মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ১৬ আগস্ট, ২০১৭

ভারত থেকে গরু আসায় দুশ্চিন্তায় খামারিরা

খামার থেকে গরু কিনলে দালাল বা ফড়িয়ার চক্রে পড়তে হয় না

আর মাত্র পক্ষকাল পরেই ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে নওগাঁর খামারিরা প্রস্তুত করেছে প্রায় তিন লাখ কোরবানির পশু। দেশীয় পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটাতে গরু মোটা-তাজাকরণ করেছেন তারা। ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় পশু পালনে ঝুঁকেছিলেন এই খামারিরা। কিন্তু ঈদের আগে হঠাৎ করে ভারত থেকে গরু আসতে শুরু করায় তাদের মধ্যে চলছে হতাশা। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন নওগাঁর খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৪৫৬টি খামারের মাধ্যমে পশু হৃষ্টপুষ্ট (স্বাস্থ্যসম্মত) করণের লক্ষ্যে ১৪ হাজার ৯৫১ জন খামারি রয়েছে। এবারের ঈদে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় এক লাখ ১০ হাজারটি। হৃষ্টপুষ্ট করে প্রায় দুই লাখ ৭৪ হাজার ৪৫১টি পশু কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ৭১ হাজার ৯৩২টি, বলদ ৩৩ হাজার ৯৫টি, গাভী ৩৬ হাজার ৯৮০টি, ছাগল ৯৩ হাজার ৫৯৯টি, ভেড়া ৩৪ হাজার ৩৯৮টি এবং অন্যান্য পশু এক হাজার ৪৬৭ টি।

২০১৬ সালে কোরবানির পশু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় দুই লাখ ৬৭ হাজার ৪৪০টি। আর খামারির সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ হাজার ২৮৫জন। বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে, কেউ সংসারে সচ্ছলতা আনতে গড়ে তুলেছেন খামার। কোরবানিতে দেশি জাতের ও শংকর গরুর চাহিদা বেশি থাকে। খামারিরাও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটা-তাজাকরণ করেছেন। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লালন পালন করতে গিয়ে খামারি ও কৃষকদের খরচ বেশি হচ্ছে। জেলায় গো-চারণ ভূমি না থাকায় সবকিছু কিনে খাওয়ানোর ওপর নির্ভর করতে হয়। যেখানে ৩-৪ কেজি ঘাসের পরিবর্তে দানাদার খাবার দিতে হচ্ছে এক কেজি। খুরচা বাজারে ময়দা ২৫-৩০ টাকা, চাল ২৮-৩০ টাকা, খৈল ২৮-৩০, গমের ভুষি ৩২-৩৪ টাকা এবং সটারের ব্যান্ড ২৬-২৮ টাকা কেজি।

খামারিরা জানান, ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটা-তাজাকরণ করতে গিয়ে পশু-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গরুগুলোকে প্রতিদিন দুবার খড়, খৈল, ময়দা, গুঁড়ো চাল, ভুষিসহ বিভিন্ন দেশীয় খাবার দিতে হয়। গো-খাদ্যের দাম বেশি হলেও ঈদের বাজারে লাভবান হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিল তারা। পরপর কয়েকবার ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশের কারণে খামারিরা মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছিল। তারপরও তারা হাল ছাড়েননি। গতবার ভালো দাম পাওয়ায় এবার কোরবানির পশুর পরিচর্যায় সময় ব্যয় করছেন। কিন্তু ঈদের আগে ভারত থেকে পশু আমদানি হওয়ায় এ বছর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের উল্লাসপুর-মশরপুর গরু মোটা-তাজাকরণ ফার্ম সিআইজি। এটি বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রজেক্ট (এনএটিপি-২)। এই ফার্মের মালিক নিপেন্দ্র কুমার মজুমদার বলেন, গত ৬ মাস আগে ৮০টি গরু নিয়ে এই ফার্মের কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে।

তিনি জানান, কোরবানির সময় যাদের বাড়িতে গরু রাখার সমস্যা, ঈদের আগের দিন তাদের পশু সরবরাহ করা হবে। এতে ক্রেতারাও গরু কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তাছাড়া খামার থেকে গরু কিনলে দালাল বা ফড়িয়ার চক্রে পড়তে হয় না। ক্রেতারা সপরিবারে এসে গরু পছন্দ করে কিনতে পারছেন। আগামীতে ফার্মে প্রায় ৩০০ গরু মোটা-তাজাকরণ করা হবে বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।

নওগাঁ শহরের আরজি-নওগাঁ দফতরি পাড়ায় গত তিন বছর থেকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত ফার্মে গরু মোটা-তাজাকরণ করছেন খামারি ইফতেখারুল ইসলাম সজিব। তিনি বলেন, এবার কোরবানি উপলক্ষে দেশীয় ও শংকর জাতের প্রায় শতাধিক গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। ৬ মাস আগে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় দেশীয় প্রতিটি গরু ৭০-৮০ হাজার টাকা করে কিনতে হয়েছে। এতদিন লালন পালনের পর এখন সেসব গরু প্রায় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা দাম বলছেন বেপারিরা। গো-খাদ্যের খরচটাও বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া হঠাৎ করে ভারত থেকে গরু আমদানি হওয়ায় দেশীয় গরুর দাম কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত খামার থেকে কোনো গরু বিক্রি হয়নি। গরুর খাবারের দাম ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে কিছুই থাকবে না। এ বছর লোকসান গুনতে হবে দেখে দুশ্চিন্তায় ও হাতাশার মধ্যে আছি।

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস বলেন, খামারি পর্যায়ে সারা বছরব্যাপী পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ কর্মসূচি থাকে। এ বছর প্রায় দুই লাখ ৭৪ হাজার ৪৫১টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাকিগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের লোকবল দ্বারা সার্বক্ষণিক তদারকির ফলে হরমোন বা কেমিকেল প্রয়োগ করে যে মোটা-তাজাকরণ করা হতো, এবার তা করা হয়নি। প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে পশুগুলো হৃষ্টপুষ্টকরণ করা হয়েছে। খামারিদের প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist