মো. ফজলুল হক, বেরোবি

  ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

মুখ-নিঃসৃত কথা হোক হাসির নিয়ামক

সৃষ্টি জগতে মানুষকে আল্লাহ সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে তৈরি করেছেন। সেই সঙ্গে মানুষকে দিয়েছেন অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, সুন্দর ও পরিপাটি আকৃতি এবং এটা এতটাই মৌলিক যে পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের বসবাস থাকলেও প্রত্যেকটি মানুষকে সবার থেকে আলাদা করা যায় খুব সহজেই। এদের চেহারা, এদের ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ মৌলিক সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গই প্রত্যেকের থেকে আলাদা। এদের রয়েছে যথেষ্ট বৈচিত্র্য। সেই বৈচিত্র্যের সূত্র ধরেই কেউ কিছুটা সুন্দর, অনেক সুন্দর। কেউ আবার দেখতে তুলনামূলক কম সৌন্দর্যের অধিকারী হয়ে থাকে। যেটার পেছনে মানুষের নিজের কোনো রকমের হাত নেই।

কিন্তু আমাদের সমাজে চলাফেরা করতে গিয়ে আমরা অনেক সময়ই মানুষের এই শারীরিক আকৃতি এবং তার গঠন নিয়ে অন্যদের নিজের অজান্তেই কষ্ট দিয়ে থাকি। শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের এই ভিন্নতা উল্লেখ করে আমরা অনেক সময়ই অন্যদের ছোট করি, হাসিঠাট্টা করি তাকে নিয়ে। যেটা ওই? মানুষটার সমস্ত মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট! আমি নিজে এক দিন এমনই একটা পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গিয়েছি। যেখানে আমার এক আত্মীয়র পরিচিত ব্যক্তি তার (আত্মীয়) সঙ্গে আমার তুলনা করে বলেছিলেন, ‘তার মতো তোমার নাকও বড়! কথাটা বড় না, খুব একটা অপমানজনক যে তাও না। কিন্তু আমি খেয়াল করেছি, সেদিনের পর থেকে দৈনন্দিন প্রয়োজনে যখনই আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি, আমার জাগতিক সব পরিস্থিতি ভুলে গিয়ে আমার একবারের জন্য হলেও মনে হয়েছে, ‘আমার নাক কি সত্যিই বড়? আমাকে কি অনেক বাজে দেখায়?’ বন্ধু মহলে ঘুরতে গিয়ে যখন ছবি তোলার ইচ্ছে হয়, ওই একটা কথাই কানে বাজে, ‘তার মতো তোমার নাকও বড়!’ ব্যাস আমার ছবি তোলার উদ্যম মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায়! এক পরিবারে বাচ্চা হয়েছে। নবজাতকের একটা ৭ বছর বয়সি বড় বোন আছে। নবজাতককে কোলে নিয়ে বড় বোনকে পাশে রেখেই এক নিকটাত্মীয় মতামত দিয়ে বসলেন, ‘বাচ্ছার ওষ্ঠ দুটি তোমার মতোই হবে, খাটো আর ওপরের দিকে ভাঁজ হয়ে যাওয়া!’ আমি স্বচক্ষে দেখলাম মুহূর্তেই মেয়েটার মনের সব আনন্দ হাওয়া হয়ে গেল। মনটা মলিন আর মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলেই গেল। আপনি কথাটা বলায় ওর ওষ্ঠ যেমন ঠিক হয়নি, তেমনি ওই মেয়েটা চাইলে এটা পরিবর্তন করতে পারবে না এবং পাশাপাশি এটার পেছনে মেয়েটার কোনো হাত নেই। অথছ মেয়েটা আয়নার সামনে দাঁড়ালেই আপনার ওই কথাটা মনে করে হাসি লেগে থাকা প্রশস্ত ওষ্ঠ দুটি মন খারাপের গোমট অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে নিমিষেই এবং মজার ছলে বলা হলেও একই বিষয় ঘটে।

আবার উল্টোটাও সম্ভব।

যদি আপনি একজন মেয়েকে প্রশংসা করে বলেন, ‘তোমার মোটা আর কোকড়া চুল আমার সত্যিই খুব ভালো লাগে এবং এটাতে তোমাকে দারুণ মানায়!’ ওই মেয়েটার যখনই কথাটা মনে হবে, তখনই একটি বারের জন্য হলে মুচকি হাসবে! যখন আপনি এটা নিশ্চিত আছেন, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন নিয়ে তার নিজের কোনো হাত নেই, শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো প্রাধান্য নেই এবং আপনি বলার পরে সে ওটা সংশোধনও করতে পারবে না, তখন এই কথাগুলো কখনো কাউকে বলবেন না। গঠন ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে একটা মানুষের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেমন, এটা আপনার চেয়ে বরং নিজেরই বেশি জানার কথা এবং সে জানেও। মাঝখান থেকে এই কথা বলার মাধ্যমে কারো মন খারাপ এবং মনোবল ভেঙে দেওয়ার কারণ হবেন না। প্রশংসা করুন, হাসির ভাগ নিন, মনোবল বাড়িয়ে দিয়ে তার হৃদয়ে জায়গা করুণ! কষ্ট, অপমান নয়, ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন। আপনার কথা হয়ে উঠুক অন্যের হাসি ও মনোবলের খোরাক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close