‘এই সময়ে এসে শুধু মনে হয়, আমার ধুলাবালি জমা বই, আমার বন্ধুরা সব কই। আমার ভাল্লাগেনা এই মিথ্যে শহর, রাতের আড়ালে রই।’ এভাবেই প্রথম বর্ষে কাটানো দিনগুলো সম্পর্কে অনুভুতি ব্যক্ত করেন বিপু আহমেদ। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটা সময় স্মৃতিতে ভরপুর। তবে প্রথম বর্ষের স্মৃতিগুলো বেশি নাড়া দেয়। দাগ কেটে যায় মনে। এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে প্রথম বর্ষের মুহূর্তগুলোকে স্মরণ করে না। বিরাট দলবেঁধে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো। ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণায় বিচরণ। রাতের আঁধারে দলবলে গান গাইতে গাইতে ঘুরে বেড়ানো। এমন সময় শুধু প্রথম বর্ষেই আসে। আবেগ হোক কিংবা উচ্ছ্বাসে।

দিনটি ছিল শুক্রবার। তখন করোনা মহামারির হানা দেয়নি আমাদের প্রিয় মাতৃভূতিতে। জুমার নামাজের পরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই মিলিত হয়েছিলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল খেলার মাঠে। ঘুরতে আর আড্ডা দিতে দিতে কখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে টেরই পাননি কেউ। প্রথমবর্ষের মতো ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণায় বিচরণ। যেখানে যেখানে আড্ডা দিতাম সেসব যায়গায় বসে এক বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছিলাম সবাই।

গল্পের মাঝে অনেকেই প্রথম বর্ষের স্মৃতিচারণ করল। মনে পরে গেল সেই প্রথম দিনের স্মৃতি। ক্লাস শেষে মেতে উঠেছিলাম হৈ-হুল্লোরে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র ডায়না চত্বরে আমাদের মতো বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন। এছাড়াও মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব মুর‌্যালসংলগ্ন এলাকা, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, মুক্তবাংলা, টিএসসিসি, বটতলা মফিজ লেকসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি চত্বর মুখরিত হয়ে উঠেছিল সেদিন। সঙ্গে সেলফি, ক্যামেরার ক্লিকের শব্দ তো আছেই।

স্কুল, কলেজে বাঁধাধরা পড়াশোনার গন্ডি পেরিয়ে পরিবার থেকে দূরে জ্ঞানের সাগরে অবগাহন করার প্রথম ধাপ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়েই মনের মধ্যে জেগে উঠে অজানা হাজারো আকাশছোঁয়া স্বপ্ন, হাজারো অনুভূতি। নিজেদের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পথচলা শুরু করে একঝাঁক মেধাবী তরুণ। প্রতি বছর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রাণোচ্ছল চাঞ্চল্যতায় ভরে থাকে ক্যাম্পাস।

নবীনের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাঙ্গণ। আনন্দের ঢেউ যেন দোলা দেয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি বৃক্ষের শাখায় শাখায়। তাদের সাদরে বরণ করতেও চলে নানা আয়োজন। প্রথম দিনের ক্লাসেই বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতিমূলক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে দিকনির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে বিভাগের বড়রাও কিছু দিকনির্দেশনা দেন। আমাদের সঙ্গেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। শিক্ষক ও বড়দের দিকনির্দেশনা মেনে পথচলা শুরু ১৭৫ একরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না তাবাসসুম ডানা বলেন, ‘ভার্সিটি এক স্বপ্নের জায়গা, স্বপ্ন পূরণের জায়গা। প্রথম নিজের বাড়ি ছেড়ে নতুন জায়গা, নতুন মানুষ। প্রথম বর্ষে সবই একসফঙ্গ থাকাটা খুব আনন্দ দিত। সারা দিন ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া, সবার সঙ্গে আড্ডা। দিনগুলো স্বপ্নের মতো সুন্দর ছিল। এখন খুব মিস করি আগের সেই সময়গুলো। প্রথম বর্ষ মানেই অন্যরকম অনুভূতি। আবার যদি ফিরে পেতাম!’

"