসকো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সুন্দরবনকে জীব ও উদ্ভিদ জাদুঘর বললেও কম বলা হবে। সুন্দরবনের ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিচিত্র নানা ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন পরিচিত। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রাণী। সুন্দরী বৃক্ষের প্রাচুর্যের কারণে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়। এ ছাড়া এর অপর নাম সমুন্দরবন যেটা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে সুন্দরবনে পরিণত হয়েছে। সুন্দরবন সম্পর্কে বলতে গেলে আরো একটি জিনিস না বললেই নয়, যা আমাকে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যান্বিত করেছে। তা হলো এখানে প্রচলিত অরণ্যের দেবী রূপে পূজিত বনবিবি, বিবি মা ওলাবিবি, শিশুসন্তান রক্ষাকারী পাঁচু ঠাকুর, কুমির দেবতা কালু ঠাকুর ইত্যাদি মিথ বা রূপকথার গল্প। তবে সুন্দরবন বা দক্ষিণবঙ্গে মানুষের পদচারণার পেছনে যার নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় তিনি হলেন হজরত খান জাহান আলী (রহ.)। যাই হোক, এবার চোখ রাখা যাক শিক্ষাসফরের দিকে, আমাদের ট্যুরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন কাপসের বর্তমান সহসভাপতি ফাহমিদা জামান আপু। প্রমোদভ্রমণের তারিখ নির্ধারিত হয় ৪ মার্চ সোমবার। কিন্তু এদিকে সময় যেন কাটে না সবার মনের মধ্যেই উত্তেজনা সুন্দরবন ভ্রমণকে ঘিরে। শিক্ষাসফরে গিয়ে আমরা কী করব আর কী করব না, প্ল্যানিং ও শিষ্টাচার সম্পর্কিত বিস্তারিত মিটিং হয় আগের দিন দুপুর ১২টায়। অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে হাজির হলো কাঙ্ক্ষিত সেদিন। যেহেতু আমাদের খুলনা গিয়ে সকালবেলা জাহাজে উঠতে হবে, তাই কুমিল্লা থেকে রাতে রওনার জন্য একে একে সব ভ্রমণপিপাসু কুবি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন : ফাস্ট এইড বক্স, বাদ্যযন্ত্র, ব্যানার ইত্যাদি সবকিছু নিয়ে উঠে যাই বাসে।

সুন্দরবন ভ্রমণের রুটপরিকল্পনা ছিল প্রথমে বাসে করে কুমিল্লা থেকে খুলনা পৌঁছানো। তারপর জাহাজের মাধ্যমে সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা করা। পরিকল্পনামাফিক ৭৫ শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে দুটি বাস নিয়ে ৪ মার্চ রোজ সোমবার রাত ১১টার দিকে খুলনার উদ্দেশে রওনা করেন। প্রথম বাসে কামরুল হাসান শিখন স্যারসহ ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আর দ্বিতীয় বাসে ড. জান্নাতুল ফেরদৌস ম্যাম, বিদ্যুৎ কুমার সরকার স্যারসহ, ৪র্থ, ৭ম, ৮ম ও ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা হয়ে পদ্মা সেতু হয়ে প্রায় ২৯৫ কিমি দূরে অবস্থিত বিআইডব্লিউটিএ খুলনা নদীবন্দরে পরের দিন সকাল ৭টায় পৌঁছে যায়। এরপরই শুরু হয় জাহাজে নিজ নিজ ক্যাবিনে মালপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র তোলা। আমাদের ভ্রমণের সঙ্গী হলো মোহাম্মদী ২ জাহাজ। জাহাজে সবার ব্যাগ লাগেজ ঠিকঠাকভাবে তুলতে তুলতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। এরপর জাহাজের মালিক ও এজেন্সির কর্ণধার মিলন সাহেব আমাদের পরবর্তী ৩ দিনের কার্যক্রম সম্পর্কে নির্দেশনা দেন এবং বেলা সাড়ে আটটা নাগাদ সুন্দরবনের প্রথম স্পট বাগেরহাটের আন্ধারমানিকের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন মোহাম্মদী ২ জাহাজের ক্যাপ্টেন। যাত্রাকালেই আমাদের সবাইকে সকালের নাশতা পরিবেশন করেন। রূপসা নদীর বুক বেয়ে ভেসে চললাম আমরা। পথিমধ্যে খান জাহান আলী ব্রিজ, মোংলা সমুদ্রবন্দর, অদূরের গ্রাম, সবুজ মাঠ, খেত দেখতে দেখতে জাহাজ এগিয়ে চলে। দুপুর ২টা নাগাদ জাহাজ পৌঁছে যায় আন্ধারমানিক। কিন্তু দুপুরের খাওয়ার সময় হলে একেবারে খেয়েদেয়ে তারপরই আমরা ছোট ইঞ্জিনচালিত বোটে করে আন্ধারমানিক পৌঁছাই। শেলানদী ও গুষনবাড়িয়া খালের ত্রিমোহনা চারদিকে গভীর আরণ্য ও বন্যপ্রাণীর সমাহার ৮০০ মিটার ফুট ব্রেইল মিলিয়ে সুন্দর এক পরিবেশ। সুন্দরবনের মধ্যে আন্ধারমানিক একটি ইকোট্যুরিজম। এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, পাখি এবং দাগযুক্ত হরিণ ইত্যাদি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এখানে পশুর, ধুন্দল, গরান, বাইন, কাঁকড়া, কেওড়া ইত্যাদি গাছও প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। তবে এ বনের প্রধান বৃক্ষ প্রজাতি সুন্দরী এবং গেওয়া। সবাইকে আন্ধারমানিক সম্পর্কে খুটিনাটি বিস্তারিত তথ্য দেন মামুন সাহেব আমাদের ট্যুর গাইড। আন্ধারমানিক ঘোরা শেষ করে আবারও জাহাজে ফিরে এসে নতুন জায়গার উদ্দেশে রওনা হই আমরা। এবার মোটামুটি ৯ ঘণ্টার দীর্ঘযাত্রা শেষে রাত ১২টার দিকে জাহাজ নোঙর করে কটকা খালে। এ যাত্রা পথের গোধূলির সময় বন জঙ্গলের গা ছমছম করা নিস্তব্ধতা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য ছিল। আর সন্ধ্যার পরেই মানসুরা তালুকদার আপুর নেতৃত্বে শুরু হয়ে যায় প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে রাতের খাওয়া শেষে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে বলেন এজেন্সির কর্ণধার মিলন সাহেব, কেননা পরের দিন খুব সকালে উঠতে হবে। দ্বিতীয় দিন খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ইঞ্জিনচালিত বোটের সাহায্যে কটকা খালের দক্ষিণ দিকে জামতলা খাল দিয়ে পৌঁছে যাই জামতলা বোট টার্মিনালে। এরপর জামতলা ফুট ট্রেইল ধরে হাঁটা শুরু হয় জামতলা সি বিচের দিকে। এই ট্রেইল ধরে সামনে এগোলে চোখে পড়ে নতুন-পুরাতন দুটি ওয়াচ টাওয়ার, পশুপাখির জন্য সুপেয় পানির পুকুর, ছনবনে হরিণের চারণ, বানরসহ ইত্যাদি জীবজন্তু। টাওয়ারে যাওয়ার সরু পথের মাঝে মাঝে হেতালের ঝোপ আর টাইগার ফার্ন। বাঘের লুকিয়ে থাকার আদর্শ জায়গা এগুলো। জামতলা ওয়াচ টাওয়ারকে পিছু ফেলে সোজা উত্তরে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গেলে জামতলা সমুদ্র সৈকত। পথ চলতে চলতে চোখে পড়ে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন আকারের জামগাছ, এখানেই সৈকতটির নামের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। এ ছাড়া ছাতার মতো দেখতে অনেক কুলগাছ রয়েছে, এগুলো হরিণদের সৃষ্ট ছাতা, ওরা যেটুকু নাগাল পায় খেয়ে পরিষ্কার করে, তাই নিচের দিকে এগুলো আর আসতে পারে না। এই দীর্ঘ ফুট ট্রেইলে চলতে চলতে পূর্বদিকে সূর্যকে উঠতে দেখি আমরা। তবে সমুদ্র সৈকত থেকে অবলোকনকৃত সূর্যোদায়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সৈকত সেখানে উপস্থিত সবার মনকে চাঙা করে তোলে। এখানে বেলাভূমি জুড়ে আঁকা থাকে লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। আর জোয়ারের ঢেউয়ে ধুয়ে যাওয়া গাছের শেকড়। আবারও বোট টার্মিনালে এসে কটকা খালের উত্তর দিকে অবস্থিত কটকা অভয়ারণ্যে পৌঁছে গেলাম। কটকা বন বিভাগ কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখী ইটের তৈরি টেইলের উত্তর পাশের খালটির ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল দেখা যায়। এ ছাড়া একটু নিরিবিলি স্থানে যেতে পারলে দেখা যায় চিত্রা হরিণের দল। এখান থেকে খানিকটা পশ্চিমে এগুলেই দেখা মিলবে ইট বাঁধানো সংক্ষিপ্ত একটি পথের। এরপর আরেকটু সামনে গেলে সমুদ্র সৈকত। অভয়ারণ্যে সুন্দরী গাছের চেয়ে কেওড়া গাছের উপস্থিতি নজর কাড়ে। এখানে ঘোরা শেষে আবারও ফিরে আসি মোহাম্মদী-২-তে এবং ছুটে চলি নতুন গন্তব্যের উদ্দেশে। পাক্কা ৫ ঘণ্টা পর জাহাজ কটকার থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে গিয়ে পৌঁছায় রাসমেলা এবং শুঁটকি পল্লীর জন্য সুপরিচিত সুন্দরবনের দুবলার চর। আসলে কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝের