কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ২৬ মার্চ, ২০২৪

‘জাইল্যাগো হাতে-পায়ে লাগলেও চুলকায়’

কুয়াকাটা উপকূলে ভেসে আসছে অসংখ্য জেলি ফিশ

‘আমাগো মতন যেসব জাইল্যা ভাসা জাল বায়, তারা কয়েক দিন ধইর‌্যা সমুদ্রের গভীরে যাইয়া কোনো মাছই ধরতে পারছে না। অনেক জাইল্যা সাগরে গোনে চইল্যা আইছে। এই গুলানের দেহের লগে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু পোনা আটকাইয়াও মারা যাচ্ছে। এগুলা এমনই বিষাক্ত, জাইল্যাগো হাতে-পায়ে লাগলেও চুলকায়।’

কথাগুলো বলছিলেন কুয়াকাটার গঙ্গামতী এলাকার জেলে আবদুল মন্নান মাঝি। শুধু তিনি নন, এ সমস্যায় পড়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটার অসংখ্য জেলে।

দুই সপ্তাহ ধরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য জেলি ফিশ ভেসে আসছে। এসব জেলি ফিশ শরীরে লাগলেই চুলকানি হচ্ছে। এতে সমুদ্রে মাছ ধরতে নামতে পারছেন না জেলেরা। ভেসে আসা জেলি ফিশ সৈকতে পচে-গলে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপকূলে ভেসে আসা এসব জেলি ফিশ ‘সাদা জেলি ফিশ’ নামে পরিচিত। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফাইলোরিজা পাংটাটা ((Phyllorhiza punctata)। এরা বিষাক্ত প্রজাতির নয়। তবে এ প্রজাতির জেলি ফিশের কিছুটা চুলকানি সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে। সাঁতার কাটতে না পারায় এরা বাতাস-স্রোত বা জোয়ারে সমুদ্র থেকে উপকূলে বা সৈকতে এসে আটকে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাতাসের চাপে এবং ঢেউয়ের কারণে জেলি ফিশ সৈকতে আটকে পড়েছে। কুয়াকাটা সৈকত, লেম্বুর চর, গঙ্গামতী, খালগোড়া ও ঝাউবন এলাকার বালুচরে লাখ লাখ জেলি ফিশ পড়ে আছে। এসব জেলি ফিশ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র।

এমন অবস্থার কারণে জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে পারছেন না। এরই মধ্যে অনেক জেলে ট্রলার-নৌকা নিয়ে তীরে ফিরে এসেছেন। অনেকে আলীপুর, মহিপুর, কুয়াকাটা, খালগোড়াসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নৌকা, ট্রলারসহ নোঙর করে বসে আছেন। তবে বেশি বিপাকে পড়েছেন উপকূলের কুয়াকাটা, গঙ্গামতী, খাজুরা, খালগোড়া, মহিপুর ও আলীপুরের খুটা জেলেরা (ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকার জেলেরা)।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ও সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগের এ প্রাণীকে বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের যুগের প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। সম্পূর্ণ নরম দেহ বা জিলেটিনাস দেহ নিয়ে এরা গঠিত। জেলি ফিশ প্রকৃতপক্ষে লোনা সাগরের প্রাণী। সাঁতার কাটার জন্য এদের দেহে কোনো শক্তি বা অঙ্গ নেই। তবে পানির গভীর থেকে ওপরে এবং ওপর থেকে গভীরে গমন করতে পারে। পার্শ্বীয় চলাচল বা সমান্তরাল পথ ভ্রমণে এরা মোটেই উপযুক্ত নয়। ফলে স্রোতে সৈকতে এসে আটকা পড়লে আর গভীর সমুদ্রে ফিরতে পারে না।

স্বেচ্ছাসেবক রুমেল হোসেন বলেন, ‘আমরা সৈকত এলাকায় ভেসে আসা জেলি ফিশ কুড়িয়ে বস্তায় ভরে মাটি চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তবে এগুলো অসংখ্য পরিমাণে হওয়ায় আমরা কয়েকজন মাত্র স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেও কোনো কুল করতে পারছি না।’

জেলে ঝন্টু মিয়া বলেন, ‘এবার হঠাৎ করে সমুদ্রের পানিতে ভেসে আসছে লাখ লাখ জেলি ফিশ। কী যে এক অবস্থা, সমুদ্রে জাল ফালাইলেই জালের সঙ্গে জেলি মাছগুলা লাইগ্যা যায়। এ ছাড়া জালে লাগলে ওজন এত বেশি হয়, জাল তুইল্যা উডান যায় না। এইডা নিয়ে সমস্যায় আছি।’

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকোফিশ-২ অ্যাকটিভিটির পটুয়াখালী জেলার সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘সমুদ্রে কচ্ছপের আধিক্য কমে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ কচ্ছপের প্রধান খাদ্য হচ্ছে জেলি ফিশ। যদি কচ্ছপের আধিক্য বেশি থাকত তাহলে হঠাৎ এত পরিমাণে জেলি ফিশের আসত না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close