দ্বীপ এই দুবলার চর। এটি অনেকের কাছে চর মনে হলেও আমার কাছে স্বকীয় এক সৈকত মনে হয়েছে। দুবলার চর মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শোকানোর কাজ। বর্ষা মৌসুমের ইলিশ শিকারের পর বহু জেলে চার মাসের জন্য ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে। এখানকার বাজারে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে কখন কেউ টেরই পাইনি। যখন টের পেলাম তখন অলরেডি একদল জাহাজে চলে গেছে বাকিরাও তাড়হুড়ো করে ছোট বোটের সাহায্যে উঠে যাই জাহাজে। সন্ধ্যার পর আবারও শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উভয়ের অংশগ্রহণে নাচণ্ডগান, রম্য বিতর্ক, বিভিন্ন ইনডোর গেমস ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। বারবিকিউ পার্টি ও খাওয়া-দাওয়া শেষে এবার জমে উঠে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে আড্ডা, যা শেষ হয় প্রায় রাত ৩টার দিকে।

শেষ দিনে ঘুম থেকে উঠে ছোট বোটে করে চলে যায় সর্বশেষ স্থান করমজল পর্যটনকেন্দ্রে। পর্যটনকেন্দ্রের প্রথমেই রয়েছে সুন্দরবনের মানচিত্র, যা সুন্দরবন সম্পর্কে মানচিত্র প্রাথমিক ধারণা দেয়। সামনে আঁকাবাঁকা সিমেন্ট তৈরি মাঙ্কি ট্রেইল নামের হাঁটা পথ ধরে এগিয়ে গেলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধতা সম্পর্কে অনুমান করা যায়। পুরো ট্রেইল জুড়েই দেখা মিলবে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা রেসাস বানরের। প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিণে পথের মাথায় একটি শেড থেকে পশ্চিম দিকে গেলে আরো একটি কাঠের নির্মিত ট্রেইল দেখতে পাবেন। এই পথ আপনাকে নিয়ে যাবে কুমির এবং হরিণ প্রজনন কেন্দ্র এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে। এই টাওয়ার থেকে আশপাশের সৌন্দর্য্য দেখে আপনার মন নিশ্চিত প্রশান্তিতে ভরে যাবে। দেশে প্রাকৃতিকভাবে কুমির প্রজননের একমাত্র কেন্দ্র এখানে অবস্থিত। সামনেই ছোট অনেকগুলো চৌবাচ্চা।

কোনোটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমির ছানা, কোনোটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনোটিতে আরো একটু বড় বয়সের লোনা জলের কুমিরের বাচ্চা। এসব কিছু পর্যবেক্ষণ শেষে সবাই মিলে ছবি তুলে আবারও ইঞ্জিন চালিত বোটের মাধ্যম পশুর নদী থেকে সুন্দরবন দেখতে উঠে পড়ি আমরা। সবকিছু শেষে এবার মোহাম্মদী-২-এর বাড়ি ফেরার সময় হয়ে যায়। জাহাজের মধ্যে এবার শুরু হয় র‌্যাফেল ড্র, সবচেয়ে মজার ছিল শিক্ষকদের নামের টিকিট নিলামে তোলা। তারপর দুপুরের ভূরিভোজ সেরে আমরা জাহাজ থেকে নেমে বাসে করে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দিই, পথিমধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোরা ও মাওয়াতে বিখ্যাত ইলিশ সাথে বেগুন ভাজা দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে পরের দিন সকাল ৯টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছাই। গানের আসর, হাসি, ঠাট্টা রঙ্গতামাশা ও গল্পগুজবের মধ্য দিয়ে ফার্মা ফ্যামিলির সবার তিন দিন কোন দিক দিয়ে শেষ হয়ে গেছে, কেউ টেরই পাইনি। ট্যুর শেষে একটাই উপলব্ধি যে ডিপার্টমেন্টের এমন ট্যুর সবার জীবনেই আসুক। বাংলাদেশের ফুসফুস বলা হয় সুন্দরবনকে কিন্তু দিনে দিনে এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আইলা, সিডর, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি সবকিছু থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে চলছে এই বন। আবার সাধারণ মানুষের কাছে এগুলো শুধুই গাছপালা কিন্তু আমাদের মতো ফার্মাসিস্টদের চোখে পুরো বনই বিভিন্ন রোগব্যাধির ওষুধের উৎস। তাই আমাদের দেশের সরকারসহ সবার উচিত সুন্দরবনকে রক্ষায় একত্রে কাজ করা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close